সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

র‌্যাক লিটনের উপন্যাস “মঙ্গা”

প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, মার্চ ৩১, ২০১৮
প্রথম অধ্যায় : চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। উজান থেকে পাহাড়ী ঢলের সাথে বৃষ্টির পানি ভাসিয়ে নিচ্ছে সব কিছু। এমন ভাবে বৃষ্টি পড়ছে যেন বৃষ্টির শেষ বিন্দুুও আকাশে রাখবে না। সূর্য কখন উঠছে, কখন চলে যাচ্ছে অস্তে, বোঝার উপায় নেই। পৃথিবী ধুম্রছায়ায় কুন্ডলী করে রেখেছে নিজেকে। পথঘাট পানির নিচে। নাড়ি পোতা বসতবাড়ি থেকে নিঃস্বদের বিতাড়িত করেছে বন্যার পানি। জেলের বিনাশ্রম দন্ডপ্রাপ্তরা, জেলের ভিতরে হাঁটতে পারে কিন্তু প্রাচীর ডিঙ্গাতে পারে না, ঠিক বর্ষায় পানি বন্দি মানুষদের অবস্থা। বন্দিশালার বন্দি হয়ে, ঘরের মেঝেতে হাঁটাহাটি, মেয়েদের কাঁথা সেলাই করা ছাড়া বাহিরে যাওয়ার উপায় নেই। যাদের ঘরে হাঁটু পানি অথবা কোমড় পানি, তারা জেল হাজতের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিতদের চেয়েও নিদারুন জীবন যাপন করছে। অর্ধ ডোবা ঘরের চালে একটি বিড়াল ছানা করুন সুরে অস্পষ্ট মিউ মিউ করছে। ঘরটির একটি চাল স্রোতে ভেসে গেছে। পানির উপরে ভেসে থাকা অর্ধ ডোবা চালে বিড়াল ছানাটি বৃষ্টিতে ভিজছে। দেখে মনে হলো, ছানাটি হয়ত তিন দিন হয়নি জন্মেছে। পুরুষ বিড়ালের কামড় থেকে বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য মা বিড়াল, তিন দিন অন্তর অন্তর ছানার জায়গা বদল করে। পুরুষ বিড়াল শক্ত কামড়ে বাচ্চার তুলতুলে মাংস খেয়ে ফেলে। মনে হলো না, মা বিড়ালটি সেই সময় টুকু পেয়েছে। দুখের সাগরে, ভয়ংকর প্রকৃতির হাতে সপর্দ করে, চলে গেছে স্রোতে ভেসে। হয়ত মৃত্যুর সময় প্রান প্রিয় ছানার মুখটি দেখার সুযোগ দেয়নি নিষ্টুর প্রকৃতি! ছানাটি ভিজে চুপছে গেছে, তির তির করে ঠান্ডায় কাঁপছে। অষ্ফুট করুন কান্নার আওয়াজে বৃষ্টি ভেজা বাতাশ ভারি হয়ে আসছে। মায়ের জন্যে কি আকুতি! বাঁচার জন্য কি আশা! ভয়ংকর মৃত্যুর হাত ছানি ব্যাকুল করে তোলে। জীবনের স্বাধ পাবার আগেই, মায়ের দুধের স্বাধ পাবার আগেই, বিদায় নিতে হচ্ছে পৃথিবী থেকে। কেন এমন হয়? কেন এই ছানাটি বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছে? কি দোষ ছানাটির? এই ছোট্ট ছানাটির কি যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার কথা? জীবন কি এতটাই ঠুনকো! জন্মের পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়! কেন জন্মানো হয়? কেনই বা এরকম মৃত্যু? না এটা জন্মের আগেই নিশ্চিত করা হয়েছে? প্রশ্ন, শুধু প্রশ্নের মাঝেই লুকিয়ে থাকে। ছানাটি হাতে নিলাম। চোখ ফোটেনি তখনও। আমার বুকের মাঝে অনেক রকমের প্রশ্ন তীরের মত বিঁধতে থাকে। আমার ডান হাতের তর্জনী ছানাটির মুখে লাগতেই চুষতে থাকে বাচ্চাটি। যেমনি মায়ের ¯েœহ ভরা আদরে অবুঝ শিশু দুধ পান করে। বিড়াল ছানাটি হয়ত মায়ের স্পর্শ অনুভব করে। আহ্ কি অসহ্য যন্ত্রণা! কি নির্মম! আমার দুচোখ বেয়ে ঝরে পড়ল, কয়েক ফোটা নোনা পানি। পৃথিবীর আলো ছায়া না দেখতেই, বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে গেল তা নিমিশেই। আমার ছোট শিশুটির অবস্থা যদি এমন হতো! তাহলে কেমন লাগতো আমার? আমি কি সহ্য করতে পারতাম? দু ফোটা চোখের পানি উপহার দেয়া ছাড়া হয়ত আমার কিছুই করার নাই! তাহলে কার কি করার আছে? কে আছে এই অবুঝ ছানাটির বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করবে? কে সে? কেন ছোট্ট বাচ্চাটি বর্ষার পানিতে আক্রান্ত হলো? বণ্যার পানির জোর এত বেশী কেন? বৃষ্টির ফোটা পাথরের কনার মত গায়ে লাগছে। আমি ভেজা শার্টের আস্তিনে লুকিয়ে, ছানাটিকে উম দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করি। জানি, আমার ক্ষমতার বাহিরে একে বাঁচানো, তবুও মানবতার অবুঝ খেয়ালে শেষ রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা। মানুষ অনেক সময় নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও কিছু করার চেষ্টা করে; সফলকাম না হলেও, চেষ্টার ত্রুটি করেনা। আমিও তাই করলাম কিন্তু পারলাম না! পৃথিবীর আলোতে ছোট্ট নিস্পাপ ছানাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে। হৃদয়ের মাঝে উদ্ভুত ধাক্কা অনুভব করলাম, ঠিক তখনি হাতের তালুর উপর তুলতুলে নরম দেহটি নুয়ে পড়ল। নিজের কোন দোষ ছিল কিনা জানিনা। তবুও নিজেকে ক্ষমা করতে পারলাম না। যদি একটু আগে আসতাম, তাহলে কি ছানাটিকে বাঁচাতে পারতাম? চোখের পানি বাঁধ মানছেনা, বৃষ্টির পানির মত দুই গন্ডদেশ বেয়ে অঝরে ঝরতে লাগল। বিশাল আকাশ পানে, মহা শক্তিবানকে অনুভব করতে চেষ্টা করলাম কিন্তু শুন্য আকাশ ছাড়া কিছুই চোখে পড়লনা-------------। অঝরে ঝরছে বৃষ্টি, সাথে প্রচন্ড বাতাশ। ঢোলের সাথে যদি নাচ না হয়, তা হয় বেমানান। ঢোলের বাজনার সাথে নাচেরও বহুবিধ দৃশ্যপট যেমনটি হয়, তেমনি বৃষ্টির সাথে বাতাশ গাছ গাছালী নাচিয়ে থর থর করে কাঁপিয়ে তোলে। পানির স্রোত সর্ব শক্তি দিয়ে ভেঁঙ্গে নিচ্ছে নদীর তীরের বাড়ি ঘর, গাছ গাছালী। যা পাচ্ছে, ধুয়ে মুছে নিচ্ছে নিজ গর্ভে। নদী আজ বেশী ক্ষুধার্থ! সব কিছুই হার মানছে স্রোতের তান্ডবে, হায় কি জোর ¯্রােতের! প্রতি বছর একই সময়, একই ভাবে নদীর তীরের বাড়ি-ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, কবর স্থান, ঈদগাহ ময়দান কিছুই বাদ পড়েনা ভাঁঙ্গন থেকে। সমতল ও বন্ধুর ভূমির ধুসর, দোঁ-আশ, এটেল প্রলেপ ফেলে, ঘোলা পানি ছুটে নদীর পানে; নদীর পানি সমুদ্রে। পানির স্রোতের কলকল শব্দ সাথে মানুষের আর্তনাদ ভাসে আকাশে বাতাশে। হিন্দু ডাকে ভগবান, কৃঞ্চ, দূর্গাকে; মুসলমান ডাকে আল্লাহ ও নবীকে, বৌদ্ধ ডাকে বুদ্ধদেবকে; খ্রীস্টান ডাকে যীষুকে, হাজার ধর্মের হাজার দেবতাকে ডাকে সবাই; হয়ত সৃষ্টিকর্তার কানে পৌঁছেনা প্রার্থনার কোন বাণী-----। লেখক ---- র‌্যাক লিটন একুশে সংবাদ // এস.ইফা // ৩১.০৩.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1