সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পলিথিনের মতো পরিবেশ দূষিত করছে টিস্যু ব্যাগ

প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, জুন ৯, ২০১৭
একুশে সংবাদ : দেশের পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ পলিথিন হলেও এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে টিস্যু ব্যাগ। ওভেন পলি প্রোপাইলিন দিয়ে প্লাস্টিক পণ্য তৈরির পাশাপাশি টিস্যু ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন রঙের ও মোটা হওয়ায় অনেকেই কাপড়ের বুঝে ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার। টিস্যু ব্যাগ অপচনশীল। এই বস্তুটি ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। যা পয়োনিষ্কাশন নালায় আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। টিস্যু ব্যাগ ব্যবহারের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশ্লেষকেরা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজারে প্রকাশ্যে টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার হলেও এটি বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। রাজধানীর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফ্যাশন হাউজ, কাপড়ের দোকান, জুতা কোম্পানি, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিভিন্ন নাম করা কোম্পানি বিভিন্ন রঙের টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শোরুমে যোগাযোগ করলেও টিস্যু ব্যাগ উৎপাদনকারীদের নাম ঠিকানা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীন, কোরিয়া থেকে ম্যাটাডোর গ্রুপ, জারা গ্রুপ, গ্লোবাল নন ওভেন ফেব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এবি ওভেন ব্যাগ ফ্যাক্টরি, হাজী নন ওভেন ব্যাগ ফ্যাক্টরি, এশিয়া গ্রুপ, শিমুরা গ্রুপ, মক্কা প্লাস্টিক কোম্পানিসহ বেশ কিছু কোম্পানি বন্ড লাইসেন্স নিয়ে পলি প্রোপাইলিন আমদানি করছে। বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে কোনো পণ্য আমদানি করলে সে পণ্য থেকে উৎপাদিত মালামাল বিদেশে রপ্তানি পণ্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। আইন অনুযায়ী, দেশের ভেতরে কোনো বিপণন নিষিদ্ধ হলেও গোপনে টিস্যু ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বৈধভাবে আমদানি করা এ পলি প্রোপাইলিন প্লস্টিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বেআইনিভাবে টিস্যু ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। নিষিদ্ধ পলিথিন হলেও এ ব্যাগটি কাপড়ের বলে বিক্রি করা হচ্ছে। দেখতে কাপড়ের মতো মনে হলেও আগুন দিলে গলে যায়। টিস্যু কাপড়ের হলে সেলাই করা থাকত, কিন্তু এ ব্যাগে কোনো সেলাই নেই, তা তাপ প্রয়োগ করে চাপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ব্যবসায়ী কৌশলে টিস্যু ব্যাগ বিক্রি করছেন। সাধারণ মানুষ না জেনে ব্যবহার করেছে পরিবেশের ক্ষতি করছে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী বায়জীদ কবিরের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন শিক্ষক এ বিষয়ে গবেষণা করে সম্প্রতি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। অপরদিকে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়নে ওভেন পলি প্রোপাইলিন (ডব্লিউপিপি) ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নয় সদস্যের বিশেষ কমিটি সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট থেকে একজন করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী বায়জীদ কবির বলেন, টিস্যু ব্যাগে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। টিস্যু ব্যাগ আগুন লাগলে গলে যায় এবং মাটিতে পচবে না। এ ব্যাগও পলিথিনের মতো নিষিদ্ধ করা উচিত। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বিগত ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিন এবং টিস্যু ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানি করা পলি প্রোপাইলিন দিয়ে টিস্যু ব্যাগ (চায়না টিস্যু ব্যাগ) তৈরি করা হয়েছে। টিস্যু ব্যাগ মাটির নিচে দীর্ঘদিন রাখলেও পচবে না। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পলিথিনের মতো টিস্যু ব্যাগ নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ব্যবহার রোধে এর কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করলে টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার কমে যাবে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে গত ১৫ মে থেকে সারা দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। যারা আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কাপড়ের মতো দেখতে টিস্যু ব্যাগের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ০৯.০৬.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1