সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মানসিক বিকাশে শিশুদের নেই খেলার মাঠ!

প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, মে ১৫, ২০১৭
একুশে সংবাদ : আজকের শিশুই দেশের ভবিষ্যৎ। সুতরাং ভবিষ্যৎ নাগরিকদের যথাযথভাবে গড়ে তুলতে তাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা রাষ্ট্র, অভিভাবক তথা সমাজ সকলকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দরকার তার মানসিক বিকাশ। আর এই মানসিক বিকাশে পড়াশোনার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে খেলাধুলা। আজকাল নগরকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এ খেলাধুলা বাদ দিয়ে যেন সবাই কেবলমাত্র পড়াশোনার প্রতিই নজর দিচ্ছে। তবে কেবলমাত্র পড়াশোনা দিয়ে শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশ ঘটে না। তার শিক্ষা জীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে হবে। এ উপভোগ্য করে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে তার খেলাধুলার ব্যবস্থা করা। সমাজের অনেক বাবা-মা কেবলমাত্র ক্লাশের বইয়েই নিজেদের শিশুকে মগ্ন রাখতে চান। পড়াশোনার চাপে অনেকেই একটা রোবটে পরিণত হয়। এর ফলে স্কুলে হয়তো বা ভাল ফল করা যায়, কিন্তু ছেলেমেয়েদের যথার্থ মানসিক বিকাশ ঘটে না। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপশি খেলাধুলাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। অনেক শিশুই হয়তো বা স্কুল ছাড়া খেলাধুলার সুযোগ পায় না। এ জন্য প্রতিটি স্কুলে খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ থাকা একান্ত প্রয়োজন। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা পড়াশোনার সাথে সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। স্কুলগুলোতে দেখা যায় টিফিনের ঘণ্টা বাজতেই সবার ভোঁ দৌড়। কে কার আগে মাঠে নামবে! কলরব তুলে কেউ ছুটছে কারো পেছনে, কেউ এক নিঃশ্বাসে দৌড়ে সবার আগে মাঠের শেষ মাথায় গিয়ে হাজির, কারো হাতে ব্যাট, কারো পায়ে বল আবার কেউ বা লাফাচ্ছে অকারণে। সময় কখন ফুরিয়ে যায়, হুঁশ থাকে না। হুঁশ ফেরায় টিফিন শেষের ঘণ্টা। মাঠ ছেড়ে আবার ক্লাসে ফেরা। গ্রামের বেশির ভাগ স্কুলেই এটি পরিচিত দৃশ্য। সাধারণভাবে গ্রামের কিছু কিছু স্কুলে অবকাঠামোগত সামান্য সমস্যা থাকলেও খোলা মাঠের সমস্যা নেই। কিন্তু রাজধানীর স্কুলগুলোতে ঠিক তার উল্টো চিত্র। ভবন আছে, মাঠ নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে টিফিন পিরিয়ড মানে কেবলই ‘টিফিন’ খাওয়া। স্কুলের চার দেয়ালে বন্দী হয়ে পড়েছে তাদের গোটা শৈশব। পাড়া বা মহল্লাতেও দুরন্তপনায় মেতে ওঠার মত পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নেই। তাই ভিডিও গেমস, মোবাইল, কম্পিউটার আর ল্যাপটপ হয়ে ওঠছে তাদের খেলাধুলার প্রধান অবলম্বন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর দিনে অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা খেলাধুলা করা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর সাম্প্রতিক জরিপ থেকে জানা যায়, রাজধানীর মাত্র ২ শতাংশ শিশু ঘরে-বাইরে কিংবা স্কুলে গিয়ে খেলাধুলার সুযোগ পায়। রাজধানীর শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া অর্থাৎ স্থুলতার হারও সারাদেশের শিশুদের তুলনায় বেশি। এর অন্যতম কারণ শিশুদের খেলাধুলার সুযোগের অভাব। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ৩৩৮টি প্রাইমারি স্কুল, এনজিও পরিচালিত আরও প্রায় সাড়ে ৪শ’ এবং ১১ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। সরকারি স্কুলগুলোর কোনোটিতে নামমাত্র মাঠ থাকলেও বেসরকারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর শতকরা ৯৮ ভাগেরই খেলার মাঠ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কনসালটেন্ট সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক বলেন, ভুলে গেলে চলবে না খেলার মাধ্যমেই শিশুর মানসিক বিকাশ হয়। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করতে না পারা শিশুরা পরবর্তীকালে নানা সমস্যায় ভোগে। মাঠে খেলাধুলার সময় শিশুদের শরীরে রক্ত প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। এটা শিশুদের দেহমন গঠন এবং সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা নানান পরিস্থিতি সামাল দিতে শেখে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পরাজয় মেনে নিতে শিখে। বাইরে খেলাধুলা ছাড়া এটা সম্ভব না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হেলাল উদ্দিন আহমেদের মতে, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিশু বিকাশের যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে না এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড। খেলার পরিবেশ, খেলার মাঠ, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। এতে শিশুর সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সামাজিক দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য নয়। ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে আরা বেগম জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুর খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তাদের জন্য খেলার মাঠ খুবই প্রয়োজন, কিন্তু এ শহরে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত খালি জায়গা পাওয়া যাবে না, সেটাই বাস্তবতা। তবে অভিভাবকদের বলব, সময় করে শিশুদের নিয়ে অন্তত ঘুরতে বেরিয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের সকলেরই এক কথা, স্কুলে মাঠ না থাকলেও শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের। খেলার জন্য শিশুকে সময় দিতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখনো কিছু কিছু খেলার মাঠ ও পার্ক রয়েছে। ইলেকট্রনিক খেলার সরঞ্জাম দিয়ে ঘরের মধ্যে বন্দি না রেখে শিশুকে বাসার কাছাকাছি এমন কোন স্থানে নিয়ে যেতে হবে অভিভাবকদেরই। পাশাপাশি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ মাঠ ও পার্ক বেদখল অবস্থায় রয়েছে। এগুলো দখলমুক্ত করে শিশুদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ১৫.০৫.১৭    ২:২৫

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1