সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ধানে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে ব্রি-২৮ চাষ না করার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, মে ১০, ২০১৭
একুশে সংবাদ : দেশে ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব ও এর ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আক্রমণের ধরন থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্রি-২৮ ধান কয়েক বছর যাবত ব্যাপক হারে চাষ করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ধানের এ জাতটি ব্লাস্ট রোগের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ায় আগামী দিনে ব্রি-২৮ ধান চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগটি প্রতিরোধে ধান কাটার পর নাড়া-খড়কুটো জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা, আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ এবং অতিরিক্ত পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার না করে জমিতে সবসময় পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে কমবেশি এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলেও এ বছর রোগটির ব্যাপক আক্রমণে দিশেহারা কৃষক। মার্চ মাসের শুরুর দিকে রোগটি দেখা দেয় বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায়। পরবর্তী সময়ে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহে ছড়িয়ে পড়ে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে রোগটি গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। একদিকে হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যাজনিত কারণে ফলন বিপর্যয়, অন্যদিকে সারাদেশে রোগ-বালাইয়ের কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে রোগের প্রকৃতি, জীবাণুর ধরন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণের জন্য শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষক দল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের আক্রান্ত জেলাসমূহ খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গায় ধানের খেত পরিদর্শন করেন। তারা এ রোগের জীবাণুর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিটি জেলার তিনটি উপজেলা থেকে আক্রান্ত ও সুস্থ গাছের নমুনা সংগ্রহ করেন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগ তত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মদ আক্রান্ত জেলাগুলোতে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, হাউব্রিড ধানে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা-পোড়া রোগের প্রকোপ বেশি থাকলেও উফশী জাতসমূহে ব্লাস্টরোগের আক্রমণ ছিল ব্যাপক। এ রোগের আক্রমণ ব্রি-২৮ ধানে বেশি ছিল। তবে উফশী জাতসমূহের মধ্যে ব্রি-৫৮ ধান, ব্রি-৬৭ ধান, ব্রি-৬৯ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা যায়নি। পাতাব্লাস্ট, গিঁটব্লাস্ট এবং শীষব্লাস্ট- এ তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্য নেক বা শীষব্লাস্ট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। পাইরিক-কুলারিয়াওরাইজি নামক একপ্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ বছরে ধানের ব্লাস্টরোগের মহামারির জন্য বিশেষজ্ঞরা ওই ছত্রাকের অনুকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন। এ রোগের জীবাণুর ১৬৭টি রেসবা প্যাথোটাইপ রয়েছে বলে জানা যায়। আবু নোমান ফারুক জানান, লিফব্লাস্টের আক্রমণে পাতায় চোখের মতো দাগ দেখা যায় এবং আক্রমণের মাত্রা প্রকট হলে অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। লিফব্লাস্টের কারণে পাতায় খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয়। আবার নোড বা গিঁটব্লাস্টের কারণে গাছের গিটসমূহে পচন ধরে, আক্রান্ত স্থানে গাছটি ভেঙে যায় এবং গিঁটের ওপরের অংশ মারা যায়। নেক ব্লাস্টের আক্রমণ ধানের শীষ বের হওয়ার পর পরিলক্ষিত হয়। সাধারণতঃ শীষের গোড়ায় পচে যায়। ফলে খাবার ও পুষ্টি উপাদান ধানে যেতে পারে না এবং ধান চিটা হয়। এ রোগের আক্রমণে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বির্পযয় হতে পারে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘গরম, আগাম বৃষ্টিপাত ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ রোগটির প্রকোপ বেড়েছে।’ ফসলকে অনাকাঙ্খিক্ষত রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এখনই ব্লাস্টপ্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনের পরামর্শ দেন ড. কামাল। একুশে সংবাদ // পপি // রাজি // ১০.০৫.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1