সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো চাষিদের মাথায় হাত

প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, মে ৪, ২০১৭
একুশে সংবাদ : খরা, ঝড়, উজানের ঢল- এই তিন দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের বোরো চাষিরা। খরার কারণে এবার অনেক জমির ধানের শীষে দেখা দিয়েছে চিটা। ঢলের পানিতেও ডুবেছে অনেক ধান। আবার কালবৈশাখীতে ধান গাছ পড়ে গিয়ে শীষ থেকে ঝরেছে ধান। এতে মাথায় হাত উঠেছে চাষিদের। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার ধানচাষিরা জানায়, এবার বোরো ধানের গাছ থেকে শীষ বের হওয়ার সময় রাজশাহী অঞ্চলে দেখা দেয় খরা। দু’দিন পর পর জমিতে সেচ দিয়েও পানি জমিয়ে রাখা যায়নি। ওই সময় তাপদাহ অব্যাহত থাকায় ধানের শীষের ঠিকমতো পরাগায়ন হয়নি। এতে ধানের অনেক শীষে দেখা দিয়েছে চিটা। এদিকে গত রবিবার সন্ধ্যার কালবৈশাখীতে বহু জমির ধান গাছ মাটিতে মিশে গেছে। এতে ঝরে পড়েছে পাকা ধানের শীষ। এ কারণেও কমছে ফলন। আবার উজানের ঢলে জেলার তানোর উপজেলায় শিবনদীর বিলকুমারী বিলের ধানী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বিলের কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিলকুমারী বিলের পানি হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। গত কয়েকদিনের বর্ষণের পর শিবনদী হয়ে উজান থেকে আসা ঢলে এবার বিলের সব জমি তলিয়ে গেছে। এখন বিলের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে। এ অবস্থায় কাঁচা-পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা। কাটা ধান নিয়ে যেতে হচ্ছে নৌকায়। তাই বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। ধানতৈড় গ্রামের কৃষক সাফিউল ইসলাম (৪৫) জানান, বিলটিতে গতবছর তিনি বোরোর ফলন পেয়েছিলেন বিঘাপ্রতি ২৩ থেকে ২৮ মণ। কিন্তু এবার অসময়ে কাটতে হচ্ছে ধান। এ কারণে ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিঘায় ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ মণ। আবার শ্রমিক সংকটে অনেক কৃষক বিলের ধান কাটতে পারছেন না। এতে অনেকেরই ধান পানির নিচে নষ্ট হচ্ছে। পাশ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলারও কিছু ধান এভাবে নষ্ট হচ্ছে। মোহনপুরের নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মোখলেসুর রহমান জানান, খরার কবলে পড়ে তাদের এলাকার বোরো ধানের শীষে পরাগায়ন হয়নি ঠিকমতো। এতে শীষে চিটা দেখা দিয়েছে। মনে হচ্ছে, শীষে ধানের চেয়ে চিটায় বেশি। পাশ্ববর্তী পবা উপজেলার অনেক জমিতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ধানের যে পর্যায়ে এ সমস্যাটি দেখা দিয়েছে, এখন আর কিছুই করার নেই। চেয়ে চেয়ে কৃষকরা শুধু সর্বনাশ দেখছেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর অঞ্চলে এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী। ঝড়ের মধ্যে পাঁচ মিনিট বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। এই ঝড়ের পর জেলার গোদাগাড়ী, বাগমারা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। গোদাগাড়ীর কালিদীঘি গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান (৪০) বলেন, ঝড়ের পর মাঠে গিয়ে মনে হচ্ছে, পাকা ধানে মই দিয়ে গেছে কালবৈশাখী। সব জমির ধান মাটিতে মিশে গেছে। শীষ থেকে প্রায় অর্ধেক ধান ঝরে গেছে। কয়েকদিন থেকে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। ধান মেপে দেখা যাচ্ছে, বিঘায় ১৬ মণও মিলছে না ফলন। এতে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ের পর ধানের ক্ষতির একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে কৃষি বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, ঝড়ের কারণে বিভিন্ন উপজেলার চার হাজার বিঘা জমির ধান মিশে পড়েছে। এছাড়া পবা ও মোহনপুর উপজেলায় ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমির ধানে দেখা দিয়েছে চিটা। তবে তানোরের বিলকুমারী বিলে তলিয়ে যাওয়া চার হাজার বিঘা জমির ক্ষতির কথা সে প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ধানে চিটা কি কারণে হয়েছে তা অনুসন্ধান করতে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর এ বছর জেলায় ৬৭ হাজার ৩০৩ হেক্টরে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি। তবে ধান চাষ হওয়া জমির প্রতি হেক্টর থেকে চার দশমিক দুই মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করেছিল কৃষি বিভাগ। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ধানের উৎপাদন অনেক কমবে। এ কারণে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কী না তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কৃষকরা বলছেন, ধান উৎপাদন করতে অনেক কৃষক চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন। এখন ধানের ফলন কমে আসায় তারা পড়েছেন বেকায়দায়। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে অতিরিক্ত উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন কী না তা বলা যাচ্ছে না। দুর্যোগে ফলন কমবে কী না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জমির ফলন কমবে, আবার কিছু স্বাভাবিক থাকবে। তাই গড়ে ফলনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে তিনি দাবি করেন। একুশে সংবাদ // পপি // বিবা // ০৪.০৫.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1