সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দুই সংগ্রামী নারীর সাফল্যের গল্প

প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
একুশে সংবাদ :  মানুষের জীবনে চলার পথে আসে নানা ধরনের বাধা। কিন্তু তাই বলে কি জীবন থেমে থাকবে। এমন অনেকেই আছেন যারা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যান সামনের দিকে। অর্জন করেন সফলতা। একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নামই হচ্ছে জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক এ জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করেন। ঢাকা বিভাগের এমনই দুই নারী যারা সব ধরনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সফল হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সমাজে জয়িতা নামে। বৃষ্টি : ২০১৬ সালে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা বৃষ্টি। সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, সংসারের অভাব-অনটনই আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমাকে সামনের দিকে নিয়ে গেছে। এক সময় আমি যাদের কাছে ছিলাম অবহেলিত, আজ তারাই আমায় আমার কাজের প্রশংসা করছে। সফলতার শুরুর দিকের কিছু স্মৃতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বাবা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার অসুস্থতার কারণে মা সংসার চালানোর জন্য মানুষের বাড়িতে তাঁতের কাজ শুরু করেন। মা’র একার কাজে সংসার না চলায় আমিও তার সঙ্গে কাজ শুরু করি এবং পাশাপাশি চলে পড়াশোনাও। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করব। কিন্তু চরম অভাবের সংসারে কোনো রকমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস করার পর মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। সেখানেও অর্থের অভাবে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরে পাশের বাড়ির একজনের কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে একটি সেলাই মেশিন নিয়ে অন্যের কাপড় সেলাই করে উপার্জন শুরু করি। পরবর্তী সময়ে এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১০ হাজার টাকায় একটি সেলাই মেশিন কিনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। আর সেখান থেকেই আমার সফলতার গল্প শুরু। বর্তমানে আমার তিনটি কারখানায় ১০০ নারী কাজ করছেন। কারখানাগুলোর দুটি আমার নিজের জায়গায় ও একটি ভাড়া জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসার পুঁজি আছে প্রায় এক কোটি টাকা। ভবিষ্যতে ইচ্ছা কী আপনার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসাকে আরো প্রসারিত করা। কারণ আমার ইচ্ছা এক হাজার অসচ্ছল মেয়েকে আমার এখানে কাজের সুযোগ করে দেওয়া। যাতে করে তারা তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন আর এক জয়িতা ফিরোজা খাতুন। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পার করে আজ তিনি জয়িতা। কিন্তু আর দশজন জয়িতার জীবনের গল্প থেকে তার গল্পটা সত্যিই লোমহর্ষক। ফিরোজা খাতুন : তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই লোমহর্ষক বর্ণনাই দিচ্ছিলেন সঙ্গে। ফিরোজা খাতুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করেছিল। ওরা আমার বাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আমার চোখের সামনে আমার ছোট সন্তানকে টেনে ছিঁড়ে ফেলে। আমি তা দেখে চিৎকার দিলে ওরা আমাকেও ধরে নিয়ে যায় ওদের ক্যাম্পে। আমার ওপর চালায় নির্যাতন। মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে যখন ওদের ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করেন তখন আমি গ্রামে ফিরে আসি। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে গ্রহণ করেনি এবং গ্রামের লোকজনও আমাকে গ্রামে থাকতে দেয়নি। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় আসায় পর আমার আবার বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামী-কপাল নেই আমার। তিনিও আমাকে ছেড়ে (সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন) চলে যান। আমার একটি মেয়ে আছে। কোনো ছেলে নেই। সেই মেয়েকে নিয়ে এখন পর্যন্ত জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ভেঙে পড়িনি কোনোদিনও। বর্তমানে আমি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অস্থায়ী আয়া হিসেবে কাজ করছি। তবে নানা টানাপোড়েনের কারণে শিক্ষা দিয়ে মেয়েটাকে সমাজে দাঁড় করাতে পারিনি। তাই আপনাদের মাধ্যমে মেয়েটার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এবার মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত ১০ জন নারীর মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ পাঁচ সংগ্রামী ও সফল নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় জয়িতা ২০১৬ পুরস্কার। এই পাঁচজন হলেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনে নরসিংদীর বৃষ্টি, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ঢাকা জেলার আমিনা ফাহমিদা খানম, সফল জননী হিসেবে টাঙ্গাইলের রওশনারা বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুনভাবে জীবন শুরু করা ঢাকা জেলার ফিরোজা খাতুন ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় ঢাকা জেলার কহিনুর আক্তার। একুশে সংবাদ // পপি // রাজি // ২৯.০৪.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1