সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাড়িময় বই

প্রকাশিত: ০১:৫৭ পিএম, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
একুশে সংবাদ  : ছোট্ট ফ্ল্যাটে বই রাখার জায়গা কোথায়? উত্তর অন্য সব আসবাবের সঙ্গে মিলেমিশে বই রাখা যেতে পারে। আলাদা করে পড়ার ঘর থাক বা না থাক, ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের পরামর্শ নিয়ে সব ঘরে বইয়ের ব্যবস্থাপনা জানালেন মারজান ইমু ধানমণ্ডির বাসিন্দা সালমা বিনতে নূর। ভালোবাসেন গাছ আর বই। বললেন, শহরের মাপা ফ্ল্যাটের বারান্দায় গাছ আর স্টাডিরুমে বই রেখে মন ভরছিল না। আমার এত এত বই, এত অল্প জায়গায় কিছুতেই জায়গা হচ্ছিল না। তাই ভাবলাম আমার বাড়িজুড়েই হবে গাছ আর বইয়ের রাজ্য। বসার ঘর থেকে শুরু করে ক্রোকারিজ কেবিনেটেও বই রেখেছি। অবশ্যই রুচিসম্মতভাবে। বারন্দায় গাছের সঙ্গেও যেমন বই আছে ,তেমনি সন্তানের পড়ার টেবিলেও গাছের ছোট্ট টব রেখেছি। বইঘর লাইব্রেরি বা বইঘরের জন্য জায়গা নির্বাচনে সতর্কতার পরামর্শ দেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী। প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস পাওয়া যায়—এমন ঘর বেছে নিন। বই সংরক্ষণের জন্য এটা জরুরি। বইপত্রের পরিমাণ বুঝে বুকশেলফ তৈরি করে নিন। হালফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী বুকশেলফের ডিজাইন বাছাই করতে পারেন। বইয়ের তাকে এখন অনেক বৈচিত্র্য। গত্বাঁধা দেয়ালজোড়া বুকশেলফ না করে সেলফেল আকার-আকৃতিতে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। এই ঘরেও হতে পারে থিমভিত্তিক বইয়ের তাক। দেয়ালজোড়া তাকেও হতে পারে বৈচিত্র্যময় আকার ও আকৃতি। চারকোনা বা আয়তাকার তাকের বদলে জ্যামিতিক প্যাটার্নে শেলফ এখন জনপ্রিয়। বই বেশি হলে লাইব্রেরি ঘরের দরজার ওপরের অংশেও বইয়ের তাক বানিয়ে নিতে পারেন। বইয়ের তাকের মাঝে মাঝে দু-একটি খালি তাকে ফটোফ্রেম বা শোপিস রাখুন। নিজের কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতি থাকলে তাও এখানে সাজাতে পারেন। উঁচু থেকে বই নামানোর জন্য বাড়িতে ফোল্ডিং মইয়ের ব্যবস্থা রাখুন। বইয়ের ঘরে অন্যান্য আসবাব ও শোপিস যেন সাদামাটা হয়। রিডিং কর্নারে পড়ার জন্য টেবিল-চেয়ার থাকতে পারে। আর পড়ার টেবিলের ওপরের অংশে শেলফ করে নিতে পারেন। দরকারি বইগুলো এখানে রাখা যেতে পারে। কম্পিউটার ব্যবহার করলে পড়ার টেবিলের সঙ্গেই বানাতে পারেন কম্পিউটার টেবিল। শুয়ে-বসে বই পড়ার ব্যবস্থা চাইলে একপাশে ছোট্ট ম্যাট্রেস বা জাজিম দিয়ে ফ্লোরিং করতে পারেন। সঙ্গে ছোট-বড় কয়েকটি কুশন। লাগোয়া বারান্দা থাকলে কিংবা জানালার পাশে একটা আরাম কেদারাও থাকতে পারে। এই ঘরের দেয়ালে স্নিগ্ধ আর হালকা রং ব্যবহার করা ভালো। যেমন—হালকা বেগুনি, লেমন, হালকা কফি, হালকা হলুদ বা নীল কিংবা সাদাও হতে পারে। দেয়ালের রঙে কোনো বৈচিত্র্য বা প্যাটার্ন না রাখাই ভালো। মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। পড়ার টেবিলে যাতে পর্যাপ্ত আলো থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। শুধু পড়ার জন্যই নয়, আলোয় বইও ভালো থাকে। সম্ভব হলে বইয়ের তাকেও স্পটলাইট দিতে পারেন। বুকশেলফের ওপরের সিলিংয়ের সামনের দিকটা একটু বড় করে নিন। এবার এই সিলিং থেকে বুকশেলফ বরাবর মুভিং স্পটলাইট বসান। একইভাবে টেবিলের ওপরের তাকেও স্পটলাইট দিন। পড়ার ঘরে সাজসজ্জা যে একেবারেই থাকবে না তা কিন্তু নয়। খালি দেয়ালে একটা বড় চিত্রকর্ম ঝোলানো যেতে পারে। নিজের পছন্দের কোনো ছবি বা প্রিয় কোনো পেইন্টিং বেশ মানাবে। কর্নার বুকশেলফ রাখতে চাইলে ছবির দেয়ালের কর্নারে রাখুন। সেখানে বইয়ের পাশে ছোট্ট টবে দু-একটি ইনডোর প্লান্টে বিশুদ্ধ বাতাস আর মানসিক প্রশান্তি দুই-ই মিলবে। ঘরের  কোণে পটারিতে কিছু শুকনো ফুল-পাতার স্টিক রাখতে পারেন। তাজা ফুল রাখতে পারলে ঘরের পরিবেশটাই মুহৃর্তে বদলে যাবে। বসার ঘর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ফারজানা গাজী জানান, বৈঠকখানায় বই রাখার রেওয়াজ বেশ পুরনো। নতুনত্ব এসেছে বসার ঘরে বইয়ের তাকের সাজসজ্জায়। গোলাকার, ত্রিভুজাকৃতি, একটু আঁকাবাঁকা কিংবা গাছের আকৃতিতে বানানো হচ্ছে বইয়ের তাক। বসার ঘরের ফাঁকা দেয়াল, টিভি ইউনিটের আশপাশের দেয়ালে শোভা বাড়াচ্ছে নানা আকৃতির ঝুলন্ত বইয়ের তাক। বসার ঘরের কর্নারে অল্প উচ্চতার ম্যাগাজিন র‌্যাক রাখতে পারেন। ম্যাগাজিনের সঙ্গে সেখানে কিছু বইয়েরও জায়গা হয়ে যাবে। বুকশেলফের থিমভিত্তিক সাজ হবে বসার ঘরে। দেয়ালে যদি প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি থাকে, তবে তার সঙ্গে মিলিয়ে গাছের আকৃতিতে বুকশেলফ বানিয়ে নিতে পারেন। গাছের শাখা-প্রশাখায় থাকবে বই আর বই। মাঝে দু-একটি শোপিসও থাকতে পারে। শোবার ঘর ঘুমানোর আগে খানিকক্ষণ বই পড়ার অভ্যাস থাকলে খাটের সঙ্গে জুড়ে নিতে পারেন বইয়ের তাক। বলছিলেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আফজাল হক রতন। বিছানার মাথার দেয়ালে ছোট নকশার গোলাকার, বর্গাকার, আয়তাকার, ঢেউখেলানো কিংবা পছন্দমতো আকৃতিতে বুকশেলফ করে সেখানে বই রাখতে পারেন, যেন শুয়ে শুয়ে বই পড়া যায়। পড়ার সুবিধার্থে খাটের পাশে একটা স্ট্যান্ডল্যাম্প রাখুন। কর্নার বুকশেলফও শোবার ঘরে বেমানান লাগবে না। ত্রিকোনা লম্বাটে, মইয়ের আকৃতি, জিগজ্যাগ নকশা, সিঁড়ি নকশা ইচ্ছামতো কর্নার শেলফ বাছাই করতে পারেন। খাবার ঘর বইপোকাদের  বইয়ের ব্যাপ্তি পড়ার ঘর থেকে শোবার ঘর হয়ে খাবার ঘরেও জায়গা করে নেয়। এখন বেশির ভাগ ফ্ল্যাটেই ড্রয়িং ও ডাইনিং একসঙ্গে রাখা হয়। ঘরের এই দুই অংশ আলাদ করতে অনেকেই মাল্টিপারপাস কেবিনেট দিয়ে পার্টিশন করে নেন। পার্টিশনের জন্য তৈরি কেবিনেটে বইয়ের জন্য কয়েকটি তাক বরাদ্দ রাখতে পারেন। ইচ্ছা হলেই বই নিয়ে খাবার টেবিলটাকেই পড়ার জায়গা বানিয়ে ফেলা যায়। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাবিহা কুমু পরামর্শ দিলেন খাবার ঘরে বইয়ের সাজের। ‘খাবার টেবিলের পাশের কোনো দেয়াল ফাঁকা থাকলে সেখানে ছোট আকৃতির কয়েকটি তাক বানিয়ে নিতে পারেন। সেখানেও শোপিস বা শৌখিন ক্রোকারিজের সঙ্গে বই রাখা যেতে পারে। চায়ের কাপ, কফির মগ বা কোনো ফলের আকৃতিতে তৈরি হতে পারে খাবার ঘরের তাকের নকশা। ’ শিশুর ঘর শিশুর ঘরের সাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বুকশেলফের আকার-আকৃতি নির্বাচন করুন। এ প্রসঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার রেবতী সাহা বলেন, ‘একটা খালি দেয়াল পাওয়া গেলে সেখানে শিশুর পছন্দের কার্টুন অবয়ব দিয়ে বুকশেলফ বানিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া রিডিং টেবিলের সঙ্গেও জুড়ে দিতে পারেন বাহারি আকৃতির বুকশেলফ। শিশুর পাঠ্য বই ও অন্যান্য বইয়ের জন্য আলাদা বুকশেলফ রাখুন। বুকশেলফের রং যেন শিশুর মনমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। ’ পড়া আনন্দময় করতে দেয়ালের রং, বইয়ের তাকের আকৃতিতে বৈচিত্র্য আনা জরুরি। অন্য কোথাও বাড়ির প্রবেশমুখে, করিডর—বারান্দা সবখানেই হতে পারে বইয়ের তাক। রান্নাঘরেও আলাদা করে কিচেন কেবিনেটের একটা অংশ বইয়ের জন্য তাক করা যেতে পারে। তবে কেবিনেটের দরজা অবশ্যই কাচের হতে হবে। আর বইগুলো হতে পারে রান্না ও পুষ্টিসংক্রান্ত বিষয়ের। বারান্দায় টবস্ট্যান্ডের যেকোনো একটা তাকে বই রাখা যেতে পারে। অলস বিকেলে এখানে বসেও বই পড়া মন্দ নয়। বাড়ির করিডরের দেয়ালজুড়েও বইয়ের তাক বানিয়ে বই রাখা যেতে পারে। বইয়ের দেখভাল বই অনুরাগীরা বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর যত্ন-আত্তিতেও সমান মনোযোগ রাখেন। বই ও বইয়ের তাকের যত্নের পরামর্শ দিয়েছেন সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ► বইয়ের ভার সামলানোর উপযোগী বুকশেলফ নির্বাচন করুন। প্রয়োজনে ফার্নিচার ডিজাইনারের সাহায্য নিন। মাসে একবার বইয়ের তাক পরিষ্কার করুন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা ভালো। পরিষ্কার সুতি কাপড় কিংবা পাখির পালকের ব্রাশ দিয়েও ঝেড়ে-মুছে নিতে পারেন। বইয়ের তাকের দরজা বা কাঁচ সব সময় বন্ধ রাখবেন না। মাঝেমধ্যে খুলে রাখুন। বাতাস চলাচল করলে বইয়ে ড্যাম্প হবে না। ► পোকা-মাকড় দূর করতে বইয়ের তাকের কোনায় ন্যাপথালিন রাখুন। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে—এমন জায়গায় বইয়ের তাক রাখুন। নিউজপ্রিন্ট কাগজ পানি বেশি শোষণ করে। তাই এ জাতীয় বইগুলো আলাদা তাকে রেখে বিশেষ যত্ন নিন। ► দোকানে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের কভার পাওয়া যায়, যাকে মাইলার বলে। এগুলো দিয়ে ঢেকে রাখলে বইয়ের কভার অক্ষত থাকে। ► কাত করে শেলফে বই রাখবেন না, এতে এর বাঁধাই আলগা হয়ে যায়। একদম সোজা করে বা একটার ওপর আরেকটি রাখুন। মুড়ে পড়বেন না, এতে বাঁধাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে মোটা বইগুলো পড়ার সময় বইয়ের কভারসহ পাতাগুলো ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে রেখে পড়বেন। কখনো বইয়ের পাতা ভাঁজ করে রাখবেন না। ► সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে—এমন কোথাও শেলফ রাখবেন না। বই বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। বইয়ের তাকের আশপাশে দরজা-জানালা থাকলে বৃষ্টির সময় বন্ধ করে রাখুন। বইয়ে ড্যাম্প  হলে হালকা রোদে শুকিয়ে নিন। খুব কড়া রোদও বইয়ের জন্য ক্ষতিকর। একুশে সংবাদ // পপি // কাক // ২৭.০২.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1