সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

আমরা ফেসবুক শুনি

প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
একুশে সংবাদ  : ফেসবুকে দেওয়া গরুর ছবির গরুটি হয়ে গেল ‘হর্স’—বলেই হাসলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাজমা আরা বেগম। তিনি বললেন, ‘আমরা যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করি, তা গরুর ছবি পড়ার সময় গরুকে হর্স বলে। এ নিয়ে আমরা বেশ মজা করি। ভাবছিলাম, অন্য কোনো প্রাণীর ছবি দিলে না জানি কী নামে ডাকবে। কয়েক দিন আগে মেহেদিসহ একজন পায়ের ছবি দিয়েছে ফেসবুকে। পায়ে স্যান্ডেল ছিল। সফটওয়্যার পড়ল “শুজ”। পরে একজনের কাছে জানতে চাইলাম, তখন তিনি এই ছবির বিষয়বস্তু বলে দিলেন।’ তবে নাজমা আরা বেগম, রেহানা আক্তার, স্বাতী দাশগুপ্তা, আশিকুর রহমানসহ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কয়েকজন একবাক্যে জানালেন, গরুকে হর্স বলুক বা যা-ই বলুক, ফেসবুক ব্যবহার করতে পেরে তাঁদের জীবন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। ফেসবুক ব্যবহার করে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারছেন। আর বেশ গর্বের সঙ্গেই জানালেন, ফেসবুক ব্যবহারে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষেরা মোটেই পিছিয়ে নেই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে এগিয়েই আছেন। গত শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ ভিজ্যুয়ালি ইমপিয়ার্ড পিপলস সোসাইটির (ভিপস) কার্যালয়ে কথা হয় এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সঙ্গে। ভিপস স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্নাতকেরা এর সদস্য হতে পারেন। সদস্যসংখ্যা ১৬৪। সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। ছুটির দিনগুলোতে বিকেলের দিকে এখানে বসে সদস্যরা আড্ডা দেন। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে। ভিপসে গিয়ে দেখা গেল, একেকজন আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকেও ব্যস্ত। তাঁরা মুঠোফোনের পর্দা চোখের সামনে নয়, কানের কাছে ধরে আছেন। ফেসবুকে থাকা বিভিন্ন ছবির বর্ণনা ও ক্যাপশন শুনে তাঁদের মুখের অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। কোনো ছবিতে মন্তব্য করতে হলে লিখে মন্তব্য করছেন। আড্ডায় বসে জানা গেল, নাজমা আরা বেগম ভিপসের সাধারণ সম্পাদক। সৈয়দা সানজিদা আলম মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক। ঢাকা থেকে প্রতিদিন বাসে করে মানিকগঞ্জে যাতায়াত করেন। রেহানা আক্তার কম্পিউটারে দক্ষ। স্বাতী দাশগুপ্তা ভালো কবিতা আবৃত্তি করেন। উজ্জ্বলা বণিক গান গাইতে পারেন। আশিকুর রহমানের নিজের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে, পাশাপাশি বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছেন। ভিপসের একটা ঘরে সংগঠনের সভাপতি সাইদুল হকসহ অন্যরা ব্রেইল বই নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। নাজমা শনিবার বিকেলেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি ভিপসে এসেছেন। জানালেন, এই দীর্ঘ চলার পথে মোবাইল ফোনই ছিল তাঁর সঙ্গী। গুগল ম্যাপ থেকে জেনে বুঝতে পেরেছেন কত দূর এলেন। ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাসও আপডেট করেছেন। নাজমা ফেসবুকে হাত চালাতে চালাতেই বললেন, ‘ফেসবুকে মানুষ এত ভুল বানানে লেখে ক্যান? মানুষ যে ক্যান এত সব হাবিজাবি ফেসবুকে দেয়? আমি ফেসবুকে কিছু দেওয়ার আগে ১০ বার ভাবি কোনো ভুল হলো কি না। আর আমাদের মধ্যেও কেউ যদি অন্যকে বিপদে ফেলতে চায়, কুৎসা রটাতে চায় তো ফেসবুককেই বেছে নেয়। কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে অনেকক্ষণ চিন্তা করতে হয় এই ব্যক্তিকে চিনি কি না। কেননা, আমরা তো আর ছবিটা দেখতে পাচ্ছি না।’ সানজিদা বললেন, ‘আমরাও অন্যদের মতো মানুষ। আমাদের আবেগ, অনুভূতি আছে। দৃষ্টিসম্পন্নরা খুব সহজে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারে, আমাদের বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। ছবি দেখা ও আপলোডের ক্ষেত্রে অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে হয়। কারও বাবা মারা গেলে আমরাও দুঃখের ইমো ব্যবহার করি। নিউজ বা অন্য কিছু ভালো লাগলে তা শেয়ার করি।’ ছবি দেখতে না পারলেও ফেসবুক হলো মন্দের ভালো। বললেন উজ্জ্বলা। আগে তো ফেসবুক শুধু ‘ফটো’ ‘ফটো’ বলত, এখন সফটওয়্যার ছবির কিছু বিবরণও দিচ্ছে। আশিকুর রহমান ফেসবুক ব্যবহার করছেন ২০০৪ সাল থেকে। তিনি বললেন, ‘আমরাও ছবি বা কিছু আপলোড করার পর বারবার দেখি কয়জন লাইক দিল।’ পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি ভাই, বোন বা স্ত্রী আপলোড দেওয়ার সময় ট্যাগ করে দিচ্ছে বলে জানিয়ে আশিকুর বললেন, ‘ইচ্ছে করেই ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা কম রাখি।’ ভিপসের সভাপতি এবং ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (বারডো) নির্বাহী পরিচালক সাইদুল হকের সঙ্গে ভিপস কার্যালয়ে এসেছেন তাঁর স্ত্রী মাকসুদা আক্তার। তিনি বারডোর প্রোগ্রাম অফিসার। মাকসুদা জানালেন, বারডোর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ আছে। তাতে ছবি দেওয়া, কমেন্ট করাসহ নানা কাজে তিনি এবং অফিসের অন্য কর্মীরা সাইদুল হককে সহায়তা করেন। তাঁদের দুই মেয়েও সহায়তা করে। চট্টগ্রামের উম্মে হাবিবা চৌধুরী, উম্মে সালিমা চৌধুরী, উম্মে তাসলিমা চৌধুরী ও উম্মে তানজিলা চৌধুরী চার বোন। চারজনই জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। হাবিবা, তাসলিমা ও তানজিলা চট্টগ্রামের তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাসলিমা ও তানজিলার বিভিন্ন মান-অভিমান, খুনসুটি চলে ফেসবুকে। একজন আরেকজনকে বুঝে নিচ্ছেন ফেসবুকেই। তবে অন্য দুই বোনের ফেসবুক নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই। টেলিফোনে তানজিলা চৌধুরী বললেন, ‘যারা চোখে দেখে তারা ফেসবুক দেখে, আর আমরা শুনি। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে​ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে এখন পত্রিকা পড়া থেকে শুরু করে বেশির ভাগ কাজ নিজেরাই করতে পারি। ফেসবুক এখন আমাদের ভালো লাগার জায়গায় পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে ছবি আপলোড করার সময় অন্যের সাহায্য নিতে হয়, যাতে ভুল ছবি চলে না যায়। ছবিতে ক্যাপশন থাকলে তা আমাদের জন্য সহজ হয়। আর ক্যাপশন পছন্দ বা অপছন্দ হলে আমরা খুব সহজেই রিঅ্যাকশন দিতে পারি।’ এঁরা ফেসবুকের হাত ধরে সময় কাটাতে পারছেন ভার্চ্যুয়াল জগতে। দেখতে পান না ঠিকই, কিন্তু শুনতে তো পান ফেসবুক বন্ধুদের হাসি-আনন্দের নানা শব্দ। একুশে সংবাদ // পপি // প্রআ // ২৭.০২.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1