সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ মা–বাবার

প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
একুশে সংবাদ : মাহমুদা খানম হত্যার ঘটনায় তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জড়িত বলে মাহমুদার মা ও বাবা অভিযোগ করেছেন। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ অভিযোগ করেছেন বলে জানান মাহমুদার বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশাররফ। পারিবারিক অশান্তির কারণে মাহমুদা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলেও তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন তাঁরা। খুনের ঘটনার আগে বাবুলের সঙ্গে মাহমুদার (মিতু) সম্পর্ক ভালো ছিল না বলেও দাবি তাঁদের। তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান গতকাল দুপুরে রাজধানীর মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ায় মাহমুদার বাবার বাসায় যান। প্রায় আড়াই ঘণ্টা তিনি মাহমুদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয় মাহমুদাকে। এত দিন চুপ থাকার পর এখন কেন বাবুলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করছেন, জানতে চাইলে মাহমুদার মা বলেন, ‘এত দিন অবুঝ দুটি সন্তানের কথা চিন্তা করে মুখ খুলিনি।’ তিনি বলেন, বাবুলের একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এ কারণে মাহমুদার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন বাবুল। আর এসব কারণে মাহমুদাকে হত্যা করে বাবুল। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগ থেকে মাহমুদার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে শুরু করেন বাবুল। দুই বাচ্চাকে বাবুলের কাছে রেখে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাসও করান। মাহমুদাকে হত্যা করা হবে বলে বাবুলের আচরণে এমন পরিবর্তন এনেছিলেন বলে তিনি সন্দেহ করেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে মাহমুদার বাবার বাসায় যান তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। এ সময় খিলগাঁও থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা সঙ্গে ছিলেন। বেলা দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ ও ছোট বোন শায়লা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। দুজনের বক্তব্য শোনার পর মাহমুদার বাবা মোশাররফ চার পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। বাবুলকে নিয়ে মাহমুদার মা-বাবার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মাহমুদার পরিবার অনেক কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য নিয়েছি। বিভিন্ন দিক থেকে পাওয়া সব তথ্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাহমুদা হত্যার পর বাবুলের সম্পর্কে যেসব অভিযোগ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সে বিষয়ে পরিবারটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে যাচাই করা হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বাবুল আক্তারকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মাহমুদা খুনের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে বাবুলের জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু মাহমুদার বাবা ও মা এসব উড়িয়ে দেন। বাবুলের সঙ্গে মাহমুদার দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো ছিল বলেও বিভিন্ন সময় তাঁরা বলেছেন। পারিবারিক অশান্তির কারণে মাহমুদা খুন হতে পারেন না বলেও তাঁরা দাবি করে আসছিলেন। মাহমুদার বাবা-মায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাবুল আক্তারের সঙ্গে গতকাল বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। মাহমুদা খুনের পর থেকে বাবুল গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। পুলিশ সুপারের চাকরি থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদাদের বাসায় আসার আগে মাহমুদার মা ও বাবা বলেন, মামলা পুলিশ তদন্ত করছে। কেন ও কী কারণে মাহমুদাকে হত্যা করা হয়েছে, তা পুলিশকে বের করতে হবে। এসব বের না করে মামলার অভিযোগপত্র দিলে আদালতে নারাজি আবেদন করা হবে। তাঁরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর নাতি-নাতনি নিয়ে তাঁদের বাসায় ওঠেন বাবুল। কিন্তু বিপদ সরে গেছে মনে করে বাবুল সন্তানদের নিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন। এখন বাবুল তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করছেন না। ফোন দিলেও ধরেন না। মাহমুদার মা ও বাবা অভিযোগ করেন, মাহমুদাকে নিয়ে বাবুল চট্টগ্রামে যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সমিতির একজন কর্মকর্তা ছাড়াও আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে। পুলিশ বাবুলের ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটের গৃহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। নিহতের মা-বাবা হিসেবে তাঁদের সঙ্গে মাত্র দুবার যোগাযোগ করেছে পুলিশ। আর সন্দেহ করা হলেও বাবুলকে মাত্র একবার চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি মাহমুদার মা শাহেদা মোশাররফ ও বাবা মোশাররফ হোসেনকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে কথা বলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিন তদন্ত কর্মকর্তাকে মাহমুদার মুঠোফোন সেটটি উদ্ধার করতে অনুরোধ করেন তাঁরা। ঘটনার দিন মুঠোফোন সেটটি মাহমুদার সঙ্গে ছিল। কিন্তু লাশ উদ্ধারের সময় মুঠোফোনটি খুঁজে পায়নি পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোলা থেকে শুধু সিমটি উদ্ধার করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে ২ জানুয়ারি বাবুলের বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ছাড়া গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তার এবং ২২ ডিসেম্বর মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আরেকবার কথা বলেন তিনি। মাহমুদার বোন শায়লা বলেন, বাবুলের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মাহমুদা একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের পরিবারের কথা চিন্তা করে তিনি সে পথ থেকে ফিরে আসেন। তবে তাঁর (শায়লা) বিয়ে হওয়ার পর বাবুলকে ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। একাধিক নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। এই হত্যার জন্য বাবুল দায়ী। মাহমুদা হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর গত বছরের ২৭ জুন মো. ওয়াসিম ও আনোয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা স্বীকার করেন, কামরুল শিকদার ওরফে মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তাঁরা সাত-আটজন অংশ নেন। বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠ সোর্স হিসেবে কাজ করতেন মুছা। ওয়াসিম ও আনোয়ারকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন রাতে চট্টগ্রামের বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাকে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরদিন পিস্তল, গুলিসহ মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই পিস্তল দিয়েই মাহমুদাকে হত্যা করা হয়। পিস্তলটি ভোলার কাছ থেকে মুছা সংগ্রহ করেছিলেন। মুছাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। যদিও পরিবার বলছে, মুছাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। একুশে সংবাদ // পপি // প্রআ // ২৭.০২.১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1