সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সিলেটের বনে বনে

প্রকাশিত: ১২:৫৬ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
একুশে সংবাদ  : চায়ের দেশ সিলেট, পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ সিলেট, তার চেয়ে বড় পরচিয় হলো সিলেট জীববৈচিত্র্যের এক সমৃদ্ধ বিভাগ। সিলেটের প্রকৃতি যেমন বৈচিত্র্যময় আছে পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, ছরি, হাওর-বাঁওড়, বিল ও বন তেমনি সিলেট বন্যপ্রাণী পাখি, প্রজাপতি, মাকড়সা ও মাছের জন্য বৈচিত্র্যময় সমাহার। সিলেট বিভাগে আছে সাতটি সংরক্ষিত বন ও বিল। এর মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, বাইক্কাবিল, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও রেমা-ক্যালেঙ্গা ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারি অন্যতম। আর তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের (৪৩তম আবর্তন) ‘প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য’-বিষয়ক প্রতিবেদনের (শিক্ষাসফর ২০১৭) জন্য বৃহত্তর সিলেট বিভাগকে বেছে নেয়া হয়।   আমাদের সফর শুরু হয় ৫ তারিখ ভোর ৪টায়। সকাল ৭টায় সূর্যমামা উঁকি দিলো বাসের জানালায়। ততক্ষণে বাস ঢাকা ছেড়ে প্রবেশ করেছে অন্য জেলায় কুয়াশার চাদর খুলে রোদ পোহাচ্ছে ফসলের মাঠ, সবুজের জনপদ। এভাবে বাস এগিয়ে গেল আমাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে। সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা পৌঁছে গেলাম ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে’। এরপর বাস থেকে সবাই নেমে গোল হয়ে দাঁড়ালাম শিক্ষকদের চার দিকে। প্রাথমিক আলোচনা কিভাবে বন ঘুরতে হয় বন্যপ্রাণীকে ডিস্টার্ব না করে। প্রথমেই মুখ অফ, দেখব শুধু চোখে, শুনব মোরা কানে, কথা হবে না মুখে।     এরপর আমরা শিক্ষকের পেছনে পেছনে এগিয়ে গেলাম বনের ভেতর প্রথমেই সামনে পড়ল একদল বানর, আর একটু এগোতেই দেখলাম বানরের অন্য একটি প্রজাতি ‘উল্টা লেজি বানর’ উল্টা লেজি বানরের লেজটি পেছনে উল্টো দিকে বাঁকিয়ে থাকে তাই এর নাম উল্টা লেজি বানর। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখা মিলল মুখ পোড়া হনুমানের। মুখ পোড়া হনুমানের সমস্ত শরীর সাদা বা অন্য রঙের লোমে আবৃত হলেও এ বানরটির মুখ কালো আর তাই এর নাম মুখ পোড়া হনুমান। এরপর বনের ভেতর যতই হাঁটি ততই দেখা মেলে নানা   জাতের নানা প্রজাতির প্রাণীর। ‘কমন গার্ডেন লিজার্ড’ যাকে আমরা বাংলায় বলি রক্তচোষা বা গিরগিটি, এর নাম রক্তচোষা হলেও এরা মোটেও রক্ত পান করে না, তবে সরীসৃপটি যে আসলেই এর গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারে তা বনে গিয়ে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। বনের আঁকাবাঁকা পথে হারিয়ে যাওয়া আর বানরের বাঁদরামি নিয়ে যায় অন্য এক জগতে, আর মাঝে মধ্যে বনের ছড়ির ভেতর হেঁটে যাওয়ার সময় বালিতে পা ঢুকে যাওয়া কিংবা বনের ছোট ছোট টিলাগুলো অতিক্রম করার সময় সত্যই মনে হয় এ এক অন্য জগৎ, তারুণ্যের উদ্দীপনা, আর যৌবনের শক্তি। বনের মধ্যে হাজারো পাখির কলরব আর নানা রঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি মন হারিয়ে যায় এক অন্য স্বর্গে। সাতছড়ি বনের নাম সাতছড়ি হয়েছে, কারণ এর মধ্য দিয়ে সাতটি ছড়ি প্রবাহিত হয়েছে তাই। বর্ষাকালে ছড়িগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও শীতের মওসুমে ছড়িগুলো শুকিয়ে বালুর রাস্তা হয়ে যায়।এভাবে দুই ঘণ্টা ঘোরার পর আমরা আবার বাসে উঠে সোজা চলে যাই মৌলভীবাজারের হোটেল স্কাই পার্কে।   হোটেলে মাত্র দেড় ঘণ্টার জন্য বিরতি খাওয়াদাওয়া আর গোসল সেরেই আবার যাত্রা শুরু ‘বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে’ সেখানে নানা প্রজাতির চা বাগানের পরিদর্শন। কোন চায়ের কী গুণ, কোন চায়ে কী ধরনের পোকা আক্রমণ করে এবং কী কী কীটনাশক ব্যবহার করে এর প্রতিকার করা যায়, ছিল চা সম্পর্কে নানা পাঠ ও কোন চা গাছ কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে, কোন মাটি চা বাগানের জন্য উপযোগী উহ আর ভালো লাগছে এ যেন চা নিয়ে এক দিনে চা গবেষক হয়ে গেলাম। আর চা ইনস্টিটউটের কর্মকর্তাও থেমে যাওয়ার লোক নন। তিনিও জানিয়ে দিলেন চা সম্পর্কে তার জ্ঞানের গভীরতা। তার কথা শুনতে শুনতে বিকেলের সূর্যটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল চা বাগানের পাহাড়ের টিলার ওপর। আমাদেরও শেষ হলো চায়ের পাঠ নেয়া।   এবার আমাদের অভিযান ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে’ সেখানে রাতের জোছনায় হুতুম পেঁচার ডাক শোনা আর ভাগ্য বেশি ভালো হলে ‘লজ্জাবতী বানরের’ দেখা পাওয়া। রাতে বনের ভেতর এক ঘণ্টার হাঁটাহাঁটি জোছনার চাদর মুড়িয়ে শীতের কুয়াশা জড়িয়ে লাউয়াছড়া বন ধারণ করে এক নৈসর্গিক রূপের দেবী। আর মাঝে মাঝে বনের গভীর থেকে নানা পাখির ডাক ও বিভিন্ন পতঙ্গের ঝিম ঝিম গান আমাদের নিয়ে গেল এক অন্য জগতে। এরপর রাতে হোটেলে ফিরে কোনোরকম রাতের খাবার শেষ করে শুরু হলো সারা দিনের বাঁদরের বাঁদরামির অনুশীলন। এভাবে শেষ হলো প্রথম দিন।   তারপর দ্বিতীয় দিনের আমাদের মিশন হলো লাউয়াছড়ার ‘উল্লুক গিবন’ দেখা। সকাল ৬টায় আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম লাউয়াছড়ার উদ্দেশে। বনের মধ্যে যেত যেতে দেখা মিলল বনমোরগের আর নানা প্রকারের সকালবেলার পাখির। লাউয়াছড়া বনে আমরা দেখা পেলাম আরো একটি হনুমানের, এর নাম হচ্ছে ‘চশমা পরা হনুমান’। হনুমানটির দুই চোখের চার দিকে সাদা গোল দাগ আছে, যা দূর থেকে দেখলে মনে হয় চশমা পরে আছে। আর তাই তার নাম দেয়া হয়েছে চশমা পরা হনুমান। এভাবে আমরা তিন দিন লাউয়াছড়া বন, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, রেমা-ক্যালেঙ্গা বন ও বাইক্কা বিল ঘুরে নিয়েছি প্রকৃতির পাঠ। কিভাবে বেঁচে আছে নানা প্রাণী নানা পরিবেশে বিভিন্ন সংগ্রাম করে। এভাবে প্রকৃতি নিবিড় আলিঙ্গনে লালন করছে নানা প্রাণী ও আমাদের।           একুশে সংবাদ // এস এস // ১৯.০২.২০১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1