সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হরিণ দেখতে নিঝুম দ্বীপে

প্রকাশিত: ১০:৪০ এএম, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
একুশে সংবাদ : ‘নিঝুম দ্বীপে গিয়ে নিশ্চয়ই হরিণের ঝলসানো মাংস খাবে। পারলে আমাদের জন্যও নিয়ে এসো,’ নিঝুম দ্বীপে যাচ্ছি শুনে বন্ধু-আত্মীয়দের মুখ থেকে প্রথমেই এ ধরনের কথা শুনতে হয়। হরিণের ঝলসানো মাংস খাওয়ার প্রতি কোনো লোভ ছিল না, কিন্তু মনে ক্ষীণ আশা ছিল, নিশ্চয়ই অসংখ্য হরিণের দেখা মিলবে। গত ১৮ জানুয়ারি সরকারের পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ মেলে। নিঝুম দ্বীপের ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট থেকে শুরু করে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নটির প্রায় পুরো এলাকা রিকশা দিয়ে চক্কর দেওয়ার সুযোগ হয় পিকেএসএফের বিভিন্ন কর্মসূচি দেখার সময়। রিকশাচালক ছিলেন খোকন মিয়া। তিনি বেশ ক বছর আগে এ দ্বীপে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাঁর কাছে প্রথমেই আবদার ছিল হরিণ দেখানোর। একপর্যায়ে খোকন মিয়া বললেন, দেখেন দেখেন...। ভাবলাম, তিনি মনে হয় আবদার মিটিয়েই ফেললেন! কিন্তু খোকন মিয়া কথা শেষ করলেন, ‘ওই যে হরিণের পায়ের ছাপ।’ রাস্তার পাশে খাল ঘেঁষে সবুজ বনের কিনারায় পলি জমা জায়গায় দেখা গেল আসলেই অনেক হরিণের পায়ের ছাপ। হয়তো খালের পানি খেতে বের হয়েছিল। অবশেষে হরিণের দেখা মিলল, তবে বনের ভেতরে নয়, লোকালয়ে। চর ওসমান বন বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে দুটি বড় হরিণ ও বাচ্চা মিলে পাঁচটি হরিণ। নোয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের জাহাজমারা রেঞ্জের অধীনে এ কার্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। লোকালয়ে হরিণের দেখা পাওয়াও তো কম সৌভাগ্যের কথা নয়! সাংবাদিকসহ পিকেএসএফের প্রায় ২০ জনের প্রতিনিধিদল হরিণের সঙ্গে সেলফি তোলা, হরিণকে বাদাম, কলা, চিপস খাওয়ানোসহ যেন হুলুস্থুল লেগে গেল! টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪-এর প্রতিবেদক সুলতান আহমেদ তো একটি হরিণ কোলে নিয়েই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন! নিঝুম দ্বীপের হরিণ। তবে বন বিভাগে কর্মরত এবং নিঝুম দ্বীপে বসবাসরত সাধারণ জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দ্বীপটিতে হরিণের সংখ্যা কমছে তো কমছেই। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সবুজ বনবেষ্টিত জীববৈচিত্র্যের অপরূপ সমারোহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় হরিণের দেখা পাওয়া। এখানে আছে জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনভূমি। ৮১ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিকে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদী ঘিরে রেখেছে। ১৯৫০ সালে চর জাগে। তবে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর আরও তিন বছর দ্বীপটি ছিল জনমানবহীন। ১৯৭৩ সালেই দ্বীপটির নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপটির বিভিন্ন তথ্য ও ছবি দিয়ে বানানো একটি পোস্টার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে বন বিভাগ এ দ্বীপে চার জোড়া চিত্রল হরিণ অবমুক্ত করে। ২০০৬ সালের এক জরিপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তখন হরিণ ছিল প্রায় ১৪ হাজার। তবে জাহাজমারা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার ফিরোজ আলম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সেভাবে কোনো জরিপ করা হয়নি। বর্তমানে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার (কম-বেশি হতে পারে) হরিণ থাকতে পারে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর হরিণের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যায়। শিয়াল, বন্য কুকুর অনেক সময় হরিণ খেয়ে ফেলে। আর বন বিভাগের অজ্ঞাতসারে এলাকাবাসী অনেক সময় হরিণ ধরে। জনবলের অভাবসহ বন বিভাগের আওতায় এখানে আইন বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। হরিণের অবাধ বিচরণের জন্য দ্বীপে পাড় উঁচু করে কয়েকটি পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে হরিণ সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানালেন কর্মকর্তা ফিরোজ। গত অক্টোবর থেকে দায়িত্বে আছেন ফিরোজ। জানালেন, অনেক সময় লোকালয়ে হরিণ চলে এলে বা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে জনগণ বন বিভাগকে খবর দেয়। সেভাবেই বন বিভাগের কার্যালয়ে পাঁচটি হরিণ এসেছে। এদের খাবারের পেছনেই মাসে চলে যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। জানা গেল, হরিণের প্রধান খাদ্য কেওড়াগাছের পাতা। গাছগুলো বড় হয়ে গেলে তা হরিণের নাগালের বাইরে চলে যায়। বনের ভেতরের অনেক খাল পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেলে হরিণের খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। বনে বানর নেই বলে গাছের ফল বা পাতা নিচে সেভাবে পড়ে না। বিভিন্নভাবে খাদ্যসংকটে হরিণ বিভিন্ন চর ও লোকালয়ে চলে আসে। তখন তারা মানুষের আগ্রাসনের শিকার হয়। নিঝুম দ্বীপের ৪, ৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য তাহেরা বেগম জানান, তিনি দ্বীপে বসবাস শুরু করেছেন ১৯৯৯ সালে। তাঁর মতেও, দিন দিন হরিণের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। একেবারে না দেখে ফেরার চেয়ে গৃহপালিত হরিণের দেখা পাওয়া গেছে, তাই-বা কম কিসে! ভবিষ্যতের পর্যটকদের যদি এইটুকুও সৌভাগ্য না হয়, তাতেও তো অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! একুশে সংবাদ // পপি // প্রআ // ১৯-০২-১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1