সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

তাওরাত ও ইনজিল শরিফে ভাষা প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
একুশে সংবাদ : বর্তমান দুনিয়ায় কতগুলো ভাষা আছে, আর কতগুলো ভাষায় মানুষ কথা বলে, এর সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো পাওয়া যাবে না। কারণ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একটি করে ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে—মানে এসব ভাষায় কথা বলার আর একজনও লোক থাকছে না। আগামী ১০০ বছরে পৃথিবী থেকে তিন হাজার ভাষা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভাষাবিদরা। (সূত্র : Ethnologue-The languages of the world, 1999)। সে হিসেবে গড়ে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা অবলুপ্ত হয়ে যাবে অথবা যাচ্ছে। দুনিয়ায় তালিকাভুক্ত ভাষার সংখ্যা ছয় হাজার ৬০টি। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ ভাষা দিয়েই দুনিয়ায় বেশির ভাগ মানুষের কথা বলার কাজটি হয়ে যাচ্ছে। ৫০টির মতো ভাষা আছে, যে ভাষায় মাত্র একজন করে মানুষ কথা বলে। এর অর্থ ওই একজন করে মানুষের মৃত্যু হলে ওই ৫০টি ভাষারও মৃত্যু হয়ে যাবে। ৫০০টির মতো ভাষা পৃথিবীতে আছে, যার মাধ্যমে কথা বলে মাত্র ১০০ জন করে লোক। ওই ১০০ জনের মৃত্যু হলে মৃত্যু হবে আরো ৫০০টি ভাষার। দুনিয়ার ভাষাগুলোর অবস্থান ব্যক্তিগত নয়, তা জাতিগত, সম্প্রদায়গত ও গোষ্ঠীভুক্তও। পাপুয়া নিউগিনি নামে বিশ্বে একটি রাষ্ট্র আছে, যা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই একটি রাষ্ট্রে ৮১৭টি ভাষা চালু রয়েছে কথা বলার জন্য। অথচ চীন এত বড় দেশ, শত কোটিরও বেশি মানুষের বাস, সেখানে ভাষা মাত্র ২০৫টি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে চালু আছে ৪০৭টি ভাষা। [তথ্যসূত্র : এ জেড এম আবদুল আলী, ‘বিশ্বের ভাষা নিয়ে কথা’, একুশে ফেব্রুয়ারি : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শীর্ষক পুস্তিকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২০০১]। বাংলাদেশে ভাষার সংখ্যা কত? আমাদের জানা আছে কি? ভাষা নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান ইথনোলগের সর্বশেষ প্রকাশনায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে মোট ভাষার সংখ্যা হচ্ছে ৪২। প্রায় ত্রিশের কাছাকাছি ভাষা প্রচলিত রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে। সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেখানো যায়। যেমন—চাকমা, মারমা, ওঁরাও, ত্রিপুরা, গারো, লুসাই, সাঁওতালি, মণিপুরী, রাখাইন, রামর্যে, মারৌ, কুরুক, ককবরক, হাল্লামি, নাইতুং, ফাতুং, উসুই, আচিক, কুচিক, মান্দি কুচিক, আবেং, সাগেতাং, আত্তং, দুলিয়্যানটং, চারমেলি, মাহলেস, মণিপুরী মৈইত ও খালাছাই। পৃথিবীর এতগুলো ভাষা, এ ভাষাগুলো কেমন করে এক থেকে অন্যে ভিন্ন হলো, তার নানা রকম ব্যাখ্যা ভাষাবিদদের কাছে রয়েছে। তবে এ সম্পর্কে প্রাচীন গ্রন্থ তাওরাত শরিফ, যা মুসা (আ.)-এর আমলে নাজিল হয়েছিল (যদিও মূল তাওরাত শরিফ পাওয়া এখন এক কঠিন কাজ), তার থেকে কিছু তথ্য নেওয়া যায়। তাওরাত শরিফে ভাষার জন্মকথা নিয়ে একটি ছোট্ট অধ্যায় রয়েছে। এতে বলা হয়েছে : তখনকার দিনে সারা দুনিয়ায় মানুষ শুধু একটি ভাষায়ই কথা বলত এবং তাদের শব্দগুলো ছিল একই। পরে তারা পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ব্যাবিলন দেশে একটা সমভূমি পেয়ে সেখানেই বাস করতে লাগল। ... তারা বলল, ‘এসো, আমরা নিজেদের জন্য একটা শহর তৈরি করি এবং এমন একটা উঁচু ঘর তৈরি করি, যার চূড়া গিয়ে আকাশে ঠেকবে। ... মানুষ যে শহর ও উঁচু ঘর তৈরি করছিল, তা দেখার জন্য মাবুদ নেমে এলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এরা একই জাতির লোক এবং এদের ভাষাও এক; সে জন্যই এই কাজে তারা হাত দিয়েছে। নিজেদের মতলব হাসিল করার জন্য এরপর এরা আর কোনো বাধাই মানবে না। কাজেই এসো, আমরা নিচে গিয়ে তাদের ভাষায় গোলমাল বাধিয়ে দিই, যাতে তারা একে অন্যের কথা বুঝতে না পারে। তারপর মাবুদ সেই জায়গা থেকে তাদের সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিলেন। এতে তাদের সেই শহর তৈরির কাজও বন্ধ হয়ে গেল। এ জন্য সেই জায়গার নাম হলো ব্যাবিলন, কারণ সেখানেই মাবুদ সারা দুনিয়ায় ভাষার মধ্যে গোলমাল বাজিয়ে দিয়েছিলেন। (তৌরাত শরিফ : পয়দায়েশ, সূত্র : কিতাবুল মোকাদ্দস, বিবিএস, ঢাকা-২০০৬, পৃষ্ঠা ১২) মূল তাওরাত শরিফে এ কথাগুলো কেমন করে ছিল, তা আজ আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব হবে না। তবে বাইবেল সোসাইটি অনূদিত ও প্রচারিত এ তাওরাত শরিফ নিঃসন্দেহে স্রষ্টার প্রতি বিদ্বেষমূলকভাবে তৈরি করেছে। বান্দারা কী শহর ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছে, তা দেখার জন্য আল্লাহর নিচে নেমে আসার প্রয়োজন নেই। আর ‘এসো, আমরা নিচে গিয়ে তাদের ভাষায় গোলমাল বাধিয়ে দিই’—এমন বাক্য আল্লাহর হতে পারে না। ‘গোলমাল’ একটি নেতিবাচক শব্দ, আল্লাহ এভাবে কথা বলবেন না। আর শেষ লাইনটিও আপত্তিকর মন্তব্য দ্বারা পূর্ণ। বলা হয়েছে, ‘মাবুদ সারা দুনিয়ায় ভাষার মধ্যে গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছিলেন। ’ এ লাইন পড়ে আল্লাহ বা মাবুদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা হবে না, বরং নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেবে। ভাষা প্রসঙ্গে তাওরাত শরিফের নামে এ ভাষ্য বিভ্রান্তিমূলক। এরপর আমরা দেখতে পারি, ভাষা প্রসঙ্গে ইনজিল শরিফের ভাষ্য। ইনজিলের করিন্থীয় ভাষ্যে যিশু বলছেন : ১। আমি যদি মানুষের এবং ফেরেশতাদের ভাষায় কথা বলি, কিন্তু আমার মধ্যে মহব্বত না থাকে, তবে আমি জোরে বাজানো ঘণ্টা বা ঝনঝন করা চরতাল হয়ে পড়েছি। যদি নবী হিসেবে কথা বলার ক্ষমতা আমার থাকে, যদি আমি সব গোপন সত্যের বিষয় বুঝতে পারি, আর যদি আমার সব রকম জ্ঞান থাকে;... কিন্তু আমার মধ্যে মহব্বত না থাকে, তবে আমার কোনোই মূল্য নেই। (ইনজিল শরিফ, সপ্তম খণ্ড, করিন্থীয় ভাষা, সূত্র : কিতাবুল মোকাদ্দস, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা—২০০৬, পৃষ্ঠা ২৪২-২৪৩) অন্যত্র, যিশুর ভাষ্যে— ২। ...অন্য কোনো ভাষায় যে লোক কথা বলে সে মানুষের কাছে কথা বলে না, কিন্তু আল্লাহর কাছে কথা বলে। কারণ কেউ তা বুঝতে পারে না। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৩। আমি চাই তোমরা সবাই যেন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারো, কিন্তু আরো বেশি করে চাই যেন তোমরা নবী হিসেবে কথা বলতে পারো। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৪। অন্য কোনো ভাষায় যে লোক কথা বলে, জামাতের লোকদের গড়ে তোলার জন্য যদি সে তার কথার মানে বুঝিয়ে না দেয়, তবে তার চেয়ে নবী হিসেবে যে কথা বলে সে-ই বরং বড়। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৫। এ জন্য অন্য কোনো ভাষায় যে লোক কথা বলে, সে মোনাজাত করুক যেন তার মানে সে বুঝিয়ে দিতে পারে। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ৪) ৬। আমি যদি অন্য কোনো ভাষায় মোনাজাত করি, তবে আমার রুহই মোনাজাত করে, কিন্তু আমার মন কোনো কাজ করে না। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৭। ...তা না হলে যদি তুমি রুহে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাও, তবে সেই ভাষা বুঝতে পারে না এমন কোনো লোক যদি সেখানে উপস্থিত থাকে, তবে সে কেমন করে তোমার শুকরিয়ায় আমিন বলে সায় দেবে? সে তো জানে না, তুমি কী বলছ। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৮। আমি তোমাদের সবার চেয়ে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে বেশি পারি বলে আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই। তবে জামাতের মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় হাজার হাজার কথা বলার বদলে অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি বুদ্ধি দিয়ে বরং মাত্র পাঁচটি কথা বলব। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৩) ৯। ঈমানদারদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা কোনো চিহ্ন নয়, বরং অ-ঈমানদারদের জন্য ওটা একটি চিহ্ন। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৪) ১০। জামাতের সব লোক এক জায়গায় মিলিত হলে তারা যদি সবাই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে থাকে, আর তখন সেই জামাতের বাইরের লোকেরা এবং অ-ঈমানদাররা ভেতরে আসে, তবে কি তারা তোমাদের পাগল বলবে না। (সূত্র : পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা : ২৪৪) ইনজিল শরিফের নামে লেখা ওপরে উল্লিখিত কথাগুলোর কোনো ব্যাখ্যা এ গ্রন্থে নেই। ফলে ভাষা বিষয়ে এখানকার উপস্থাপিত জটিল বাক্যগুলোর প্রকৃত তাত্পর্য বের করা যাচ্ছে না। শুধু এটুকু বলা যায় অথবা ভাবা যায়, বিভিন্ন রকম ভাষা সেই প্রাচীন আমলেই দুনিয়ায় ছিল। একুশে সংবাদ // পপি // কাক // ১৭-০২-১৭

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1