সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ফ্যাশন বিশ্বে জামদানি শাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতীক

প্রকাশিত: ০২:১২ পিএম, জুন ২৬, ২০১৬
একুশে সংবাদ: বাঙালি পরিচয় থেকে শাড়িকে আলাদা করা যাবে না কিছুতেই। তবে সবচেয়ে অভিজাত ও আধুনিক শাড়ির উল্লেখ করলে যে নামটি সবার আগে আসে তা হচ্ছে জামদানি। জামদানি আমাদের হারানো ঐতিহ্য মসলিনের বংশধর। ঢাকাই মসলিনের পরেই ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি জামদানির গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত জামদানি এখন আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত এক ধরনের সূক্ষ্ণ বস্ত্র। বাহারি রঙ, বুনন কৌশল, নকশাও জ্যামিতিক মোটিফে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায় জামদানি। সৌন্দর্য ও নন্দন শৈলিতার উৎকর্ষে এ শিল্পে আবহমান বাংলার প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠে। এ দেশের তাঁতীদের অসামান্য দক্ষতা এবং নিপুণতায় শত বছর ধরে তৈরি কারুকার্যময় ঢাকাইয়া জামদানির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। জামদানি মানে অঙ্গজুড়ে হাজার বুটির ছড়াছড়ি। ঠিক যেন রঙ বদলানো আকাশে কোটি কোটি তারার মেলা। শত মোটিফ দিয়ে সাজানো জমিন আর পাড়ের মনভোলানো নকশার সমন্বয়ে কারিগররা তৈরি করেন এক একটি জামদানি। জামদানির আভিজাত্য তার নকশায়। এই নকশায় রয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবজগৎ ও বৃক্ষলতাযুক্ত নকশার প্রাধান্য। ফ্যাশন মহলে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি মসলিন ও জামদানির দেশ হিসেবে। হাজারো কষ্টের মধ্যেও বাংলার তাঁতীরা এই শিল্পটিকে আগলে রেখেছেন যক্ষের ধনের মতো। তারা এখনও সুঁই-সুতোয় একেকটি জামদানিতে তুলে ধরেছেন একেক কাহিনী। নামও দেওয়া হয়েছে সে কাহিনীকে ভিত্তি করে। জামদানি বলতে সাধারনত শাড়ি বোঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ঐতিহ্যবাহী নকশায় সমৃদ্ধ কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা, বেড কাভার, সোফার কুশন, টেবিল ক্লথ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, থ্রি পিস, ঘাগরাও তৈরি হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন জামদানি ভিন্ন নামে পরিচিত – যেমন পান্না হাজার, দুবলি জাল, বুটিদার, তেরছা, জালার, ডুরিয়া, চারকোণা, ময়ূর, প্যাঁচ, কলমিলতা, পুঁইলতা, কচুপাতা, কলকা পাড়, আঙুরলতা, সন্দেশপাগ, প্রজাপতি পাড়, দুর্বা পাড়, শাপলা ফুল, বাঘনলি, জুঁইবুটি, শাল পাড়, চন্দ্রপাড়, চন্দ্রহার, হংস, ঝুমকা, কাউয়ার ঠ্যাং পাড়, চালতা পাড়, কলসফুল, সুরালি জাল, কপি পাড়, মিহিন পাড়, কাঁকড়া পাড়, শামুকবুটি, মিহিন পাড়, বেলপাতা পাড়, জবাফুল, বাদুড়, পাখি, পাগ ইত্যাদি। ছোট ছোট বিভিন্ন ফুলের বুটি তোলা জামদানি বুটিদার নামে পরিচিত। জামদানি বস্ত্রে ছোট ছোট ফুলগুলি যদি তেরছা ভাবে সারিবদ্ধ থাকে তবে তাকে তেরছা জামদানি বলে। এর নকশা শুধু ফুল দিয়ে নয় ময়ূর বা লতাপাতা দিয়েও হতে পারে। ফুল লতার বুটি জাল বুননের মতো সমস্ত জমিনে থাকলে তাকে জালার নকশা বলা হয়। সারা জমিনে সারিবদ্ধ ফুলকাটা জামদানি ফুলওয়ার নামে পরিচিত। ডুরিয়া জামদানি ডোরাকাটা নকশা সমৃদ্ধ থাকে। বেলওয়ারারি নামে চাকচিক্যপূর্ণ সোনার রুপার জড়িতে জড়ানো জামদানি মুঘল আমলে তৈরি হতো এ ধরনের জামদানি সাধারনত হেরেমের মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে বোনা হতো। উৎসব ও বিশেষ দিনে জামদানির ব্যবহার হয়ে আসছে আদিকাল হতেই। এদিকে ইট-কংক্রিটের এই নগরীতে নানা রঙের রঙিন পোশাকের ভিড়ে অজপাড়া-গাঁয়ের সেই ঐগিত্যবাহী জামদানি দেখা ও কেনার সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে তাদের যৌথ আয়োজনে রোববার জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্রশালী প্রদর্শনালয়ে ১০ দিনের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু। ১৯ জুন থেকে ২৮ জুন পযর্ন্ত অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনী সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫টা পযর্ন্ত সর্ব সাধারনরে জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। প্রদর্শনীটিতে অংশ নিয়েছে শাড়ি ও বস্ত্র প্রস্ততকারী ২০টি প্রতিষ্ঠান। জামদানি শাড়ি ছাড়াও থ্রি পিস, টু পিস, পাঞ্জাবি, রুমাল, ওড়না, টেবিল ক্লথ ও অন্যান্য সমারোহ ঘটেছে এই প্রদর্শনীতে। তবে মেলায় জামদানি পণ্যের কেনাবেচা ও প্রচারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার জামদানির প্রদর্শনি ঘুরে এ বিষয়ে আলাপ হলো জামদানির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে। প্রদর্শনীর ১৯ নং স্টলের হাজী কফিলউদ্দিন জামদানির বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ রুস্তম আলী বাংলামেইলকে বলেন, গত বছর বিক্রিয় অনেক বেশি ছিল। এ বছর বেচাকেনা কম। বর্তমানে আমাদের স্টলে ৮০ হাজার টাকা দামের জামদানি আছে। গত বছর আমরা ৫৫ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি বিক্রয় করেছি। রিপন জামদানি হাউজ ঘুরে দেখা গেছে সেখানে থ্রি পিস বিক্রয় হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা এবং ওড়না ৫ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। বিক্রয় প্রতিনিধি মোঃ অপু বলেন, বিক্রয়ের অবস্থা খারাপ। তবে ২২ রোজা পযর্ন্ত সময় আছে। দেখি বাকি সময়ে কেমন হয়। রাকিব জামদানির বিক্রয় প্রতিনিধি রাসেল বাংলামেইলকে বলেন, আমদের এখানে পাঞ্জাবির দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। এটা আড়ং থেকে কিনতে গেলে দাম পড়বে কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বিকেল ৫টায় প্রদর্শনী শেষ হয়ে যায়। আমার মনে হয় সন্ধ্যার পরও স্টলগুলো খোলা থাকলে বেচা-বিক্রি আরো জমে উঠতো। এদিকে প্রদর্শনী ঘুরতে আসা ক্রেতা আখতার জাহান লুপিন বাংলামেইলকে বলেন, আশলে হাতে বোনা জামদানির আকর্ষণই অন্যরকম। এ শাড়ি পড়লে খুবই গর্ব হয়। মনে হয় আমি আমার ঐতিহ্যকে ধারন করে আছি। বিসিকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ আবুল কাদের সরকার বলেন, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণার পর জামদানি শিল্পে সরকার বাড়তি নজর দিয়েছে। বিদেশী পণ্যের প্রভাবে জামদানির ঐতিহ্য মলিন হলেও প্রযুক্তির উৎকর্ষে জামদানি শাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া ‘উন্নত’ হচ্ছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। বিসিকের পরিচালক (বিপণন ও নকশা) মো. মোস্তফা কামাল বাংলামেইলকে বলেন, জামদানি বুননে যেমন শ্রম বেশি , দামও তাই অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিনদেশী কাপড়ের প্রভাবে জামদানি শিল্প আপাতত ধাক্কা খেলেও ঠিক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। জামদানি তার হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে পাবে। প্রতিবছর জামদানি শিল্প এলাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার জামদানি রফতানি করা হয়। উপযুক্ত প্রনোদনা পেলে আরও বেশি রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্ত এ জন্য চাই সরকারের সদিচ্ছা। তবে আশার কথা হলো সরকার বর্তমানে এই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নিচ্ছেন নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একুশে সংবাদ ডটকম/ক/২৬/০৬/১৬

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1