সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মালয়েশিয়ায় কাজের প্রচুর সুযোগ কিন্তু নেই শ্রমিক

প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, মে ১১, ২০১৬
একুশে সংবাদ: মালয়েশিয়াতে এখন কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো করার মতো জনবল নেই। দেশটির সংবাদপত্র নিউ স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশটির আসবাব শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ। কিন্তু এ শিল্পের ব্যস্ততম এলাকাতেও প্রতিমাসের চালান সরবরাহ কমেছে ২৮ শতাংশ। আর এর পেছনের কারণ হলো এ খাতে ২৭ হাজারেরও বেশি কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। দেশটির কৃষকদেরও স্থানীয় শ্রমিক পেতে কষ্ট হচ্ছে। এতে করে কোনো কোনো ফলের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স জানিয়েছে, তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানের ৮৪ শতাংশেই রয়েছে জনবলের সংকট এবং অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠান অর্ডার সরবরাহ করতে পারছে না। বিদেশি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ সরকার না দিলে অনেক প্রতিষ্ঠানই উৎপাদন কমিয়ে দেয়া বা দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতে শুরু করেছে। অনেকেই অভিবাসনকে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সমস্যা মনে করে থাকেন। তাদের জন্য মালয়েশিয়ার অভিবাসন সমস্যা বিস্ময় হয়ে এসেছে। এ ধরনের বিতর্ক উন্নয়নশীল দেশেও বিদ্যমান যেখানে এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ও আয়ের ঘাটতি। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, যেখানে বিদেশি শ্রমিকরা দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই তৈরি করে থাকে। কুয়ালালামপুরের রেস্টুরেন্ট, শপিংমল ও বাজারের কর্মীদের মধ্যে যতজন ইন্দোনেশিয়ার বাহাসা ভাষায় কথা বলেন, স্থানীয় মালয় ভাষায় কথা বলেন তার তুলনায় অনেক কম কর্মী। আবার স্থানীয় ফার্মগুলোর প্রায় সব কর্মীই বাংলাদেশি। দেশটির অটো-সার্ভিস সেন্টারগুলো আবার দেখতে মনে হতে পারে সেগুলো আসলে নেপালি শিল্প। ২০১৪ সালে দেশটির মোট শ্রমবাজার ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ শ্রমিকের। আর সরকারের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে নিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ২১ লাখ। এর বাইরে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যাও আরও প্রায় ১০ লাখ। ফলে দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ। প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক না কেন, এ বিষয়ে প্রায় সবাই একমত যে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা মালয়েশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি। এর পিছনের কারণ হলো- দেশটির অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে উন্নত, দেশটির পূর্ণ কর্মসংস্থান ও বেতন-ভাতাও এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি। তবে এর কিছু সামাজিক কারণও রয়েছে। এ ধারণা সবার মধ্যেই রয়েছে যে মালয়েশিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণরা স্থানীয় ভাষায় ‘থ্রিডি’ কাজ করতে চায় না। ‘থ্রিডি’ হলো- অপরিচ্ছন্ন (ডার্টি), বিপজ্জনক (ড্যানজারাস) ও কঠিন (ডিফিকাল্ট)। কৃষিকাজ, নির্মাণ কাজ ও উৎপাদন সম্পর্কিত কাজগুলো এর মধ্যে পড়ে। আর এসবের সমন্বিত পরিস্থিতি মালয়েশিয়ার শ্রমঘন শিল্পের জন্য সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছে। একটি প্রদেশে পাম তেলের শিল্পে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। আর তার পেছনের কারণ হলো এ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ফল সংগ্রহ করার জন্য নেই পর্যাপ্ত জনবল, তা স্থানীয় হোক আর বিদেশি। এ ধরনের ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি শ্রমিকদের অভিবাসন উৎসাহিত করে আসছে। তাদের ৪৪ শতাংশই কথিত ‘থ্রিডি’ কাজে নিয়োজিত। এর লাভও দ্ব্যর্থহীন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মালয়েশিয়ায় স্বল্প দক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়লে তা দেশটির প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন ১.১ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এটা আবার প্রকারান্তরে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা দক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরি করে, যাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো খুব কম বিদেশি শ্রমিকই রয়েছে। কিন্তু বিশেষ করে মালয়েশিয়ার তেলনির্ভর অর্থনীতি যখন ধুঁকছে তখন অর্থনীতির বিদ্যা কাজে এলেও রাজনীতি সাধারণত আসে না। যেমন ইউরোপ ও আমেরিকায় সরকার এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যে বিদেশি শ্রমিকের ভূমিকা কমে গেছে। তারা মালয়েশিয়াকেও এমন পরামর্শই দিয়ে থাকে যে ‘থ্রিডি’ কাজের জন্য তাদের আর বিদেশি শ্রমিকদের মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন নেই। এর দায় অংশত দেয়া যেতে পারে মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের নীতির ওপর যা প্রকৃত শ্রমবাজারের বিবেচনা না রেখেই অভিবাসনকে উৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্তও তারই উদাহরণ। এ ধরনের নীতি কেবল বিদেশিদের প্রতি অহেতুক আতঙ্কই তৈরি না, এটা শ্রমবাজার ও মজুরি কাঠামোকে বদলে দেয়ারও সম্ভাবনা রাখে। মালয়েশিয়াসহ অভিবাসীনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য উন্নততর একটি ব্যবস্থা হতে পারে বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার অনুকূলে সার্বিকভাবে কোটা ব্যবস্থার বদল। এ প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো শিল্পের নিয়োগদাতা বিদেশি শ্রমিকদের নেয়ার জন্য আবেদন করবে। এ অনুমোদন স্বাভাবিকভাবেই ওইসব নিয়োগদাতাকে দেয়া হবে যার শ্রমিকের প্রয়োজন বেশি এবং সরকারও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা সমন্বয় করতে পারে। সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে এ ব্যবস্থা চূড়ান্ত বিচারে স্থানীয় শ্রমিকদের জন্য সহায়ক হয় এবং মজুরিও বাড়ে। এতে এটাও প্রদর্শিত হয়, কেন অভিবাসন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান অবস্থায় মনে হয় না মালয়েশিয়া এ পথ বেছে নেবে। কিন্তু দেশটির কর্মকর্তারা যদি বিদেশি শ্রমিক নীতিকে ন্যায্যতা দিতে চান, তাদের বরং বাজারকেই নিজেদের কথা বলার সুযোগ দেয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। একুশে সংবাদ ডট কম/ক/১১/০৫/১৬

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1