সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কেউ খবর রাখে না সুলতান কন্যা নীহার বালার

প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
নড়াইল প্রতিনিধি :  চিত্রা নদীর পাড়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছেন বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পালিত কন্যা নীহার বালা। প্রায় আশি বছরের বৃদ্ধা নীহার বালা জীবন যাপন করছেন রোগাক্রান্ত শরীরে। অ্যাজমা, হাঁপানী, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন মরণঘাতি রোগে আক্রান্ত তিনি। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্য ও ছবির ভিত্তিতে জানা যায়, একজন মানুষ যখন খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন তখন তার পিছনে থাকে অসংখ্য মানুষের অবদান। পৃথিবীতে যে স্বল্প সংখ্যক বাঙ্গালী জীবদ্দশায় খ্যাতির স্বর্ণশিখরে আরহণ করেছেন তার মধ্যে এসএম সুলতান অন্যতম। যিনি অসাধারন সব চিত্রকর্ম উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীকে। আর এসব চিত্রকর্মের পিছনে রয়েছেন মহিয়সী এক নারী। তার নাম নীহার বালা। সাদা শাড়ী, জীর্ণশীর্ণ দেহ, পোকায় খাওয়া দাঁত, দৃষ্টিহীন বড় বড় চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকাই নীহার বালার বর্তমান অবস্থা। থেমে গেছে আগের সেই চিৎকার, তীক্ষè কন্ঠের হাকডাক, সারাদিন গৃহস্থালী কাজে ব্যস্তময় ছুটে চলা। আকড়েঁ ধরে আছেন শুধু সুলতানের রেখে যাওয়া স্মৃতিটুকু। নীহার বালার সাথে আলাপকালে জানা যায় যে, মোটেও ভালো নেই তিনি। আছে খাওয়ার কষ্ট, ঔষধের কষ্ট, কাপড়ের কষ্ট। ভেঙ্গে পড়েছে শরীরটাও। এস এম সুলতানের পালিত ছেলে দুলালের আকস্মিকভাবে মৃত্যুর পর পরিবারে উপার্জনক্ষম কোন ব্যক্তি না থাকায় আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে নীহার বালার কষ্ট। নীহার বালার অভিযোগ, শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে মাসিক ভাতা হিসেবে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয় যা দিয়ে তার চিকিৎসা খরচও মেটেনা। সুলতানের ভবন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। নিজের নামে এক ইঞ্চি জমিও নেই নীহার বালার। শেষ বয়সে অনিয়মিত সামান্য সরকারী ভাতা তার শেষ সম্বল। নীহার বালা আরও বলেন, সুলতান ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের কোন অংশও তিনি পান না। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত সুলতান মেলার হাজারো দর্শনার্থী সুলতানকে জানার জন্য খোজ করেন তাকে। নীহার বালা সুলতান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যে দেন আগত সুলতানপ্রেমীদের। তারা যেন সুলতানের সংস্পর্শ পান। অকৃপন মনে, প্রচন্ড উচ্ছ্বাসে, স্মৃতি হাতড়ে অপরিসীম আগ্রহে সব জানান নীহারবালা। কিন্তু বুকে চাপা থাকে শুধু কষ্ট টুকু। নীহার বালা কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও অভিযোগ করেন, যখন নড়াইলে কোন ভিআইপি ভিজিটে আসেন তখন তাকে (নীহার বালা) সুলতানের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জানা যায়, বিদায়ী আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা’র নড়াইল সফরকালে সুলতানের বাড়িতে অবস্থানের সময়ও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সুলতানের সাথে নিহার বালা’র যে সকল ছবি ছিল সেগুলিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নীহার বালার এখন দিন কাটে নিতান্তই বেঁচে থাকার তাগিদে। সম্বল শুধুই স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিখ্যাত মুখ বাংলার সুলতান। সুলতানের জীবন যাপনে নিভৃত ছায়ার মতো সেবাময়ী হয়ে কাটিয়েছেন তিন দশক। প্রায় ৮০ ছুই ছুই এই নারী শুধুমাত্র সুলতানের কারনেই হয়েছেন ইতিহাসের অংশ। আজ সুলতান নেই। কিন্তু আছে সুলতানের স্মৃতিসহ রেখে যাওয়া চিত্রকর্ম। বিশ্ববরেণ্য এই চিত্রশিল্পীর স্মৃতি রক্ষার্থে সুলতান ফাউন্ডেশন হলেও কেউ খোঁজ রাখেন না নীহার বালার। সুলতান গবেষক, সুলতান প্রেমী ও সুলতান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কেউ কি জানতে চান কেন নীহার বালার পরণে আজ ছেড়া কাপড়? এসএম সুলতানের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা সুলতান ফাউন্ডেশনে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া সত্বেও নীহার বালার কেন এই নির্মম পরিনতি? শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টিতে, সুলতানের শেষ জীবনে আঁকা চিত্রকর্মগুলো তুলনামূলকভাবে বিশ্বমানের। এই সময়গুলোতে সুলতানের অবলম্বন ছিলেন নীহারবালা। এক সাক্ষাৎকারে সুলতান স্বীকার করেছিলেন, নীহারের সেবা যতেœই মূলত: তার বোহেমিয়াম জীবনের অবসান ঘটে। জীবনটা হয় কন্ট্রোলড। সুলতানের নিঃস্ব ও বাউল জীবনের অবসান হয়। পরবর্তীতে উন্নতি, বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এসবের পিছনে নীহারের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সুলতানের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ছবি আকার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তিনি। তাই হয়তো আমরা পেয়েছি অসংখ্য চিত্রকর্ম। যা সংরক্ষিত আছে। উল্লে¬খ্য, শিল্পী কোন ছবি সংরক্ষন করতেন না। আঁকা শেষ হলেই সে ছবি বিক্রি করে দিতেন। প্রাপ্ত তথ্যে ভিত্তিতে জানা যায়, ৭০ এর দশকে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর নীহার জড়িয়ে পড়েছিলেন সুলতানের ¯েœহময়ী ভালবাসার সাথে। অসুস্থ, বেকার, বোহেমিয়ান সুলতানকে আকড়ে ধরেছিলেন নিজের দুই শিশু কন্যাসহ। সুলতানও তাকে দিয়েছিলেন মেয়ের মর্যাদা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে না খেয়ে নীহার আগলে রেখেছিলেন সুলতানকে। ভয় পাননি সাহস নিয়ে মোকাবেলা করেছিলেন সব প্রতিকূলতাকে। আজ সুলতান নেই। নীহার অসহায় ভঙ্গীতে সাংবাদিক দেখলেই জানান-আমার খবর দিয়ে দরকারটা কি; তুমি সাংবাদিক? সাংবাদিককে আমি ভয় করি; কারন সাংবাদিকরা কিছুই করতে পারে না; যেটা আমি বললাম সেটা যদি তারা না লেখে তাহলে দেশবাসী জানবে কি করে সত্য ঘটনা, বলেই কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায় তার অসহায়ত্বের কথা। চিৎকার করে বলে ওঠেন, আমাকে দেখার কি কেউ নেই। তাই সুশীল সমাজের কাছে বর্তমান প্রজন্মের প্রশ্ন, সুলতানের কৃতিত্বের পেছনে কি নীহার বালা’র কোন অবদান নেই? এভাবেই কি ধুকে ধুকে শেষ হবে যাবে নীহার বালার বাকী জীবন?

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1