সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

প্রতিদিন কুসুমসহ ডিম খাওয়া কি ঠিক..?

প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
ডিমকে বলা হয়, ‘পাওয়ার হাউস অব নিউট্রিশন’। অর্থাৎ পুষ্টির শক্তির ঘর। প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম হলো আদর্শ প্রোটিন। এখানে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি শরীরের অনেক উপকারে আসে। ডিম শুধু আদর্শ প্রোটিনই নয়, বরং অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এটি হৃদরোগের বিরুদ্ধে অনেক কার্যকরী। একটি বড় ডিম থেকে অনেক নিউট্রিয়েন্টস (পুষ্টি উপাদান) পাওয়া যায়। যেমন : ভিটামিন বি৬, বি১২, রিবোফ্লাভিন, ফলিক এসিড, আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ প্রভৃতি। একট হার্ড বয়েলড বা সিদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। একটি ডিমের মধ্যে ৭০ থেকে ৭২ কিলোক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ডিমের প্রোটিন পুরোটাই শরীরের কাজে লাগে। এটি মাংসপেশির গঠনে সাহায্য করে। ডিম থেকে অনেক কম কার্বোহাইড্রেট আসে। তাই একটি সিদ্ধ ডিম কুসুমসহ প্রোটিনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করলে সেটি ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে। হৃদরোগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট। তবে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে শুধুমাত্র ডিমের কুসুম বাদ দেওয়া কি খুব কার্যকরী? বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল মাংস ও ডিম থেকে পেতে হয়। এটি টেসটোসটেরন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে; এটি মাংসপেশি গঠনে সহায়ক। বিজ্ঞানীদের মতে, খাবারের কোলেস্টেরল মূলত রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ানোর মূলে নয়, বরং সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাট থেকেই রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম বরং রক্তে খারাপ চর্বি বা এলডিএল কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল ও এলডিএলের মাত্রা ঠিক থাকে, তাদের জন্য দৈনিক কোলেস্টেরল গ্রহণের পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম। সাধারণত একটি ডিমের কুসুম থেকে ১৮৫ থেকে ১৮৭ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। তবে যাদের পরিবারে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে তাদের অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডিমের কুসুম খেতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় ডিমের কুসুম এবং এর উপকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর এর প্রয়োজনীয়তার কারণে আজকাল অনেকে ডিমকে কুসুমসহ খাচ্ছেন। এমনকি চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিদিন একটি কুসুমসহ ডিম খাওয়ার। তবে আসলে কি রোজ একটি কুসুমসহ ডিম আপনি খাবেন? ডিমের কুসুমের গুণ বিচার করলে, রোজ একটি ডিম কুসুমসহ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে না বরং এতে রক্তে কোলেস্টেরল কমবে, এটা সত্য। তবে যাদের রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বেশি বা যাদের বংশে এর ঝুঁকি রয়েছে, তারা যদি এই গবেষণার ফলাফল মেনে রোজ ডিমের কুসুম খান তবে কি খুব ক্ষতি? আসলে, গবেষণাগুলো শুধু ডিমের ওপর ভিত্তি করে এর একটি ফলাফল তুলে ধরেছে। তবে কেউ যদি ভাবেন, কুসুম হলো ওষুধের মতো রক্তে কোলেস্টেরল কমাবে বা কোলেস্টেরল বাড়বে না, তাদের জন্য বলছি, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ, সম্পৃক্ত চর্বি বর্জন, দৈনিক হাঁটা বা ব্যায়াম করা, ট্রান্সফ্যাট বর্জন, শাক সবজি গ্রহণ ইত্যাদি না মেনে চললে, যদি গবেষণা অনুযায়ী একটি ডিম কুসুমসহ রোজ খায়, তাদের হৃদরোগ বা কোলেস্টেলের ঝুঁকি বাড়বে। এটা ঠিক ডিমের কোলেস্টেরল আর কতটুকু, তবে ডিমকে বেশি তেল দিয়ে ভেজে খেলে বা তার সঙ্গে মাখন মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করে খেলে, সেটি অবশ্যই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াবে। একজন মানুষ যদি তার সারা দিনের খাবারের ফাস্টফুড গ্রহণ করে, কলিজা, মগজ, লাল মাংস, ভাজা মাছসহ ভাজা মাংস ইত্যাদি গ্রহণ করে, আর তার পাশাপাশি যদি একটি ডিম কুসুমসহ খায়, তবে সে তার হৃদরোগের ঝুঁকি বা কোলেস্টেরল বাড়ার ঝুঁকি কোনোভাবে কমাতে পারবে না। যেমন, কেউ যদি সকালে একটি ডিম কুসুমসহ খায়, তবে সে কুসুম থেকে পাবে ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। সে যদি সকালের নাশতায় একটি সিদ্ধ ডিম, একটি ঘিয়ে ভাজা পরোটা খায়, তবে ওই পরোটা থেকে পাবে ৪৮ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। দুপুরে যদি সে মুরগির মাংসের একটি কলিজা ও এক টুকরো মাংস খায়, তবে সে পাবে ২৮৮ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। বিকেলে যদি দুটো পুরি খায়, আর সঙ্গে এক কাপ কনডেন্সড মিল্কের চা খায়, তবে পাবে ৯৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। রাতে যদি সে গরুর মাংস (১০০ গ্রাম) খায়, তবে পাবে ৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। অর্থাৎ সারা দিনে সে কোলেস্টেরল গ্রহণ করল প্রায় ৭০৩ মিলিগ্রাম। তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? খাদ্যের অভ্যাস পরিবর্তন না করে যদি ডিমসহ অন্যান্য কোলেস্টেরল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তখনই বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডিম পরিমিত পরিমাণে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। অর্থাৎ সবাইকে এই পরিমাণ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। একটি খাবার অনেক স্বাস্থ্যকর হলেও সেটি অতিরিক্ত গ্রহণ উপকারের পাশাপাশি অপকারও করে থাকে। খাদ্য প্রস্তুত প্রণালির বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন : ডিম যদি মাখন দিয়ে ভেজে চিজ দিয়ে পরিবেশন করা হয়, তবে অবশ্যই তা রক্তের কোলেস্টেরলের ওপর প্রভাব ফেলবে। কিছু কিছু রান্না, যেমন, ডিম দিয়ে ফ্রেঞ্চটোস্ট, পুডিং, ডিমের হালুয়া ইত্যাদি তৈরিতে একের অধিক কুসুমসহ ব্যবহার করা হয়। এগুলো খেলে দৈনিক চাহিদার তুলনায় বেশি গ্রহণ কোলেস্টেরল গ্রহণ করা হয়। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত কোলেস্টরল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে রক্তে যদি কোলস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে এটি এথেরোসক্লোরোসিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে এটা ঠিক যে ডিমের কুসুম রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায় না। নিউট্রিশন জার্নাল জুলাই ২০১০ সালের মতে, সব গবেষণায় মোডারেশন ও পরিমাপের বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, একটি ডিম রোজ খেলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না, তবে ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল বেশি থাকলে সপ্তাহে এক থেকে তিনটির বেশি ডিম কুসুমসহ না খাওয়া ভালো। ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। একটি থেকে যেহেতু অনেক পাওয়া যায়, তাই কিডনির ঝুঁকি থাকলে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। যেই সব বিষয় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, সেই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন : ধূমপান ত্যাগ করা, দৈনিক হাঁটা, শাকসবজি ও ফল প্রতিদিন গ্রহণ করা। নিয়মিত চিকিৎসক দেখানো, আলাদা লবণ খাবারে না খাওয়া, মিষ্টি খাওয়া এড়িয়ে চলা। ইত্যাদি মেনে চললে এর সঙ্গে রোজ একটি ডিম কুসুমসহ খেলে হয়তো আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজ একটি ডিম অবশ্যই খাওয়া যাবে। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদাও এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। সারা দিনের খাবারে খাদ্য প্রস্তুতের বিষয়টি ও মেন্যু ইত্যাদিও বিবেচনা করতে হবে। যেমন : সকালে একটি ডিম খেয়ে আবার যদি বিকেলে একটি ডিম দিয়ে তৈরি নুডলস খায় তবে সেই অতিরিক্ত পরিমাণ থেকেই সমস্যা হতে পারে। তাই রান্নার মান উন্নত করে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে, ডিম আপনার জন্য উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1