সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পুরুষের যৌনতা বিষয়ে ভুল ধারণা ও প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৬:১৪ পিএম, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
একুশে সংবাদঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জটলা। ভেতরে হকারের চটকদার কথাবার্তা। নানা রকম অঙ্গভঙ্গি, হাতের খেলা আর মানুষের মনের কোণের আশঙ্কাকে পুঁজি করে বেশ বড় একটা জটলা তৈরি করেছে। বলতে হবে সফল হকার সে। কথাগুলো এমন করে বলছে সবাই তার কথা বিশ্বাস করছে। আর সে আবালবৃদ্ধবনিতা, মূর্খ-শিক্ষিত সবারই পকেট ফাঁকা করে চলেছে ‘ওষুধ’-এর বিনিময়ে। তবে যতটা না টাকার ক্ষতি করছে তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে শ্রোতাদের। ঢুকে যাচ্ছে তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা। সম্রাট (ছদ্ম নাম) মনে মনে ভাবে, ‘হকার তো বলল ১৮ মিনিট না হলে পুরুষই না, বাসে আসার সময় পাওয়া লিফলেটেও তো একই কথা লেখা ছিল। আর আমার তো মাত্র.......... তবে কি..?..?..!’ নানা প্রশ্ন আর আশঙ্কায় মাথাটা কেমন করে উঠে, আর ভাবতে পারে না। ধারণা পরিষ্কার করারও উপায় খুঁজে পায় না সে। ‘যৌন বিষয়ে কথা! এটি কি বলা যায়? আর বন্ধুবান্ধব? সেখানে নিজের দুর্বলতার কথা বলি কী করে?’ আবার বন্ধুবান্ধবের কাছে বললে আরো ভুল তথ্য পেতে পারে। কারণ তারাও হয়তো একইভাবে ভুল ধারণা বহন করছে। এই ভ্রান্ত ধারণা ও হীনমন্যতা পরবর্তীকালে তার ক্যারিয়ার ও সাংসারিক জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। অনেকে ‘কবিরাজের’ নানা ওষুধ খেয়ে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই যৌন বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমার কাছে কাউন্সেলিং নিতে আসা মানুষদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন বই পুস্তকের আলোকে মানুষের মধ্যে বেশির ভাগ সময়ে যেসব ভুল ধারণা দেখা যায় তার কিছু আলোচনা করলে অনেকেই উপকৃত হবে বলে আশা করছি। স্বপ্নদোষ নিয়ে ভুল ধারণা অনেকে মনে করেন, ছোটবেলায় স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণে তাঁর যৌনশক্তি বা স্বাস্থ্য হ্রাস পেয়েছে। অথবা একদিন স্বপ্নদোষে সাত-আটদিনের বীর্য বের হয়ে যায়। শরীরের সব শক্তি বের হয়ে যাচ্ছে। এর সবই ভুল ধারণা। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে স্বপ্নদোষ স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানী কিনসে এবং তাঁর সহকর্মীদের (১৯৪৮) রিপোর্টে দেখা যায়, ১৪ বছরের ছেলেদের শতকরা ২৫ ভাগ এবং সতের বছর বয়সীদের ৭৫ ভাগেরই স্বপ্নদোষ হয়। শতকরা ৮৩ ভাগ পুরুষেরই জীবনে কখনো না কখনো স্বপ্নদোষ হয়েছে। যৌবনপ্রাপ্তির পর থেকে বীর্য তৈরি হয়ে বীর্য থলিতে জমা হতে থাকে। কিন্তু শারীরবৃত্তীয় নিয়ম অনুযায়ী বীর্য দীর্ঘ দিন সঞ্চিত থাকা সম্ভব নয়। যদি কেউ হস্তমৈথুন বা যৌনমিলন না করে তবে একপর্যায়ে স্বপ্নদোষ নামক সুস্থ্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা দেহের বাইরে বের হয়ে যায়। হস্তমৈথুনে কি যৌনরোগ হয়? হস্তমৈথুন নিয়েও প্রচুর ভুল ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যেমন : হস্তমৈথুন করলে যৌন রোগ বা সমস্যা হয়,পরবর্তী জীবনে যৌন ক্ষমতা হারিয়ে যায়, লিঙ্গের আগা মোটা বা গোড়া চিকন হয়ে যায়, রগ ঢিলা হয়, হাতের ঘষায় লিঙ্গ চিকন হয়, চেহারা বসে যায়, চোখ গর্তে ঢুকে যায়, কিডনির সমস্যা হয়, ব্রেনের সমস্যা হয় ইত্যাদি- এ সবই ভুল ধারণা। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে উপরে উল্লিখিত কোনো ক্ষতিই হয় না। হস্তমৈথুন হচ্ছে বহুল প্রচলিত যৌন অভ্যাস যার মাধ্যমে পুরুষ বা নারী সহবাসের বিকল্প পন্থায় যৌনতৃপ্তি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন উপাত্ত থেকে দেখা যায় শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পুরুষ ও ৬০-৬৫ ভাগ মহিলাদের জীবনে হস্তমৈথুনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে জানা দরকার হস্তমৈথুনের হার ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় হস্তমৈথুন নিয়ে বেশি বেশি দুশ্চিন্তা করার কারণে চোখমুখে কিছুটা দুর্বলতা প্রকাশ পেতে পারে। বীর্যপাত,ধাতু নির্গত সম্পর্কিত ভুল ধারণা বীর্য নিয়েও প্রচুর ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন : আশি ফোটা রক্ত থেকে একফোটা বীর্য তৈরি হয়। রক্তের ফেনাই বীর্য। আবার অনেকে মনে করেন মাথা থেকে মেরুদণ্ড বেয়ে বীর্য হয়ে বের হয়। অথবা বীর্যই শক্তি; অতিরিক্ত বীর্য খরচ হলে রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মাথার ক্ষতি হয়, স্মৃতিশক্তি কমে যায়, বুদ্ধি কমে যায়, চোখের জ্যোতি কমে যায়। এতে মানুষ অক্ষম হয়ে যায়, বীর্য শেষ হয়ে গেলে মানুষ মারা যায়। তাই অনেকে সহবাসও কম করে। বীর্যের ঘাটতিকে অপূরণীয় মনে করে। পাতলা বীর্য একটি অসুখ, কম বীর্য মানে যৌনজীবনের জন্য একটি মারাত্মক দুঘর্টনা মনে করে অনেকে। উত্তেজনার সময় লিঙ্গে পানির মতো স্বচ্ছ আঠালো পদার্থ (ধাতু) আসার অর্থ হলো যৌন শক্তির অপচয়। হঠাৎ করে লিঙ্গ দাঁড়িয়ে গেলে বা যৌন উত্তেজক কিছু দেখলে লিঙ্গে রস বা পানির মতো তরল পদার্থ এলে তা ধ্বজভঙ্গের লক্ষণ- এ সবই ভুল ধারণা। সঠিক তথ্য হচ্ছে, রক্ত থেকে বীর্য তৈরি হয় না। শরীরের অন্যান্য সব কিছুর মতো বীর্য গৃহীত খাবার থেকেই আমাদের দেহ বীর্য তৈরি করে। বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু,পানি, মিউকাস এবং বহুসংখ্যক রাসায়নিক উপদান থাকে। যা বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে বীর্য থলিতে জমা হতে থাকে। বীর্যপাত হলেও এগুলো জমতে থাকবে। আবার না হলেও জমতে থাকবে। সহবাস বা হস্তমৈথুন না করলে অনেক সময় বীর্য স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বের হয়ে যাবে। তাই বীর্য শেষ হওয়ার কথাটি নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। একই ভাবে মাথা থেকে বের হয় বা মাথার ক্ষতিসহ অন্যান্য ক্ষতির বিষয়গুলোর সবই ভুল ধারণা। ঘন বীর্য, পাতলা বীর্য এসবের সাথে যৌন মিলনের সময়ের কোনো সম্পর্ক নেই। পানির মতো স্বচ্ছ পিচ্ছিল পদার্থকে প্রচলিত ভাষায় ধাতু বলে। এটি আসলে কউপার্স ফ্লুইড। যৌন উত্তেজনা হলে কউপার্স গ্রন্থি থেকে এই রস প্রস্রাবের নালি দিয়ে বের হতে থাকে। কোনো কোনো পুরুষের এই ক্ষরণ অনেক কম হওয়াতে তারা বিষয়টি খেয়াল করেন না। আবার অনেকের বেশি পরিমাণ বের হতে পারে। অনেক সময় প্রস্রাবের নালির মধ্যে কিছুটা জমা থাকলে তা প্রসাবের সাথে বের হয়ে আসে। ফলে প্রস্রাবের আগে বা পরে ধাতু দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকে। কিন্তু এই রস বের হওয়া খুবই স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া এবং ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। লিঙ্গের আকার আকৃতি অবস্থান নিয়ে ভুল ধারণা লিঙ্গের আকার নিয়ে অনেকের মধ্যে আশঙ্কা দেখা যায়। বিশেষত লিঙ্গ যখন নরম থাকে তখন লিঙ্গের আকার ছোট থাকা দেখে ভয় পায়। মনে করে লিঙ্গ বড় না হলে বাচ্চা হবে না, স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকবে না, লম্বা মানুষের লিঙ্গ বড় ও খাট মানুষের লিঙ্গ ছোট, লিঙ্গ বিভিন্ন কারণে ছোট হয়ে যেতে পারে, চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ মোটা, বড় ও শক্তিশালী করা যায়। লিঙ্গ এক দিকে বেকে থাকা, আগা মোটা গোড়া চিকন, অন্ডকোষ একটার চেয়ে অন্যটা সামান্য মোটা বা বেশি ঝুলে থাকা, লিঙ্গের রগ জেগে থাকা, রং কালো এগুলো অনেকে যৌন রোগের লক্ষণ মনে করে। এর সবই একদম ভুল ধারণা। সঠিক তথ্য হচ্ছে, স্বাভবিক অবস্থায় বা বীর্যপাতের পর লিঙ্গ ছোট থাকবে এটিই স্বাভাবিক। এ সময় এটিকে বড় রাখার কোনো প্রয়োজনই নেই। যৌন মিলনের সময় সেটি শক্ত হলেই যথেষ্ট। আবার শক্ত অবস্থায় লিঙ্গের আকার কতটুকু সেটি মুখ্য বিষয় নয় বরং উভয়ের সন্তুষ্টিই মুখ্য বিষয়। কেননা মেয়েদের যোনিপথ এমন ভাবে তৈরি থাকে যে আকার লিঙ্গই হোক না কেন তার সাথে অভিযোজন করে নেয়। যোনিপথের বাইরের দিকে প্রায় ১.৫ ইঞ্চি পরিমাণ অংশে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীলতা থাকে। ফলে কোনো পুরুষের উত্থিত লিঙ্গ যদি এতটুকু গভীরে সঞ্চালিত হতে পারে তবে তাই যথেষ্ট। এ ছাড়া যৌন সন্তুষ্টি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। মানুষের হাত-পা যে রকম লম্বা করা যায় না, ঠিক একই ভাবে মানুষের লিঙ্গও লম্বা করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা তার প্রয়োজনীয়তা নেই। তাই ‘ওষুধ বিক্রেতা’ বা হকারের প্ররোচনার ফাঁদে পা দেওয়াটা একেবারেই ঠিক নয়। নরম অবস্থায় লিঙ্গ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আকারের দেখা যেতে পারে। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্ডকোষ খুব ছোট বা খুব ঝুলে থাকা দেখা যেতে পারে— এ সবই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সঙ্গমের সময় নিয়ে ভুল ধারণা সময় নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত। ১৮ মিনিটের কম সহবাস করলে তাকে পুরুষ বলা চলে না। বেশি সময় নিয়ে সেক্স না করলে স্ত্রী থাকবে না অথবা পরকীয়া করবে। এ সবই ভুল ধারণা। প্রকৃত অর্থে যৌন মিলনের আদর্শ কোনো সময়সীমা নেই। স্বামী-স্ত্রী বা সঙ্গী-সঙ্গিনীর সন্তুষ্ট থাকাটাই বড় বিষয়। যৌন বিশেষজ্ঞদের মতে, শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত পুরুষ যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করানোর দুই মিনিটের মধ্যে বীর্যপাত করে এবং বেশির ভাগ মহিলা দুই মিনিটের মধ্যেই চরমপুলক পেতে পারে। আমি আগেই বলেছি যৌন সন্তুষ্টি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অনেক যুবক বিয়ে করতে ভয় পায়; ভাবে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে তারা মোটামুটি সুখী যৌনজীবন পেয়ে যায়। তারপরও যদি কারো সমস্যা থেকে যায় তখন সে অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারে। শারীরিক সমস্যা না পাওয়া গেলে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সহায়তা নিতে পারে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট কনজয়েন্ট সেক্স থেরাপির মাধ্যমে তাকে সহায়তা করতে পারেন। তবে মনে রাখা দরকার, বেশির ভাগ মানুষের সমস্যাগুলো মূলত ভুল ধারণা প্রসূত। যৌন বিষয়ে মনের কোনে আশঙ্কা জন্ম নিলে— এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সাথে একদম খোলামেলা আলোচনা করুন। দূর করুন ভ্রান্ত ধারণা, আর দূরে থাকুন প্রতারণার ফাঁদ থেকে। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।     একুশে সংবাদ ডট কম/ আলম গীর হােসেন/ ১৬.১০.২০১৫

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1