সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শ্রীপুরে গৃহবধূকে যৌতুক না দেওয়ায় হাতুড়িপেটা করেছেন: স্বামী ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ী

প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, অক্টোবর ২, ২০১৫
শ্রীপুর (গাজীপুর) সানিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ধনুয়া উত্তরপাড়া গ্রামে এক গৃহবধূকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে তার স্বামী ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী। উপর্যুপরি নির্যাতনে গৃহবধূ তার ডান চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। একই উপজেলার ভ্যান চালক আলিম উদ্দিনের কন্যা গৃহবধূ কুলসুম আক্তার (১৯) এখন তার বাবার বাড়িতে শয্যাশায়ী। দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার ওপর এরকম নির্যাতন চালানো হয়েছে। গৃহবধূর বাবা একই উপজেলার কাপাটিয়াপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দিন জানান, এক বছর আগে উত্তর ধনুয়া গ্রামের ইন্তাজ আলীর ছেলে পরাণ মিয়া (২৫) আমার মেয়ের পিছু লাগে। একদিন সে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার কন্যা কুলসুম আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব জানায়। ধনী পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমি এ বিয়েতে অসম্মতি জানাই। এ বিয়েতে রাজী না হলে পরাণ আমার বাড়িতেই আত্মহত্যা করার ঘোষণা দেয়। পরে তার বাবা এবং পরিবারের লোকদের খবর পাঠাই। তারাও আমার কন্যাকে বিয়ে করানোর প্রস্তাব দেয়। সবকিছু চিন্তা করে আমি রাজী হই। ৬ গন্ডা ভিটেমাটি বিক্রি করে নগদ দেড় লাখ টাকা ও প্রায় দুই লাখ টাকার আসবাবপত্রসহ মেয়েকে বিয়ে দিই। বিয়ের ৬ মাস পর স্বামী পরাণ মিয়া এবং তার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী তাদের ছেলের ব্যবসা করার কথা বলে দুই লাখ টাকা দাবী করে। আমার বাড়িতে বেড়াতে এসে মেয়ে আমার কাছে টাকা না চাওয়ায় আমার বাড়িতেই আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালায়। চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে আবারও শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে আমার কন্যাকে আহত করে। তাকে তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। এ ঘটনায় আমার কন্যা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এতে স্বামী পরাণ মিয়া, শ্বশুর ইন্তাজ আলী ও শ্বাশুড়ী সুফিয়া খাতুনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দায়েরের এক মাস পর দুই পক্ষের আইনজীবির মাধ্যমে ঘটনার সাময়িক আপসরফা করা হয়। সেই আপসনামায় যৌতুক না চাওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন স্বামী পরাণ মিয়া। কিন্তু আপসনামা কাগজেপত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাড়িতে নিয়ে কিছুদিন পরই আবার ওই দুই লাখ টাকার জন্য চলে শারিরীক নির্যাতন। মাঝে মধ্যে বাবার বাড়ি চড় থাপ্পরের খবর পৌঁছত। ঈদুল আযহার আগের দিন গৃহবধূ কুলসুমের বাবা আলিম উদ্দিন ঈদের দাওয়াত করতে কন্যার সাথে দেখা করতে যান। সেখানে মেয়ের খোঁজ করে পাননি। জানতে পারেন তার কন্যা স্বামীর সাথে অন্য বাড়ি বেড়াতে গেছে। এতে তার সন্দেহ হয়। কন্যাকে খোঁজ করতে এ বাড়ি ও বাড়ি যান। এরই ফাঁকে কন্যাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় একই উপজেলার এমসি বাজার তার আতœীয়ের বাড়িতে। মুঠোফোনে খবর পেয়ে সেখান থেকে কন্যাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ২৪ সেপ্টেম্বর ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন থাকার পর চোখে আঘাতজনিত সমস্যার কারণে তাকে ঢাকা অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অর্থাভাবে স্থানীয়ভাবেই চোখের চিকিৎসার জন্য পরামর্শ গ্রহণ করেন। বাবার বাড়িতে শয্যাশয়ী কুলসুম আক্তার জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল তিনটার দিকে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ওই টাকার জন্য লাঠি দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। তার স্বামী এসে প্রথমে জুতা দিয়ে বাম চোখে আঘাত করে। পরে হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে আহত করে। হত্যা করার কথা বলে তার স্বামী ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে রশি ও দা নিয়ে আসতে যায়। এ সুযোগে প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের স্ত্রী এসে ঘর থেকে আমাকে বের করে তাদের ঘরে নিয়ে যায়। আমার অবস্থার অবনিত হলে সেখান থেকে আমার স্বামী আমাকে আমাকে আমার খালুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস ছালাম জানান, প্রাথমিকভাবে গৃহবধূ এবং তার পরিবারের অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শ্বশুর ইন্তাজ আলী বলেন আমি কখনো বউমাকে মারিনি। আমর ছেলেকে তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে আলাদা করে দিয়েছি। আমর ছেলে যদি নির্যাতন করে থাকে তবে অবশ্যই তার বিচার হোকে। ঈদের আগের দিন থেকে আমার ছেলেও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।     একুশে সংবাদ ডটকম/এসএস/০২.১০.২০১৫

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1