সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ডাকছে সোমেশ্বরী ও বিরিশীরি

প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, আগস্ট ৮, ২০১৫
একুশে সংবাদ: কয়েকদিন টানা বৃষ্টি, আবার রোদ্দুরের দেখা মিলছে। এই পরিবেশটি আলস্য নিয়ে আসে। পথে বের হলেই ঝরঝর বৃষ্টি। বিরক্তি সৃষ্টি করে বটে, তবে এটাও ঠিক জানলার পাশে বসে ঝুরঝুর বৃষ্টি দেখতে বেশ ভালো লাগে। তবে কথা হচ্ছে এই বৃষ্টি বাদল দিনে ঘরে বসেই কী সময় পার করে দেবেন? যদি সেটা করতে না চান তাহলে বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন পাহাড় নদী গাছ-গাছালিঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত নেত্রকোনার দুর্গাপুর। এখানে পা ফেলতেই আপনার মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।   যারা প্রকৃতির এই বিপুল সৌন্দর্যের এক মুঠো সন্দেশ হিসেবে নিতে চান তাঁরা সেলফি আর স্ন্যাপ শটে মগ্ন হয়ে যাবেন-এতে কোনো ভুল নেই। পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে গারোদের দেশে যাওয়ার এখনই সময় কিন্তু সেটা জোর দিয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছি। থৈ থৈ পানিতে টইটম্বুর সোমেশ্বরী নদী, বর্ষায় ধোয়া নবীন সবুজ পাতাভরা বৃক্ষরাজি, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা মেঠোপথ আর বিরিশিরির আদিবাসী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আপনাকেই ডাকছে!   অনেকেরই হয় তো মনে আছে কবি রফিক আজাদ বিরিশিরির আদিবাসী সাংস্কৃতিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েক বছর। সরকারই তাকে ওখানে পাঠিয়েছিল। ঢাকা থেকে অনেক কবি সাহিত্যিক আদিবাসীদের সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্য ছুটে যেতেন কবি রফিক আজাদের কাছে। কিভাবে যাবেন এখানে সে ব্যাপারে একটু খুলে বলছি- ‘রাজধানীর কেউ যেতে চাইলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রথমে ময়মনসিংহ কিংবা নেত্রকোনার বাসে উঠে সোজা ময়মনসিংহ চলে আসবেন। পরে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনার রাস্তা ধরে শ্যামগঞ্জ মোড়ে এসে নামতে হবে।   এখান থেকে পূর্বধলা সড়ক দিয়ে দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি কালচারাল একাডেমিতে এসে উঠবেন। আগে থেকে যোযোগ করে এলে এখানে রাত কাটানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে অবস্থান করেই উপভোগ করতে পারবেন বিরিশিরি সংলগ্ন সোমেশ্বরী নদী, পাহাড় ও আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য।   এছাড়াও পর্যটকরা দুর্গাপুর উপজেলা ঘুরে উপভোগ করতে পারবেন, কমলা রানীর দীঘি, গারো পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি, সুসং দুর্গাপুরের জমিদারবাড়ি, টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী, রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড় ও নীল পানির লেক ইত্যাদি।   গারো পাহাড়ের পাদদেশের এই উপজেলায় আদিবাসীদেরই বেশি বসবাস। বাঙালিদের পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে সোমেশ্বরিমাথা উঁচু করে বেঁচে আছে বহুকাল ধরে। গারো পাহাড়ের এই আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে স্থাপিত হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমি। যেখানে তাঁরা তাঁদের সংস্কৃতিচর্চা করে। তাঁদের সংস্কৃতি চর্চায় অতিথিদের বরণ আনন্দ দেয় এখানে আসা পর্যটকদের।   একটু সুসাং দুর্গাপুরের বন্দনা করে নেই। নেত্রকোনা জেলার উত্তরপ্রান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশের জনপদ এটি। এখানে পাহাড়ি পথের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে টলটলে জলের সোমেশ্বরী আর দিগন্ত হারিয়েছে আকাশছোঁয়া সবুজ পাহাড়ে। ছোট্ট জায়গাটির পরতে পরতে জড়ানো অমলিন সৌন্দর্য।   আসার পথেই দেখা যাবে দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে। সুসাং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা, পূর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস।   এদের জীবনধারা যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি তাদের সংস্কৃতিও। এসব ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং চর্চার জন্যই ১৯৭৭ সালে সুসাং দুর্গাপুরে সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি । এখানে প্রায় সারা বছরই নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।   সোমেশ্বরীর আরেকটু বর্ণনা শুনুন তবে। দুর্গাপুরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে এ অসাধারণ সুন্দর নদীটি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে সৃষ্ট এ নদী মেঘালয়ের বাঘমারা বাজার হয়ে রানিখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।   লোকে বলেন, সোমেশ্বর পাঠক নামে এক সিদ্ধপুরুষ এ অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর থেকে নদীটি সোমেশ্বরী নাম লাভ করে। আহা, একেক ঋতুতে এ নদীর সৌন্দর্য একেক রকম! তবে সারা বছরই এর জল টলটলে স্বচ্ছ। বর্ষা মৌসুমে বেড়ে গেলেও শীতে সোমেশ্বরীর জল অনেকাংশেই কমে যায়।   আছে সুসাং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি। সুসং দুর্গাপুরের সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে জমিদার বাড়িটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের উত্তরসূরীরা এটি পুনঃনির্মাণ করেন। এ জমিদার বাড়িটি চারটি অংশে বিভক্ত। বড় বাড়ি, মেজো বাড়ি, আবু বাড়ি ও দুই আনি বাড়ি।   দূর্গাপুরে ইতিহাস ভীষণ জীয়ন্ত! এ উপজেলায় বিভিন্ন সময় মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল সেসব স্মৃতি এখনও অমলিন। ১৯৪৬-৫০ সালে মণিসিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত টংক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ।   সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর এগুলেই এম.কে.সি.এম হাই স্কুল এর পাশেই চোখে পড়বে এ স্মৃতিসৌধটি। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে সাত দিনব্যাপী মণি মেলা নামে লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়।   সুসং দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার বিরিশিরিহয়ে রিকশায় গেলে পাওয়া যাবে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীর নির্দশন। রানিখং থেকে বিজয়পুর পাহা ড়ে যাওয়ার পথে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণি স্মৃতিসৌধ। রাশিমণি স্মৃতিসৌধ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিজয়পুরে আছে চীনা মাটির পাহাড়। এখান থে কে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ জলাধারগুলো দেখতে চমৎকার।   সুসং দুর্গাপুর এলে অবশ্যই ঘুরে যাবেন ভবানীপুর, বাদামবাড়ি, ডাহাপাড়ার গারো পাহাড়ে। দুর্গাপুর বাজার থেকে আত্রাখালি নদী পার হয়ে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে দূর্গাপুরকে। আর দূর্গাপুর এখন আপনার অপেক্ষায়।     একুশে সংবাদ ডট কম/আলম গীর হােসনে/ ০৮.০৮.২০১৫

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1