সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাম্পার ফলনেও বিপাকে রাঙামাটির কলাচাষিরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩ পিএম, জুলাই ৭, ২০১৫
একুশে সংবাদ : রাঙামাটিতে এবার কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড়ে উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর এই অধিক ফলনই এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় কলাচাষিদের। উৎপাদিত কলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।     রাঙামাটির বরকল, নানিয়ারচর, লংগদু, জুরাছড়ি ও কাপ্তাইয়ের কলার খ্যাতি দেশজোড়া। প্রতিবছরই এসব জায়গার পাহাড়ে পাহাড়ে বাংলাকলা, চাঁপাকলা ও কাঁচকলার উৎপাদন বেশ ভালো হয়। এখানকার পাহাড়ি মাটি কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় সারা বছর এ এলাকায় কলার চাষ হয়ে থাকে। এই মৌসুমেও কলার উৎপাদন অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে ভালো। কিন্তু গত বছরের চেয়ে কলার দাম এবার অনেক কম। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশা জানিয়েছেন চাষিরা।     জুরাছড়ির কলাচাষি সুবির চাকমা, লংগদুর আবদুর রহিম এবং নানিয়ারচরের মৃণাল তঞ্চঙ্গ্যা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পরিমাণে কলা উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এ বছর জেলার বাইরের পাইকারের উপস্থিতি কম। তা ছাড়া, স্থানীয়ভাবে যেসব ব্যবসায়ী রয়েছেন তারা এ সময় আম, কাঁঠাল আর আনারস নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মার খাচ্ছে কলার বাজার। এ অবস্থায় বেশি ফলন হওয়ার পরও আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান, কলা সংরক্ষণের জন্য এখানে হিমাগার থাকলে বছরের যেকোনো সময় তা বিক্রি করা যেত। হিমাগারের অভাবে প্রতিবছরই এখানে কলাসহ অনেক মৌসুমি ফলমূল নষ্ট হচ্ছে। তাই হিমাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন কলাচাষি ও ব্যবসায়ীরা।     ব্যবসায়ী সেকান্দার হোসেন ও কালাচান চাকমা জানান, এ বছর শুধু কলা নয়, সব কয়টি ফলেরই বেশ ভালো ফলন হয়েছে। যেহেতু আম, আনারস, কাঁঠাল এসব ফল মৌসুম পার হলে আর পাওয়া যায় না, তাই এগুলোর বিকিকিনিতেই বেশি মনোযোগী তারা। কলা যেহেতু সারা বছরের ফল, সে কারণে মৌসুম পার হওয়ার পরই কলার দিকে ঝুঁকবে ব্যবসায়ীরা।     রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা জানান, পাহাড়ে এখন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে বাংলা ও চাঁপাকলার চাষ হচ্ছে। তাই পাহাড়ে কলার উৎপাদন বেড়েছে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে কলা চাষ হতো বলে প্রকৃতির ওপরই নির্ভর থাকতে হতো চাষিদের। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কৃষকরা এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। ফলে অল্প সময়ে ও কম খরচে অধিক ফলন হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু কলা সংরক্ষণে হিমাগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।     রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, পাহাড়ের উপত্যকায় বাংলা, চাঁপা ও কাঁচা- এ তিন জাতের কলারই বেশ ভালো উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পাহাড়ের প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন কলা উৎপাদিত হয়েছে। আর এসব কলা এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের প্রত্যন্ত জেলা-উপজেলায়ও যাচ্ছে। পাহাড়ের মাটি কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।     রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ ও হর্টিকালচার অধিদপ্তরের আহ্বায়ক জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা জানান, প্রতিবছর রাঙামাটিসহ পার্বত্যাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল উৎপন্ন হয়। এসব ফলের একটি অংশ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। কেউ যদি বেসরকারি পর্যায়েও এখানে ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।     কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাহাড়ের ঢালুতে প্রতিবছর কলার চাষ বাড়ছে। রাঙামাটিতে হিমাগার স্থাপন করে পাহাড়ে উৎপাদিত কলা সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এবং প্রচলিত বাংলা ও চাঁপাকলার পাশাপাশি উন্নত জাতের কলা চাষ করা গেলে পার্বত্য অঞ্চল কলা চাষের সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে, এমনটাই আশা কৃষিবিদদের। একুশে সংবাদ/এম/ইয়াসমিন/০৭/০৭/১৫

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1