সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

নেকব্লাস্ট আর শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত বোরো : ঘুম নেই কৃষকের চোখে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, মে ১২, ২০১৫
কুড়িগ্রাম থেকেঃ বোরো ধানের গাছে শীষ। শুরু হয়েছে ধান কাটা। এরই মধ্যে চোখে ঘুম নেই কুড়িগ্রাম জেলার শতাধিক কৃষকের। হঠাৎ করে নেকব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধানের গাছে শীষ থাকলেও শীষে নেই পরিপক্ক ধান। সবই চিটা হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, ঝড় আর শিলা বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকায় বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষ সময়ের এই ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার অনেক কৃষক। বোরো ধান ক্ষেতে শীষ বেরোনোর শুরুতে বাইকোলারিস অরাইজি ছত্রাক আক্রমণে নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। নেকব্লাস্ট রোগের প্রকোপ বাড়ায় বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের পরিমানও। প্রতিদিন নতুন নতুন ক্ষেত আক্রমণ করছে ছত্রাকটি। প্রথমে শীষের গোড়া পঁচে যায়। এতে করে উপরি অংশে রস পৌঁছাতে না পারায় দানা পুষ্ট হতে পারেনা। শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। চৈত্রের আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টিতে এ ছত্রাকের আক্রমণ হয় বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন। আগাম জাতের ব্রিধান-২৮ এর ক্ষেতে এ ভাইরাসের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ঔষুধ ছিটিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না কৃষক। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার দেড় শতাধিকেরও বেশি কৃষকের ৭৬ দশমিক ৫ হেক্টর জমি নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। নাগেশ্বরী ৪৬ হেক্টর জমি, ভূরুঙ্গামারীতে ৭ দশমিক ৫ হেক্টর জমি, চিলমারী ৭ হেক্টর, উলিপুরে ৬ হেক্টর, সদরে রয়েছে ৫হেক্টর, ফুলবাড়িতে ৩ হেক্টর, রাজাহাট উপজেলায় ২ হেক্টর বোরো ফসল নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও ১ হাজার ২৪ হেক্টর বোরো ফসল কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাগেশ্বরীতে ১১ হাজার ৭ শ ২৫ জন কৃষকের ৯ শ ৭৯ হেক্টর এবং রৌমারীতে ২ হাজার ৬শ জন কৃষকের ৪৫ হেক্টর ধান ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের কৃষক রাজন, বামনডাঙ্গা তেলেয়ানিপাড়ের কৃষক মোস্তফা, পৌর এলাকার মালভাঙ্গার কৃষক ছায়েদ আলী বলেন, এর আগে এ ধরনের রোগ দেখা যায়নি তেমন। হঠাৎ করে শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে শীষ আছে কিন্তু কোন ফল নেই। কৃষক আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ১ একর জমিতে ব্রিধান-২৮ চাষ করেছি। পুরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে বিঘায় ১৫ থেকে ১৭ মণ ধান পেতাম সেখানে ধান পাইছি মাত্র ১০ কেজি। যা খাওয়ার বা বিক্রি করার মতো নয়। এত খরচ করে ধান তুলতে না পেরে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ধানের ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, ধানের শীষের গোড়া পচে শুকে পাকার মত হয়ে গেছে। কোন প্রক্রিয়াতে কমছে না নেকব্লাস্ট রোগের আক্রমণ। বিভিন্ন কোম্পানির ঔষুধ ছিটিয়েও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত ক্ষেতে ধানের চেয়ে চিটার পরিমান বেশি হচ্ছে। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ না ওঠায় লোকসানের বোঝা চেপে বসেছে তাদের ঘাড়ে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ভবিষ্যতে জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এদিকে আবার কৃষকের বাঁধ সেজেছে বৈশাখী ঝড় আর শিলাবৃষ্টি। জেলার বেশ কিছু এলাকায় পাকা বোরো ধান ঝড়ে পড়ে গেছে। ঝড়ের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আগাম জাতের ব্রিধান-২৮সহ উপশি, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ধান। অনেক জায়গায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ঝরে গেছে। কয়েক দিনের ঝড় আর শিলা বৃষ্টির ফলে ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষকের আধাপাকা ও পাকা ধানের শীষে ধান নেই। নিম্নাঞ্চলে কাটার উপক্রম হয়েছে যেসব ধান সেগুলোও পানির নিচে ডুবে গেছে। এখনও বৃষ্টির শঙ্কা কাটেনি কৃষকের মাঝে। জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জানান, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি আকস্মিক ঝড়- বৃষ্টির সময়ে ক্ষেতে বাইকোলারিস অরাইজি ছত্রাকের কারণে নেকব্লাস্ট রোগের সূত্রপাত হয়। চলতি মৌসুমে বোরো উপশি, হাইব্রিড, স্থানীয়সহ প্রায় ১৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির এ ছত্রাক প্রতিরোধক ওষুধ রয়েছে। সেগুলো নিয়মমতো প্রয়োগ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও আগাম বৃষ্টিপাতের ফলে নেকব্লাষ্টের আক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে জানান তিনি। এতে করে জেলার খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা।

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1