সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চলনবিলে আবার মহাসড়ক

প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, মে ৪, ২০১৫
একুশেসংবাদ :   ‘বর্ষার সুময় চলনবিলির ঢেউ উঠলি কি এই রাস্তাডা থাকপিনি? কোনেকর তা কোনে লিয়ে যাবিনি!’ হান্ডিয়ালের দরাপপুর গ্রামের বৃদ্ধ রহমত সরকার যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন পাশ থেকে আব্দুল কাদের বলে উঠলেন, ‘চাচা কী যে কও! সে বর্ষা কি আর এখন হয়? সেতো হইচিল ৮৮ সালে আর ৯৮ সালে। সব ভাঙেচুড়ে ডুব্যায়ে দিচিল। তারপর আর বর্ষা কই?’ কাদের একটু থেমে পুনরায় বলতে শুরু করলেন, ‘বিশাল উঁচে করে রাস্তা হচ্ছে। বড়বড় বিরিজ। ভাঙিবি ক্যা চাচা? এট্টু ফ্যাটেফুটে যাবের পারে। ইডাতো তোমার ওই বনপাড়া-হাটিকুমরুল রাস্তার মতোই মুহাসড়ক বানাচে। বুজবের পারতিচেও না।’ গত ২৭ এপ্রিল হান্ডিয়াল মহাদেব মন্দির দেখতে যাবার পথে বওশা ঘাটে গুমানির উপর মস্তবড় ব্রিজ পাড় হলাম। হান্ডিয়াল পাওয়ার আগে আরেকটা বিশাল ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। ব্রিজের কাছে এক বটতলায় থামতেই দুজনের কথোপকথন কানে এলো। তখন ভীষণ রোদ। সময়টা মধ্য দুপুর। মহাসড়কের কাজ চলছে। শ্রমিকেরা সড়কের ঢালে সিমেন্টের ব্লক পাইলিং করছে। বড়বড় সিমেন্টের ব্লক সড়কের পেটে সাজিয়ে রাখছে তারা। অদূরেই বাঁধভাঙা জায়গায়  উঁচু করে মাথা তুলেছে নতুন আরেকটি সেতু। সড়কের উপরে মোরগ গাঁদলের ঝাড় দেখতে দেখতে রোদ মাথায় নিয়েই ব্রিজটির দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম, উপরে ঢালাই হয়ে গেছে। সাটারিং খোলা এখনো হয়নি। ব্রিজের নিচের পানি পাম্প মেশিন দিয়ে সেচে পাশে জলায় ফেলা হচ্ছে সেতুর উইং ওয়ালের কাজ করার জন্য। কথা হলো নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে। তাদের মুখ থেকেই জানলাম, কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ আছে। সামনে বর্ষা। যদিও এখনো অনেক কাজ বাকি। সড়ক চালু হতে আরও অনেক সময় লাগবে।index ওদিকে চাটমোহরের বওশা সেতুর কাজ প্রায় শেষ। সংযোগ সড়কের কাজ এখনও চলছে। পাশাপাশি মান্নাননগর থেকে হান্ডিয়ালের সংযোগ সড়কের কাজও দ্রুত হচ্ছে। কাজের উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং যোগাযোগ মন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেল, পাবনার টেবুনিয়া থেকে চাটমোহর হান্ডিয়াল হয়ে চলনবিলের একেবারে পেটের মাঝ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে মহাসড়ক। ৫০ কি.মি. সড়কটি সংযুক্ত হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর সংযোগ সড়কে। অর্থাৎ বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মান্নাননগর গিয়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, সড়কটি চালু হলে, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার যানবাহন বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়ক দিয়ে ঘুরে না গিয়ে, এই সড়ক দিয়ে ঢাকা চলাচল করবে। এতে প্রায় ৫৫ কি.মি. পথ সংক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু বিলের মাঝ দিয়ে সড়ক তৈরি করতে সময় বেশি লাগছে। নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনসহ রয়েছে নানা সমস্যা। তবে কর্তৃপক্ষ আশা করছে আগামী বছর এই পথে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত হবে। সে হিসেবেই এখন কাজ চলছে। হান্ডিয়াল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল করিম মাষ্টার বলেন, ‘সড়কটি চালু হলে, হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, গুনাইগাছা ইউনিয়ন তিনটি মহাসড়কের আওতায় চলে আসবে। সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জীবনে গতি সঞ্চারিত হবে। ঘটবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন।’ স্থানীয় বাসিন্দা মমিন মুজিবুল হক টুটুল সমাজী বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রকৃতপক্ষেই দৃশ্যমান উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমরা তো কোনোদিন ভাবিনি চলনবিলের মাঝ দিয়ে এভাবে আরেকটি মহাসড়ক তৈরি হবে। আমাদের এই ভাবনা এখন বাস্তব রূপ পেয়েছে।’ বড়াল নদী ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এমএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা এলাকার ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে সব কিছু সমর্থন করি। কিন্তু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে কিছু করা হোক আমরা তা চাই না। যে কারণে চলনবিলের ক্ষতি হোক তা চাচ্ছি না। মানুষকে বিষয়টি বুঝিয়ে এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করছি।’
একুশেসংবাদ.ডটকম/আর কে/০৪.০৫.২০১৫
 

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1