সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পদ্ধতিতে গলদ, এখনো অসনাক্ত ১০৩ লাশ

প্রকাশিত: ০৮:১৭ এএম, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
ঢাকা: দেশের ইতিহাসের সব থেকে বড় ভবনধস রানা প্লাজা ট্রাজেডি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া সেই মহাবিপর্যয়ে প্রাণ হারান এক হাজার ১৩৫ জন হতভাগ্য মানুষ। এরপর একে একে দুইটি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিচয় মেলেনি ১০৩টি মৃতদেহের (লাশ)। লাশ সনাক্তের পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণই এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একুশে সংবাদের কাছে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন খোদ ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির (এনএফডিপিএল) ল্যাবপ্রধান অধ্যাপক শরিফ আক্তারুজ্জামান। জানতে চাইলে শরিফ আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর মৃতদেহ সনাক্ত করার ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। সব থেকে কম মানসম্পন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। মৃতদেহ রাখার স্থানের অভাব ও স্বজনদের চাপের কারণেও এটি হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশে এ ধরণের বিপর্যয় ঘটলে বিপর্যয়স্থলের পাশেই অস্থায়ী একটি মর্গ তৈরি করা হয়ে থাকে। যেখান থেকে মৃতদেহ ও মৃতদেহের দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দেখা গেছে, স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কাপড় বা সামান্য কিছু নমুনা দেখে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে এমনও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে যে, নিজের স্বজন মনে করে অনেকে অন্যের মৃতদেহ নিয়ে গেছেন। সেই সময় মৃহদেহের নমুনা হিসেবে সামন্য একটি দাঁত ও দাবিদার স্বজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রাখলে  এখন আর কোনো মৃতদেহ অসনাক্ত থাকতো না। এমনকি এ নমুনা সংগ্রহ করতে তেমন অর্থও ব্যয় হতো না। এর জন্য প্রয়োজন ছিলো শুধু মানসিকতার।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে এনএফডিপিএলে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার জন্য ৩২২টি নমুনা (মৃতদেহ অথবা দেহাবশেষ) পাঠানো হয়। এদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ৫৪৭টি পরিবারের ৫৬০ জনের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এরপর চার দফা পরীক্ষা করে ২০৮টি মৃতদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। এর জন্য সরকারের তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। অবশ্য মৃহদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সরকার থেকে এনএফডিপিএলকে ৫০ লাখ টাকার তহবিল দেওয়া হয়। ডিএনএ’র একটি নমুনা পরীক্ষা করতে সরকারিভাবে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। আর বেসরকারিভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করতে গেলে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। জানায় সূত্রটি। সূত্রটি আরও জানায়, ডিএনএ পরীক্ষা ও মৃহদেহ সনাক্তের বিষয়ে এনএফডিপিএল থেকে চার দফায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়ায়ী, প্রথম দফায় ৫৪৮ জন স্বজনের দেওয়া নমুনার মাধ্যমে ১৫৭টি মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় সনাক্ত হয় ৪২টি, তৃতীয় দফায় ৭টি এবং চতুর্থ ও শেষ পরীক্ষায় ২টি মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়। এই দুই জনের মধ্যে রয়েছেন ‍দিনাজপুরের ভূবনচন্দ্র রায়ের ছেলে সুশান্ত ও নওগাঁর সোহরাব আলীল মেয়ে বিউটি আরা। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিজেদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করে এনএফডিপিএলে রক্ত দেওয়া ৩৫২ জন তাদের স্বজনের খোঁজ পাননি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনএফডিপিএল’র ল্যাবপ্রধান বলেন, যে ৩৫২ জন নিজেদের স্বজনের খোঁজ পাননি তাদের কেউ কেউ হয়তো অর্থের লোভে স্বজন হারানোর মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তবে এদের সবাই তো আর মিথ্যা তথ্য দেননি। এর অর্থ হলো অনেকেই নিজেদের স্বজন খুঁজে পাননি। এর কারণ হলো দুর্ঘটনাস্থল থেকে যে মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়ে তা সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি। ওই সময় মৃতদেহ ও দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার উদ্দেশ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। আর একটি সূত্র জানায়, সরকারিভাবে ৩২২টি নমুনা আসার পর রানা প্লাজার দুর্ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আরও বেশকিছু হাড়ের খণ্ড এনএফডিপিএলকে দিয়েছে। কিন্তু এ হাড়গুলোর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে ডিএনএ পরীক্ষাবিহীন পড়ে আছে হাড়গুলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনএফডিপিএল’র ল্যাবপ্রধান শরিফ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কাছে ৫০ থেকে ৬০টি হাড়ের খণ্ড দিয়েছে। এগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ ‘সরকারি ভাবে কোন নির্দেশনা পেয়েছেন কি?’—এ-প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে হাড়গুলোর ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে পুলিশ যেহেতু আমাদের কাছে দিয়ে গেছে, আমরা এগুলো পরীক্ষার ব্যবস্থা করবো।’ ‘সরকারের নির্দেশনা ছাড়া সরকারিভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করা যায় কি?’ এ-প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এধরনের দুর্ঘটনার পর মৃতদেহ সনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই আসে।’ এদিকে ডিএনএ’র তথ্য সংরক্ষণের বিষয়ে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়া আইনের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার, ডিএনএ ল্যাবরেটরী কর্তৃক সম্পাদিত ডিএনএ প্রোফাইল সম্বলিত নিন্মবর্ণিত ইনডেক্সসমূহ সমন্বয়ে একটি জাতীয় ডিএনএ ডাটাবেইজ প্রতিষ্ঠা করিবে’। যথা- (ক) অপরাধস্থল ইনডেক্স, (খ) সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ইনডেক্স, (গ) অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ইনডেক্স এবং (ঘ) সরকার কর্তৃক সময় সময় নির্ধারিত অন্য কোন ইনডেক্স। তবে যথাযথভাবে এই আইন মেনে ডিএনএ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে না। সঠিকভাবে ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণ করা হলে অসনাক্ত মৃতদেহের সংখ্যা অনেক কমে আসবে বলে জানিয়েছেন এনএফডিপিএল’র এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফ আক্তরুজ্জামান বলেন, ‘নতুন পাশ হওয়ায় এখনো পুরোপুরিভাবে আইন মেনে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে এফবিআই থেকে আমরা কোডেক্স সফটওয়্যার এনেছি। এটির মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। কোডেক্স’র মাধ্যমে ৫০ মিলিয়ন তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।’

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1