সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বর্ষবরণের রঙিন উৎসবে মেতেছে চট্টগ্রামনগরী

প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, এপ্রিল ১৫, ২০১৫
একুশে সংবাদ : নববর্ষের নবআনন্দে জেগেছে বাঙালী। পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায় সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মেতেছে বাঙালী। পাহাড়, নদী আর সাগরের মিলনের জনপদ চট্টগ্রামও বৈশাখের রঙে রঙীন হয়ে উঠেছে। আশা আর আনন্দের মাঝে নিজেদের জীবনদোলা বিলিয়ে দিতে বর্ষ বরণে এক হয়েছে চট্টগ্রামবাসী। বছর ঘুরে আবারও পহেলা বৈশাখ এসেছে। পাড়ায় পাড়ায় যেন জেগেছে খুশির রোল। সেই খুশি ছড়িয়ে গেছে এই জনপদের শহর, বন্দরে। বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বৈশাখের রঙ মেখে রঙিন হতে চট্টগ্রাম শহরের রাস্তায় উৎসবের ধুম লেগেছে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের মিলনস্থল নগরীর ডিসি হিলে এবারও বসেছে বাঙালির মিলনমেলা। মঙ্গলবার ভোর থেকে শহরের সব পথ যেন মিশেছে এক মোহনায়। শাড়ির আঁচলে আলপনা এঁকে, পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় বর্ণিল হয়ে তরুণ, যুবক, কিশোর-কিশোরী, তরুণী, বৃদ্ধ ছুটছেন ডিসি হিলে। হাতে একতারা-দোতারা নিয়ে, কোমড়ে গামছা বেঁধে ফতুয়া গায়ে আসা শিশুদের ছোটাছুটিতে যেন মিলছে বৈশাখের জয়গান। সবুজ, শ্যামল ছায়াঘেরা প্রান্তরে চলছে বাঙালীর উন্মাতাল উৎসব। ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসব, সবার যোগে জয়যুক্ত হোক’ এ মন্ত্রে ভোর থেকে ডিসি হিলে শুরু হয়েছে বাঙালির জয়গান। প্রতিবছরের মত এবারও এ উৎসবের আয়োজক সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। ভোর ৬টায় ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের কোমল আশাবরী ও বৈরবী সুরে বংশীবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষ বরণের অনুষ্ঠানমালা। এরপর একে একে সংগীত ভবন, জয়ন্তী, ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, গুরুকুল সংগীত একাডেমিসহ আরও কয়েকটি সংগঠন সংগীত পরিবেশ করেন। ওডিসি এন্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, দি ফোক ডান্স স্কুল, নটরাজ নৃত্যাঙ্গণ একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনাও হয়েছে ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে। বোধন, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের বৃন্দ আবৃত্তির পাশাপাশি চলছে খ্যাতিমান শিল্পীদের একক পরিবেশনাও। চট্টগ্রামের প্রতিশ্রুতিশীল সব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীদের পরিবেশনা ধাপে ধাপে চলছে ডিসি হিলের মঞ্চে। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। মঞ্চে ‘আয়লো রে রঙ্গে ভরা বৈশাখ আমার আয়লো রে’ গান গেয়ে নেচে উঠেন একদল ক্ষুদে শিল্পী। তাদের সেই খুশির জোয়ারের ঢেউ আছরে পড়ে মঞ্চের সামনে। ডিসি হিলের পাদদেশ জুড়ে বসে থাকা হাজারো মানুষের কলতানে মুখরিত হয় পুরো প্রান্তর। আবার ‘বছর ঘুরে এলো রে আবার পহেলা বৈশাখ’ যখন সুর তোলে তখন ঢোলের বাদ্যে মুখরিত হয় আশপাশ। শুধু ডিসি হলের ভেতরে নয় বাইরের রাস্তায়ও উৎসবের কমতি নেই। হঠাৎ দলছুট তরুণ-তরুণীর‍া ঢোলবাদ্য বাজিয়ে গান গেয়ে শামিল হচ্ছে নিজেদের মত উৎসবে। মায়ের সঙ্গে হাত ধরে আসা ছোট্ট শিশুটি সুর তোলে ভুবুজেলাায়। একতারা বিক্রেতাও নিজের যন্ত্রে সুর তুলে ক্রেতা সম্মোহনের চেষ্টায় মত্ত। আর এর মাঝেই কেউ কেউ ব্যস্ত হাল আমলের ফ্যাশন মুঠোফোনে সেলফি তোলায়। সেন্টমেরিস স্কুলের শিক্ষিকা ইভা গোমেজ ডিসি হিলে এসেছেন দুই সন্তান অর্ক গোমেজ ও ট্রয় গোমেজকে নিয়ে। সঙ্গে স্বামী আছেন। ইভা গোমেজ বলেন, সারা বছর এই একটা দিনের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। সবাই মিলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামাকাপড় পরে বর্ষবরণের ‍উৎসবে আসব, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। তবে এর মাঝেও একটা বিষয় চাই, আমরা যেন একদিনের বাঙালি না হয়। মননে, চলনে বলনে আমরা যেন সবসময় বাঙালি থাকি। বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ফেসবুক একটিভিস্ট লিপি জামান এসেছেন স্বামীকে নিয়ে। তিনি বলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আমাদের উপর চেপে বসেছে। মুক্তচিন্তার মানুষদের একে একে খুন করা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখসহ বাঙালির যেসব উৎসব আছে সেগুলো সাড়ম্বরে পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রমাণ করতে হবে এটা অসাম্প্রদায়িক মানুষের দেশ, ধর্মান্ধ বর্বরদের দেশ নয়। চট্টগ্রাম আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত বলেন, পহেলা বৈশাখে পাচন, রসগোল্লা খাওয়া, গান-নাচ, বলিখেলা এসব আমাদের সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু পান্তা-ইলিশের নামে একধরনের অপসংস্কৃতি আমাদের উপর চেপে বসছে। শেকড়ের সংস্কৃতি যদি আমরা ভুলে যাই তাহলে এই আবহমান উৎসব একদিন হয়ত পথ হারাবে। সময় যত গড়াচ্ছে, ডিসি হিলের ভিড় বাড়ছে। বাবা-মায়ের হাত ধরে ছেলে-মেয়ে, বন্ধুর হাত ধরে বন্ধু, সহকর্মীরা উল্লাস নিয়ে কিংবা নতুন বর লজ্জারাঙা নববধূকে নিয়ে ছুটছে সেই সম্মিলনে। সেই পথচলা জানান দিচ্ছে-আজ দিন শুধুই বাঙালির, যতদিন বাঙালি বেঁচে থাকবে, ততদিন তার সংস্কৃতিও মাথা উঁচু করে থাকবে। শুধু ডিসি হিল নয়, নগরীর সিআরবি’র শিরিসতলা, অভয়মিত্র ঘাট, শিল্পকলা একাডেমি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ নগরীর অলিগলিতে, পাড়ায় পাড়ায় চলছে বৈশাখ বরণের নানা আয়োজন। নগরজুড়ে সরকারীভাবে কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শোভাযাত্রা, চিরায়ত গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন সংস্কৃতি, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচ, আবৃত্তি, জাদু প্রদর্শনী, বলিখেলা, গুণীজন সম্মাননা, মূকাভিনয়, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বর্ষবরণের জন্য বর্ণাঢ্য আয়োজন চলছে। যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদীসহ দেশ থেকে সকল অশুভ শক্তি দূর করার গড়ার প্রত্যয় নিয়ে চট্টগ্রামে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বের করেছেন বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। ডিসি হিলের বাইরে রাস্তায় বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে এবার কোন ধরনের বৈশাখী মেলা বসতে দেয়নি পুলিশ। তবে ডিসি হিলের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের খাবার, শিশুদের খেলনাসহ গ্রামীণ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এদিকে বর্ষবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। নগরীর দু’টি মূল উৎসব অঙ্গণ ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিসতলাকে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম তানভির আরাফাত বলেন, পুরো ডিসি হিল ঘিরে পুলিশ প্রহরা আছে। জনসমাগমের ভেতরেও সাদা পোশাকে পুলিশ, বিস্ফোরক নিস্ক্রিয়করণ দল এবং গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৫-০৪-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1