সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

''জনগণের ভালোবাসা আগেও পেয়েছি, আবারও পাব"

প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, মার্চ ১০, ২০১৫
একুশে সংবাদ : ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, পুরান ঢাকার মানুষ। কথা বলেন পুরান ঢাকার সুরে। এটা যে পাল্টাতে পারতেন না তা নয়, কিন্তু মায়ের ভাষাতেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য তার। ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত হাজী সেলিম সহজেই ঢাকার অভিজাত কোনো এলাকায় বাড়ি করে থাকতে পারতেন। কিন্তু পুরান ঢাকার মাটির গন্ধ, বাতাসের স্বাদ তার কাছে অনেক প্রিয়। ঢাকাবাসীর পাশে থেকেছেন বরাবর। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল ভোটে। আর বিরুদ্ধ পরিবেশে একবার হেরেছেন সামান্য ব্যবধানে, যদিও সে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন আছে তার। এবার ডিসিসি নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ থেকে মেয়র পদে লড়াইয়ে নামছেন। নিচ্ছেন প্রস্তুতি। সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে কেন এই নির্বাচনে নামছেন জানতে চাইলে সোজা সাপ্টা জবাব দেন, ‘ঢাকা সিটিতে নির্বাচিত কোনো নগরপিতা না থাকায় লোকজন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাটের এবড়ো-থেবড়ো অবস্থা। দেখে মনে হয় ‘মর্দ পায়ে হাঁটিয়া চলিল’। এই মর্দকে সঠিক রাস্তায় তুলতে কী ভাবছেন, কেনই বা এই লড়াইয়ে নেমেছেন, এসব বিষয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন আলোচিত এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ সংসদ সদস্য হয়েছেন। এখন মেয়র পদে নির্বাচনকে কেন জরুরি বলে মনে করছেন? আমি যুবক বয়স থেকেই এলাকাবাসীর সেবা করার চেষ্টা করেছি। ভালোবাসাও পেয়েছি তাদের। এই পরিধিটা এবার বাড়াতে চাই। ঢাকাতেই আমার জন্ম, বেড়ে উঠা, এর প্রতি আমার ভালোবাসা অন্য যে কারও চেয়ে বেশি বৈ কম হবে না। এই শহরটার জন্য কিছু একটা করতে চাই। এর বাইরে পুরান ঢাকাবাসীর জোর দাবিও আছে। এর জন্যই ঢাকা দক্ষিণ থেকে মেয়র পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকেও চাপ আছে নির্বাচন করার জন্য। নির্বাচন করতে হলে তো সংসদ সদস্য পদ ছাড়তে হবে। ছাড়ব, আমার কাছে পদ কোনো বড় ব্যাপার নয়। এই শহরে যে মানুষের পাশে থেকে বড় হয়েছি, তারা যেটা চাইবে তাই হবে। গত সংসদ নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি, কিন্তু আমি জানতাম জনগণের ভালোবাসা আমার সঙ্গে আছে। তারা চেয়েছে বলে ভোটে দাঁড়িয়েছি এবং তাদের ভালোবাসা পেয়েছি। এবারও তারাই মনে করছে পুরান ঢাকাকে নতুন করে গড়ে তুলতে আমাকে দরকার। তাদের আস্থা আর বিশ্বাসকে আমি কী করে দূরে ঠেলব? ঢাকার ব্যবস্থাপনার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিই কেন লাগবে? বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে। এই শহরকে রক্ষা করতে নির্বাচিত প্রতিনিধির বিকল্প নেই। কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের হয়ে কাজ করবে। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। পুরান ঢাকায় আধুনিক নগরের সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে। আছে নিরাপত্তার সমস্যা। এগুলোর সমাধানে কী চিন্তা করেছেন? আসলে ঢাকা বলতে এক সময় এই অংশটাকেই বোঝাত। কিন্তু এরপর ঢাকা বেড়েছে নতুন অঞ্চলে আর মর্যাদা এবং ঐতিহ্য হারিয়েছে পুরান ঢাকা। কিন্তু আমরা যারা ঢাকার আদি বাসিন্দা তাদের কাছে এখনো ঢাকা মানে এই অঞ্চলটাই। এখানকার মাটির টান আর কোথাও নেই। আমি চেষ্টা করব ঢাকার সেই আদি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। এলাকার গণ্যমান্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে কী কী করা যায় তা ঠিক করব। সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে এই অঞ্চলে আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করব। আর এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি অগিগলিতে আমি নিজের টাকায় সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা বসাব। সিসি ক্যামেরা কেন বসাবেন? আজ যদি টিএসসি কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় সিসি ক্যামেরা থাকত তাহলে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের সহজেই শনাক্ত করা যেত। গোটা এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা গেলে যে কোনো অপরাধীকে শনাক্ত করা সহজ হবে। এতে কেবল অপরাধীরা ভয় পাবে তা নয়, সাধারণ পথচারী যারা নিজেদেরকে নিরাপত্তাহীন ভাবছে, তাদের মনেও আত্মবিশ্বাস জন্মাবে। মেয়েরা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করবে। কেউ তাদেরকে ঘাটানোর সাহস করবে না। আপনার নির্বাচনী এলাকাতেও সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন, কী সুফল পেয়েছেন? পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার ও ইসলামপুরে এক বছরে ছয়টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি হয়েছে। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সেখানে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা নিজের টাকায় বসিয়েছি। এর পর আর তাঁতীবাজার ও ইসলামপুরে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি হয়নি। কেউ যদি জানে অপরাধ করলে ধরা পড়তে হবে তাহলে সেই পথে সে পা বাড়াতে সাহস পাবে না। মেয়র নির্বাচিত হলে আর কী করার পরিকল্পনা রয়েছে? রাজনীতিতে আসার পর থেকেই আমি পুরান ঢাকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এলাকাবাসীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এর সুফল এরই মধ্যে আপনারা দেখতে পেয়েছেন। আমার নির্বাচনী এলাকায় খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি আগের চেয়ে যে কমেছে সেটা আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বিন্দ্বীরাও অস্বীকার করবে না। মেয়র হতে পারলে এই চেষ্টা স্বভাবতই আরও ফলপ্রসূ হবে। কারণ তখন আমার ক্ষমতা এবং আইনি প্রভাব আরও বেশি থাকবে। আমি ঢাকাবাসীকে একটি নিরাপদ, সুন্দর বাসযোগ্য পরিবেশ দিতে চাই। পুরান ঢাকার প্রধান সমস্যার একটি বুড়িগঙ্গার দূষণ। পরিবেশ রক্ষায় এর আগেও আপনি সংসদে সোচ্চার ছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হলে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে কী? শিল্প-কারখানার বর্জ্য বা পয়ঃবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় এই দূষণ হচ্ছে। পাশাপাশি ঘরের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবকাঠামো না থাকায় এলাকাবাসীর কিছু করারও থাকে না। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। তা ছাড়া আইন থাকলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার প্রবণতা কমছে না। এই বিষয়ে সমাজের গণ্যমান্যদের নিয়ে এলাকায় এলাকায় কাজ করতে হবে। পাশাপাশি হাজারীবাগের ট্যানারি এখান থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সরিয়ে নিতে এলাকাবাসীকে নিয়ে চাপ বাড়াতে হবে। আমাদের সমি¥লিত চেষ্টায় বুড়িগঙ্গা ইনশাল্লাহ আগের প্রাণ ফিরে পাবে। ২০১২ সালে ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন... হতশ্রী পুরান ঢাকা আমাকে সব সময় ক্ষুব্ধ করে। ভাবি, এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। এই শহরকে পাল্টে দেওয়ার কথা বলে যারা আমার ভোট নিয়েছে, আমার মা, বাবা, ভাই, বোনদের ভোট নিয়েছে তাদের প্রায় সবাই ভোটের পর কাজ করতে পারেনি সেভাবে। আমি ছোটবেলা থেকেই কাছ থেকে দেখেছি, বুঝার চেষ্টা করেছি কী তাদের ভুল ছিল, কেন তারা আশানুযায়ী সফল হতে পারেনি। আর এই ভুলগুলো শুধরে পুরান ঢাকার কান্না থামানোর একটা জেদ আমার মনে কাজ করত সব সময়। রাজনীতিতে আসার পর, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের সাধ্যমতো এলাকার জন্য কাজ করেছি। কিন্তু গোটা এলাকায় তো আমার কাজ করার অধিকার ছিল না। মেয়র হতে পারলে সেটা পারব এই ভেবে ২০১২ সালে ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচন হয়নি, তাই বলে আমার স্বপ্ন কখনো থেমে যায়নি। নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন চলছে? এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি, প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি নির্বাচন কমিশন। তাই আইনগতভাবে আমি আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামতে পারি না। কিন্তু এলাকার মানুষের পাশে বরাবর যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি। ছোটবড় সবার সঙ্গে সম্পর্কটা ঝালাই করে নিচ্ছি। আমি যে ভোট করবই এই বিষয়টা তাদেরকে জানাতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। আমার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছি। এলাকাবাসীও সমর্থন করছেন আমার পরিকল্পনা। তাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করছে। তারা বলেছে, আমার পাশে থাকবে। আপনার নিজের দল আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। সাঈদ খোকন পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সমর্থন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের কারও মতামত নিয়ে তাকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা এখন আমার কাছে ছুটে এসেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও সঠিক প্রার্থী দিতে পারেনি দল। কিন্তু ভোটাররা তাদের মত জানিয়েছে। দলের তৃণমূলের আর আত্মত্যাগী নেতা-কর্মীরাও আমার পাশেও ছিল। এবারও তারা আমার সঙ্গে আছে। তাদের সমর্থন আর দাবি না থাকলে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়ানো হতো না আমার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন... দলের প্রতি আমার কোনো রাগ বা অনুরাগ নেই। দল একজনকেই সমর্থন দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হয়ত ভেবেছেন সাঈদ খোকনকে সমর্থন দিলে ভালো হবে। কোনো কারণে হয়ত তিনি মাঠের জনপ্রিয়তার বিষয়টি সেভাবে জানতে পারেননি। তবে আমি দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করলেও দলের প্রতি নিষ্ঠা, ভালোবাসা কমে যাবে এমনটি নয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই ভোট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দল অন্য একজনকে মনোনয়ন দেওয়ায় অন্য প্রতীকে ভোট করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগই আমার মূল ঠিকানা। ভোটে জয়ের পর আমি দল থেকে দূরে সরে যাইনি। বরং যারা আমার বিরুদ্ধে ভোট করেছে তাদেরকে আরও কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সংসদ নির্বাচনে যারা আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে তাদের অনেককেই এবার আমার পাশে পাচ্ছি।-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১০-০৩-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1