সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় ধস

প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, মার্চ ৩, ২০১৫
একুশে সংবাদ : দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। দেশব্যাপী চলা রাজনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি আর জানুয়ারিতে রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি মধ্যে সহিংসতার পর সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা কমেগেছে। অথচ ডিসেম্বর মাসজুড়ে যেভাবে ব্যাপক হারে পর্যটক আসা শুরু হয়েছিল শহরে, সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে করে বোটচালক সবাই একবাক্যে বলেছিলেন ‘এ বছর বাম্পার ব্যবসা হবে’! কিন্তু কে জানতো ভাগ্যদেবী তখন দূরে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাসছেন। পর্যটনের টিকেট কাউন্টারের গেট গত ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ৪ তারিখ পর্যন্ত রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স ব্যবসা করেছে ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। যা প্রতিষ্ঠানটির ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরুর পর পর্যন্ত একমাসে সর্বোচ্চ ব্যবসার রেকর্ড ! কিন্তু ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই ব্যবসা নেমে এসেছে মাত্র ২ লক্ষ টাকায়। রাঙামাটি পর্যটন করপোারেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা হতাশার সুরে জানালেন, ১ মাসে ৩৪ বছরের রেকর্ড ভাঙা যে ব্যবসা আমরা করলাম,তা দেখে আমার ভেবেছিলাম এই মৌসুমে আমাদের জন্য সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে। কিন্তু ৫ জানুয়ারি থেকে আমাদের চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই এই জন্য প্রধানত দায়ী করে তিনি জানান, আমাদের অন্তত ১০টি বড় বড় করপোরেট বুকিং বাতিল করতে হয়েছে, পুরো মাসে ১ লাখ টাকাও ব্যবসা হয়নি ! পর্যটনের গেটম্যান থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক, কারোই মুখেই হাসি নেই, নেই স্বাভাবিক আচরণও। মন্দা ব্যবসার প্রতিচ্ছবিই যেন তাদের চোখে মুখে। অথচ মাত্র মাস দেড়েক আগেই ঠিকই ছিল বিপরীত চিত্র। উপচে পড়া পর্যটক, টিকেট কাটায় হুড়োহুরিতে নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল নাÑ গেটম্যান,রেস্তোরার কর্মচারী,বোটঘাটের ম্যানেজার কারোই। অথচ এখন পুরো কমপ্লেক্স এর এপাড় থেকে ওপাড়ে হেঁটে কোন পর্যটকের দেখা মিলবে না, বোটঘাটেও নিঃসঙ্গ ঘাটের ম্যানেজার একাকি বসা, নেই কে নো বোটচালকও। ঘাটে বাধা সাড়ি সাড়ি বোট, শুধু নৌবিহারে যাওয়ার পর্যটকের দেখা নেই ! অথচ এ বছরই চালু হয়েছিল রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন এর নতুন আরেকটি মোটেল। বেড়েছিল আবাসিক সুবিধা। আগে যেখানে মাত্র ৩০টি রুম ছিল এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫তে,যদিও ২৫টি এখনো পুরো চালু করা যায়নি। এ বছর থেকেই আবাসিক বোর্ডারদের জন্য সকালে ফ্রি নাস্তা সার্ভিসও চালু করেছিল তারা। পর্যটনের ঝুলন্ত ব্রীজ পেরুলেই বোটঘাট। এখানে ৪৮ জন মালিকের ৯৩ টি ইঞ্জিনবোট আছে পর্যটকদের কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার এবং জলপথের দর্শনীয় স্থান সুভলং,পেদাতিংতিং, টুকটুক, জুমঘর,চাংপাং, বালুখালি ভ্রমনের জন্য। বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টাতে এই বোটগুলোর অবসরের কোন ফুসরত থাকেনা। অথচ এখন এসব বোটের চালকদের দুঃসহ অবস্থা। বোট মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও সহসভাপতি নুরুল মোস্তফা জানালেন, আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে, বছরের নয়মাস আমরা কোনোরকমে বেঁচে থাকি, এই তিনমাসই মূলতঃ ব্যবসা হয়, কিন্তু এখন কে নো পর্যটকের দেখা নেই। আমাদের বোটচালকদের ঘরে ভাতের চালও নেই, দেনা করে করে আমরা নিঃস্ব, এইভাবে আর কতদিন? মোটেলের বাইরে দেখা মিলল জার্মানির হেনওভার থেকে আসা দুই বিদেশ পর্যটক ভ্যানিলানা ও স্টেফি। শূন্য পর্যটন দেখে হতাশ তারাও। সাংবাদিক পরিচয় জানাতেই জানালেন, আমরা কিছুক্ষণ আগেই রাঙামাটি এসেছি, যদিও আমাদের গাড়ীতে টুরিস্ট লেখা, তবুও সারাপথ ভয়ে ছিলাম, যদি গাড়ীতে আক্রমণ হয়, ভয়ে আমরা রাতে কেউ ঘুমাইনি গাড়িতে। এমন উত্তর দিতে না দিতেই তোমাদের এখানে নাকি গাড়িতে যাত্রীসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, এমনকি পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা নাকি পুলিশের গাড়িও পুড়িয়ে দেয় এমন সব প্রশ্ন করে বসেন তারা! এভাবে তোমাদের দেশের তো কোনো উন্নতি হবে না। বিদেশ এই দুই পর্যটক পরামর্শ দিলেন, তোমরা এসব বন্ধ কর, ট্যুরিজমকে ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও স্থিতিশীল করতে চাইলে এসব বন্ধ করতেই হবে তোমাদের। শুধু পর্যটন কমপ্লেক্সই নয়, রাঙামাটি শহরের প্রায় অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেল-কটেজ-গেস্টহাউজের মালিক, কাপ্তাই হ্রদে ট্যুারিস্ট নির্ভর প্রায় দুইশত ইঞ্জিন বোট চালক,শহরের প্রায় অর্ধশতাধিক টেক্সটাইল বিপণির মালিক ও বিক্রয়কর্মীরা আর পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন অমানবিক সংকটে পড়েছেন। এভাবে আরো কিছুদিন চললে ব্যবসা লাটে উঠবে বলেও জানালেন তারা। রাঙামাটি টেক্সটাইল মালিক সমিতির সভাপতি জহিরউদ্দিনও জানালেন, বছরের এই সময়টাতেই আমাদের ভালো ব্যবসা হয়, কিন্তু এবার আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়,কর্মচারীদের বেতন দেওয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো দিন তো এক টাকাও বিক্রি হয় না! এভাবে চললে আমরা শেষ হয়ে যাব। রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স এর ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানালেন, ট্যুরিজম একটি বহুমাত্রিক শিল্প। এর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় জড়িয়ে আছে। আপনার সার্বিক পরিস্থিতি যদি অনুকূলে না থাকে তাহলে পর্যটক আসবে না। আমরা যদি আমাদের দেশে এই শিল্পের বিকাশ বা উন্নয়ন চাই, সত্যিকারের ব্যবসা চাই তাহলে অবশ্যই ক্ষতিকর রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৩-০৩-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1