সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

জলশূন্য তিস্তা, সীমাহীন দুর্ভোগে জেলেরা

প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
একুশে সংবাদ : ভারত-বাংলাদেশ পানিচুক্তি না হওয়ার কারণে এক সময়ের প্রমত্তা তিস্তা আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। চলতি শুকনো মৌসুমে নদীতে নেই স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ধূ-ধূ বালুচর বুকে।   ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে শুধুই বালুচর। তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী ১০ হাজার জেলের চলছে চরম দুর্দিন। এবারের বোরোতে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তাতে পানি দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার জেলে ও কৃষক পরিবার আজ হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে বিগত ২০০৩ সাল থেকে শুকনো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ বছর ১৫ হাজার ৩শ ৭১ হেক্টরে, ০৪ সালে সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টরে, ০৫ সালে ২০ হাজার ৩শ ২০ হেক্টরে, ০৬ সালে ৩৭ হাজার একশ ১০ হেক্টরে, ০৭ সালে ৪১ হাজার পাঁচশ ৭৩ হেক্টরে, ০৮ সালে ৩৫ হাজার ২শ ২০ হেক্টরে, ০৯ সালে ৩৭ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টরে, ১০ সালে ৩৯ হাজার ৩শ ৭১ হেক্টরে, ১১ সালে ৫১ হাজার ৫শ ১০ হেক্টরে, ১২ সালে ৫০ হাজার ৩শ ২০ হেক্টরে, ১৩ সালে ৪০ হাজার ৩শ ৪২ হেক্টরে, ১৪ সালে ২২ হাজার একশ ১১ হেক্টরে সেচ দেয়া হয়। চলতি মৌসুমে ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তিস্তায় পানি প্রবাহ না থাকায় এবারে কৃষকরা ডিমলা, জলঢাকা ও নীলফামারী সদর উপজেলায় বোরো আবাদ করেছে মাত্র ৫ হাজার ৩শ ৩৯ হেক্টরে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখেও সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের উৎস মুখে এক ফোটা পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান খাল, দিনাজপুর ও রংপুর খালের মাধ্যমে দু’দফায় বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে পারলেও তিস্তায় পানি থাকায় সেচ কার্যক্রাম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রোপিত বোরো চারা বাঁচাতে কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে সেচ পাম্প বসিয়ে ক্ষেতে সেচ দিচ্ছে।   উত্তর দেশীবাঈ গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান, পূর্ব কাঁঠালী গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী, একই গ্রামের কৃষক আবুয়াল হোসেন, দুন্দিবাড়ি গ্রামের কৃষক বছির উদ্দিনসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ক্যানেলের পানির আশায় রোয়া নাগাইনো, অ্যালা ক্যানেলোত পানি নাই। খালি দুইবার পানি দিয়া বন্দো করি দিছে। জমি ফাটি চৌচির হয়া গেইছে। রোপাও মরি যায়ছে। বাইধ্য হয়া স্যালো বসেয়া ক্ষেতত পানি দেইছি। ক্যানেলের পানি দিয়া আবাদ করিলে একরে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। আবাদ করি হানে ভালই লাভ হয়। আর স্যালো দিয়া আবাদ করিলে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে লোকসান হয়। শ্যাষ পর্যন্ত যুদুক ক্যানলের পানি না পাই, তাইলে হামাক বউ-ছাওয়া নিয়া না খ্যায়া উপাস থাকি মরির নাইগবে। তিস্তা নদীপাড়ে দেখা মেলে জেলে আমিনুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, ছানোয়ার হোসেন, কান্দু মিয়াসহ আরও অনেকের। তারা বলেন, তিস্তাৎ পানি নাই, হামার পেটোত ভাতও নাই। যখন নদীত পানি আছিল, তখন পেত্যকদিন ৭-৮শ টাকার মাছ পাওয়া গেছিল। এখন পানিও নাই, মাছও নাই। পেরায় ১০ হাজার জালিয়া এই তিস্তা নদীত মাছ ধরি সংসার চালায়। আইজ সোগায় বেকার। সারাদিন জাল ফেলেয়া ১০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। হামার সংসার আইজ অচল হয়া গেইছে। ছাওয়া-পোয়ার পড়ানেকাও বন্দ হয়া গেইছে। সারাদিন পর একবেলার ভাতও জুটে না।   ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, চলতি বোরো মৌসুমে তিস্তায় কোনো পানি প্রবাহ নেই। ব্যারেজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখেও প্রধান খালে এক ফোঁটা পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্প কমান্ড এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, নীলফামারী সদর, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর রংপুরের গঙ্গাচড়া, রংপুর সদর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ এবং দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্ব্বতীপুর উপজেলা। তিস্তায় কিছু পানি প্রবাহ থাকায় বিগত ২০০৩ থেকে ১৩ সাল পর্যন্ত কমান্ড এলাকার ১২ উপজেলায় সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছে। গত বছর থেকে তিস্তা পানি প্রবাহ না থাকায় সেচ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যারাজের সবকটি গেট বন্ধ রেখেও প্রধান খালে এক ফোঁটা পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে এবার তিস্তার বুকে বালু ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি আরও জানান, ক্যানেলের পানিতে প্রতিমন ধান ফলাতে খরচ হয় মাত্র তিনশ টাকা। আর স্যালো দিয়ে ওই পরিমাণ ধান আবাদ করতে খরচ হয় আটশ টাকা। এতে কৃষককে গুণতে হয় লোকসান। এছাড়াও তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১০ হাজার জেলে। নদীতে পানি না থাকায় জাল ফেলেও সারাদিন ১০ টাকার মাছও পাচ্ছেনা জেলেরা। তারা পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-০২-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1