সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পেট্রলবোমায় দগ্ধ তাজুল, উপার্জনের হাতে পোড়া ক্ষত

প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
একুশে সংবাদ : হাত ও বুক ব্যান্ডেজে মোড়া। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে শরীর। এর মধ্যেও হাত জোড় করার চেষ্টা তাঁর। বাঁচার আকুতি। অস্ফুট স্বরে কিছু একটা বলার চেষ্টা। কিন্তু মুখ দিয়ে গোঙানি ছাড়া কিছুই বের হচ্ছে না। ট্রাকচালক তাজুল ইসলামের (৫০) অবস্থা এখন এমনই করুণ। ১০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রাম আসার পথে কুমিল্লায় নাশকতাকারীদের ছোড়া পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন তাজুল। তাঁর শরীরের বুক, মুখ ও হাত পুড়ে গেছে। তাজুলের পাশাপাশি শয্যায় আছেন রিকশাচালক ফজলুর রহমান (৫৩) ও রাজমিস্ত্রি সাদ্দাম হোসেন (২৬)। তাঁরাও পেট্রলবোমায় দগ্ধ। যন্ত্রণাকাতর এসব মানুষের আর্তিতে চোখ মুছছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অন্য রোগীর স্বজনেরাও। গত শুক্রবার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি িবভাগে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর শয্যায় রয়েছেন ফজলুর রহমান, এর পাশে তাজুল ইসলাম ও আরেক শয্যা পর সাদ্দাম হোসেন। ফজলুর জানান, ১৬ জানুয়ারি নগরের কর্নেলহাট এলাকার সিডিএ ১ নম্বর এলাকায় তাঁর ওপর পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। দুই পা, দুই হাত ও কোমর ঝলসে গেছে তাঁর। ৩৫ শতাংশ দগ্ধ এই ব্যক্তি তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের জন্য টাকা ধার করেছিলেন। এখন তাঁর চিকিৎসার জন্যই ধার করতে হচ্ছে পরিবারকে। ফজলুরের পাশে বসা ছেলে আমিনুর রহমান হতাশ কেণ্ঠ বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, রাজনীতি বুঝি না। দিনে এনে দিনে খাই। আমাদের ওপর কেন এমন নির্যাতন হবে? বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন আমার কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে কী হবে বুঝতে পারছি না।’ আমিনুর নিজেও রিকশা চালান। তাঁদের বাড়ি নওগাঁতে। বাবা ও ছেলে নগরের সিডিএ আবাসিক এলাকায় থাকতেন। হাসপাতালে বাবার সেবা করতে গিয়ে এখন আমিনুর ঠিকমতো রিকশা নিয়ে বের হতে পারছেন না। ফজলুরের আগে তাজুল কুমিল্লায় দগ্ধ হন। তাঁর বাড়ি সীতাকুণ্ডে। তাজুলের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে তাঁর পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী তাহেরা বেগম। তাঁকে এখনই পেয়ে বসেছে ভবিষ্যতের শঙ্কা। তাহেরা বলেন, ‘সংসার চলে তাঁর আয়ে। ঘরে তিনটি মেয়ে রয়েছে। তাদের লেখাপড়া কীভাবে চলবে? কীভাবে বিয়ে দিব? কিছু বুঝতে পারছি না। এখন বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে।’ তিনি এখন সারাক্ষণ আল্লাহকে ডাকছেন স্বামীর সুস্থতায়। তাজুলের কাছে স্ত্রী থাকলেও সাদ্দামের সেই ভাগ্যও হচ্ছে না। অবরোধের কারণে তাঁর স্ত্রী খুশি বেগম রাজশাহী থেকে আসতে পারছেন না। দুই শিশু সন্তান এবং শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে খুশি রাজশাহীর পবা উপজেলায় থাকেন। দাগনভূঞা দুধমুখো বাজারে ২০ জানুয়ারি সাদ্দাম টেম্পোর ভেতর পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন। এ ঘটনা শোনার পর থেকেই খুশি বেগম আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অবরোধের জন্য আসতে পারছেন না বলে জানান তিনি। পেশায় রাজমিস্ত্রি সাদ্দাম আগে ঢাকায় কাজ করতেন। মাস খানেক আগে দাগনভূঞা আসেন কাজের জন্য। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। ঘর খরচের টাকাও তখন নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর ঠাঁই হয়েছে বার্ন ইউনিটে। মুখমণ্ডল ঝলসে যাওয়া সাদ্দাম ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। খুশি বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার স্বামীর এই অবস্থায় আমি তার কাছে যেতে পারছি না। সে যদি কাজ করতে না পারে, তাহলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে। সংসার চলবে না। আমাদের ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনো জমিও নেই। এখন আমাদের কী হবে, সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ তিনজনের পরিবারই তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। সুস্থতা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, চিকিৎসক এখনো তাঁদের শঙ্কামুক্ত বলছেন না। বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক মো. এস খালেদ বলেন, পোড়া রোগী হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যান। এখনো তাঁদের অবস্থা কী হবে বলা যাচ্ছে না। তাঁদের দীর্ঘ চিকিৎসা দরকার হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-০১-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1