সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ছোটগল্প : পুরুষেরা এমনই হয়

প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
একুশে সংবাদ : শরীফা ঢাকা এসেছে প্রায় তিন মাস। একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে। সকাল ৮ টার আগে তাকে ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে হয়। ভোরে উঠতে পারলে কোনো দিন রান্না করে, না হলে পান্তা ভাতে কাঁচামরিচ ডলে দুই মুঠ মুখে দিয়েই তাকে ছুটতে হয়। অথচ  আগের দিনগুলো কত ভালোই না কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু কপালে সুখ সইল না। গ্রামের মেয়ে সে। হঠাৎ করেই ভিনদেশের এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। একদিন সেই ছেলে কাউকে কিছু  না বলে নিরুদ্দেশ! অনেকদিন  অপেক্ষায় থেকেছে শরীফা কিন্তু সে ফিরে আসেনি। শরীফা স্বভাবে মিশুক প্রকৃতির। সমবয়সীদের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারে। তাই নিয়ে গ্রামের লোকজন এ কথা, সে কথা বলাবলি করে। কেউ বলে, পিরিত কইর্যা  বিয়া করছে, ভাতারে হালাইয়া থুইয়া গেছে। অহন গেরামের পোলাপানগো মাথা নষ্ট করতাছে। কথাগুলো শুনতে শরীফার ভালো লাগে না, লাগার কথাও নয়। একদিন কাউকে কিছু না বলে রাতের আঁধারে পাড়ি জমায় ঢাকা শহরে। না-খাওয়া শরীর, গাড়িতে  উঠতেই দুশ্চিন্তা এবং ক্লান্তিতে চোখে ঘুম নেমে আসে। ঘুমের ঘোরে শরীফা আঁতকে ওঠে, পাশের লোকটা ব্লাউজের মধ্যে হাত দিল! শরীফা শরীরের চেয়ে ব্লাউজের মধ্যে রাখা একশ টাকার কথা চিন্তা করেই বেশি সতর্ক হয়। সকালে ঢাকা এসে নামে সে। কোথায় উঠবে বুঝতে পারে না। কেননা তার তো কোনো গন্তব্য নেই, নেই কোনো আলাদা পরিচয় এ শহরে। সে তালতলা বস্তিতে কীভাবে কীভাবে যেন একটা জায়গা খুঁজে নেয়। এরপর অনেক চেষ্টা, তদবির করে কাজ নেয় গার্মেন্টসে। শরীফা ইদানিং আগের চেয়ে ফর্সা হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা ডিউটি শেষে কখনও এসে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার কখনও প্রথম স্বামী কবিরের কথা মনে পড়ে যায় তার। সেদিন আর চোখে ঘুম আসে না। আজ চারদিকে ফুটফুটে জোছনা। ঘরের জানালা দিয়ে জোছনা এসে পড়ে। এমনই জোছনা রাতে শরীফা কবিরকে নিয়ে গ্রামের পুকুর ঘাটে বসে কত গল্প করেছে, ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছে পরম পুলকে। ভাবতে শরীফার ভালোই লাগে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারে চোখের কোণায় জল এসে জমতে শুরু করেছে। শরীফা অসুস্থ ছিল, ফলে তিন দিন কাজে যেতে পারেনি। আজ যেতেই সুপার ভাইজার ও পিএম তাকে ডেকে পাঠায়। সুপার ভাইজারের রুমেই প্রথমে যায় সে। সুপার ভাইজার খেঁকিয়ে ওঠে, কী সুন্দরী কইন্যা, এত দিন কোথায় ছিলেন? এই মাসের বেতন পাওয়া লাগবে না। অ্যাপছেন করছেন ক্যান? শরীফার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। দোকানে বাকী, ডাক্তার দেখানোর জন্য ধারের টাকা এইসব কীভাবে সে শোধ করবে? ভাবতেই চোখে ঝাঁপসা দেখে সে। শরীফা করুণ কণ্ঠে বলে, যেমন কইরাই হোক আমার ব্যাতন পাওন লাগবো। তবে শর্ত আছে। আমি সর্ব শর্ত মানমু। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে সুপার ভাইজার বলে, আইজ ছুটির পর আমার লগে একবার আর পিএম-এর লগে একবার দেখা করবি। উষ্ণ কণ্ঠে কথাটা বার বার শরীফার কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। ছুটির পর শরীফার ডাক আসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শরীফাকে যেতে হয়। তালতলা বস্তির সব চেয়ে বড় মাস্তান কানা রফিক। দুই দুইটা বউ থাকতেও মেয়েদের উষ্ণ স্পর্শ ছাড়া থাকতে পারে না। কানা রফিকের মনে ধরে শরীফাকে। কয়েক দিন ইশারায় ডেকেছে। আজ পাচশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, সৎ থাইক্যা লাভ কী? হারামাস  খাডনি কইর্যা  কয় ট্যাহা পাস? আয়। শরীফা কানা রফিককে ফিরিয়ে দিতে পারে না। ওর সঙ্গে বস্তির এক নির্জন ঘরে এসে ওঠে সে। শরীফার মনের আকাশে বার বার ভাসে কৈশোরের খেলার সাথী শহীদের  কথা। ছোট্টবেলায় একসাথে হেসেছে, খেলেছে, বড় হয়েছে। শহীদ এক জোছনা রাতে ঠিক এভাবেই জাপটে ধরেছিল শরীফাকে। তখন শহীদকে হিংস্র পশুর মতো মনে হয়েছিল। শরীফা এরপর আর কখনও শহীদের সামনে দাঁড়ায়নি। শরীফার আজ মনে হচ্ছে, সেদিন শহীদের কোনো ভুল ছিল না। এটা পুরুষের মূদ্রা দোষ। পুরুষেরা আসলে এমনই হয়। শরীফা ঘৃণায় কোনো প্রতিবাদ করে না। কারণ সে বুঝে গেছে, এই সমাজে নারীরা সব সময়ই পুরুষের শিকার। শরীফার ওপর যখন কানা রফিক চেপে বসে তখন তার মুষ্টিবদ্ধ হাতের বুড়ো আঙুলটা উঁচু হয়ে ওঠে অজান্তে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০১-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1