সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

''আমানতকারীদের আস্থা রক্ষায় কাজ করছি''

প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
একুশে সংবাদ : রদীপ কুমার দত্ত দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এ পদে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় যোগ দেন তিনি। প্রদীপ কুমার ১৯৭৭ সালে সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার (শিক্ষানবিশ) হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ব্যাংকের বিভিন্ন পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও কর্মমদক্ষতার ছাপ রেখেছেন এই ব্যাংকার। বর্তমান অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে দেশের এই বিশিষ্ট ব্যাংকার সম্প্রতি কথা বলেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিবেদক নিয়াজ মাহমুদ। তার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আলাপচারিতার বিষয়টি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সোনালী ব্যাংক সর্ম্পকে কিছু বলুন? প্রদীপ কুমার : সোনালী ব্যাংক দেশের আপামর জনসাধারণের ব্যাংক। এই ব্যাংকের ১২০টি শাখায় রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করা হয়েছে। এ-বছর (২০১৫ সাল) আরো ৩৮০টি শাখায় রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করা হবে। এতে ৫০০টি ব্রাঞ্চে রিয়েল টাইম অনলাইন চালু হবে। বাকি ৭০০ শাখায় ২০১৬ সালের মধ্যে রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করা হবে। এর মাধ্যমে সব ধরনের কাজ অনলাইনে করা যাবে। এ ব্যাংকের ডিপোজিটের (আমানত) পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছর পরিচালন আয় (অপারেটিং প্রফিট) ছিলো মাত্র ২৯৭ কোটি টাকা। এবছর তা বেড়ে ৮৫৪ কোটি টাকার (প্রভিশনাল হিসাব) মতো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণও কমেছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকের অবস্থা বেশ ভালো। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে ঋণে সুদের হার কেমন? প্রদীপ কুমার : আমরা এখন সুদের হার কমিয়ে দিয়েছি। সে কারণে এখন মানুষ ঋণের জন্য আসছে। আগে ডিপোজিটের ইন্টারেস্ট রেট (আমানতের সুদ হার) অনেক বেশি ছিলো সে কারণে সুদের হারও বেড়ে গিয়েছিলো। সুদরে হার চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সুদের হার বেশি হলে গ্রাহক টাকা নিতে আসবে না। এরই মধ্যে আমরা সুদের হার কমিয়ে দিয়েছি। সুদের হার আরও কমবে বলে আমি মনে করি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যাংকিং খাতে কোন প্রভাব পড়বে কি না? প্রদীপ কুমার : রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সার্বিকভাবে অর্থনীতিরই ক্ষতি হচ্ছে। হরতাল-অবরোধে দেশের ক্ষতি হবেই এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে গত ক’দিন ধরে চলা অস্থিরতা এখনো ব্যাংক খাতে তেমন বিরূপ প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু অস্থিরতা দীর্ঘ হলে দীর্ঘ মেয়াদে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। গত এক বছরে সরকারের কর্মকাণ্ড কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? প্রদীপ কুমার : রাজনৈতিক সমঝোতা বাদ দিলে বর্তমান সরকার মাত্র এক বছরে সবক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি কমানোসহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধিতে সরকার সফল। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) খাতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা বিশাল ব্যাপার। ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও আইটিতে সফলতা এসেছে। গ্রামগঞ্জে এখন ইন্টারনেট চলে গেছে। মানুষকে এই প্রযুক্তিমুখি করাটাও এক বড় ব্যাপার। এভাবে আগে কখনো হয়নি। দেশের ব্যাংকগুলোতে বড় অঙ্কের তারল্য (নগদমুদ্রা) অলস পড়ে আছে। এর কারণ কী? প্রদীপ কুমার : বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিয়েছেন। এ-কারণে ব্যাংকে বড় অঙ্কের তারল্য রয়ে গেছে। দেশে সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বিদেশি ঋণের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া ব্যাংকের কাছে অধিক তারল্য থাকার একটি কারণ সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়া। আগে সরকারি খাত যেখানে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিতো এখন তা নিচ্ছে না। সরকারি সাবসিডিয়ারি বেশি হওয়ার কারণে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে এটি হতে পারে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ কমেনি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেড়েছে। তারল্য উদ্বৃত্তথাকায় ব্যাংকের মুনাফায় কতটুকু প্রভাব পড়ে? প্রদীপ কুমার : ব্যাংকের কাছে অধিক তারল্য থাকার কারণে ব্যাংকের মুনাফা একটু কম হচ্ছে। তবে ব্যাংক ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারছে। অপরদিকে তারল্যে ঘাটতি দেখা দিলে ব্যাংকের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। ব্যাংক মার্কেটে টাকা না-ও পেতে পারে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে সমস্যা হবে। ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হতে পারে। তাই আমি মনে করি তারল্য থাকলে তা কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। ব্যাংকিং খাতের ওপর দিন দিন মানুষ আস্থা হারাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী? প্রদীপ কুমার : এ ধরণের অভিযোগ ঠিক নয়। তবে ঋণ নেওয়ার জন্য যে ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় তা হয়তো অনেকের নেই। এ-কারণে তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আগে অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ দিতেন। এখন এটি বন্ধ হয়েছে। সোনালী ব্যাংকে বেশ কয়েকটি ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে বেশ ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে এ ব্যাংক। এ থেকে বের হতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে? প্রদীপ কুমার : এক সময় সোনালী ব্যাংকে বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন আর কোনো ঘটনা ঘটছে না। এখন আমরা কঠিনভাবে সবকিছু তদারকি করছি। আমি যোগ দেবার পর তদারকির জন্য অডিট ও মনিটরিং টিম হিসেবে একটি আলাদা বিভাগ করেছি। এই বিভাগের কাজ হলো ছয় মাস পরপর কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা তদন্ত করে খুঁজে বের করা। যদি অতীতে পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ওই ধরনের অনিয়ম হতে পারতো না। যেহেতু এখন কঠোরভাবে তদারকির পদক্ষেপ নিয়েছি, সেহেতু ভবিষ্যতে অনিয়ম হওয়ার আশংকা আর নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও এখন অনেক সচেতন। সোনালী ব্যাংক নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ বেশি কেন ? প্রদীপ কুমার : সোনালী ব্যাংক বড় ব্যাংক। তাই গ্রাহকের অভিযোগ বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টসকর্মী, বিধবা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকহিসাব খোলার সেবা দিচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে স্কুল ব্যাংকহিসাব বেসরকারি ব্যাংকগুলোও খুলেছে। তবে বাকি ব্যাংক-হিসাবগুলো সরকারি ব্যাংকই খুলছে। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে প্রায় দেড় কোটি ব্যাংকহিসাব খোলা হয়েছে। এসবের মধ্যে শুধু সোনালী ব্যাংকেই প্রায় ৪০ লাখের মতো হিসাব রয়েছে। ট্রেজারি চালান ভাঙ্গানোসহ সোনালী ব্যাংক ৩৭টি কাজ করে। এর মধ্যে ২৪টি কাজ করা হয় কোনো প্রকার কমিশন ছাড়াই নিজখরচায়। জনতা, অগ্রণী ব্যাংকের তুলনায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ও কাজের পরিধি বেশি। কিন্তু তুলনামুলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাদের তুলনায় আমাদের লোকবল কম। সোনালী ব্যাংকের কিছু শাখা আছে যেখানে গ্রাহকের ভিড়ে ভিতরে ঢোকাই যাই না। লোকবল কম থাকা এবং গ্রাহকের সংখ্যা বেশি, তাই অভিযোগও কিছু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটি যাতে না হয় সেজন্য আমরা সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি বিগত বছরের তুলনায় আমাদের সেবার মান অন্যসব ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা ভালোর দিকে। পরিচালনা পর্ষদ চাইলেই ব্যাংকের প্রধাননির্বাহী কর্মকর্তা বা এমডিকে সরাতে পারবে না-মর্মে বাংলাদেশব্যাংকের নির্দশনার বিষয়ে আপনার মতামত কী? প্রদীপ কুমার : বোর্ড চাইলেই এমডিকে তার পদ থেকে সরাতে পারবে না এটি একটি ভালো নীতিমালা। আমি মনে করি এ নীতিমালা ভালো উদ্দেশেই করা হয়েছে। মালিক পক্ষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী ব্যাংক যদি কাজ করে তবে ব্যাংক চলবে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সিএসআরনীতিমালা প্রণয়ন করেছে? এই নীতিমালা আপনি কীভাবে দেখছেন? প্রদীপ কুমার : আগে সিএসআরের ক্ষেত্রে নীতিমালার বাইরে কিছু কার্যক্রম চলতো। এ কারণেই হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে একটি নিয়মের মধ্যে এনেছে। গত বছর সরকারি ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র সোনালী ব্যাংকের সিএসআর বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ করেনি। তারা আমাদের ব্যাংকের সব সিএসআর পরীক্ষা করেছে। কোনো অনিয়ম পায়নি। আমি মনে করি, সিএসআরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা করা খুবই ভালো উদ্যোগ। অন্যান্য ব্যাংক মোবাইলব্যাংকিংওএজেন্টব্যাংকিং’ কার্যযক্রম শুরু করলেও সোনালী ব্যাংক এখনো কেন করেনি? প্রদীপ কুমার : আমরাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যাবো। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। এ কারণে আমরা এখনো মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করিনি। অনিয়ম যাতে না হয় সেসব দিক বিবেচনা করেই আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যাবো। আর এজেন্ট ব্যাংকিং করতে সোনালী ব্যাংকের কোনো সমস্যা নেই। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং ছোট ব্যাংকের জন্য সুবিধাজনক। সোনালী ব্যাংক যেহেতু অনেক বড় ব্যাংক তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সুবিধা অসুবিধাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব বিষয় বিবেচনা করে একটি নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দেশের সব চেয়ে বড় এই রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? প্রদীপ কুমার : জনসাধারণের স্বার্থরক্ষায় আমরা কাজ করে যাবো। সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করে ব্যবসা করবো। ব্যাংকের সেবার মান বাড়াবো এবং শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে আনবো। সেই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক আমানতকারীর আস্থা রক্ষা করে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানে কাজ করে যাচ্ছি। এ ধারা অব্যাহত রেখে কর্মকর্তা কর্মচারিদের স্বার্থে বেশি মুনাফা করারও চেষ্টা করবো। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-০১-০১৫:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1