সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৪
একুশে সংবাদ : আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে। কনকনে হিমেল হাওয়া ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দরিদ্র জনগোষ্ঠী-অধ্যুষিত অঞ্চলে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানুষের অসহায়ত্বকে প্রকট করে তোলে। তাই শীতার্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র বিতরণ করে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। নিঃস্বার্থভাবে শীতার্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবতার সেবা। এমন মহৎ ও পুণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত। অসহায় মানুষকে দুর্দিনে সাহায্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মানসিকতা যাদের নেই, তাদের ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। সুতরাং নামাজ, রোজার সঙ্গে জনকল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণাবলি অর্জন করাও জরুরি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সব কিতাব ও নবীর প্রতি ইমান আনয়ন করলে এবং আল্লাহ-প্রেমে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থীদের ও দাস মুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে, জাকাত দিলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে; অর্থসংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭) সমাজের সংগতিসম্পন্ন ও সচ্ছল মানুষের ঘরে বছর পরিক্রমায় শীতকাল ঋতু হিসেবে আনন্দ ও খুশির বার্তাবহ হলেও দেশের বৃহত্তর জনজীবনে শীত নৈরাশ্য ও বেদনার ধূসর বার্তাবাহক মাত্র। হাড়কাঁপানো শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জনজীবনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য অসহায় দরিদ্র মানুষের প্রয়োজন অনেক শীতবস্ত্রের। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে হলেও প্রয়োজন সুচিকিৎসা ও ওষুধপথ্য এবং শীত মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষ করে শিশুরা গণহারে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে শীতের দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি শীতজনিত মৃত্যুর হারও বাড়বে। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত-নির্বিশেষে সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। নবী করিম (সা.) মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা বলেছেন, ‘এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাদ্য দান করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।’ (আবু দাউদ) শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের অভাবে যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে শীতার্ত ব্যক্তিদের দিন কাটছে—এ অবস্থার শিগগিরই অবসান ঘটাতে হবে। শীতের প্রভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যারা শীতজনিত রোগব্যাধিতে ভুগছে, তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধপথ্য ও সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা একান্ত প্রয়োজন। যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাদের দুরবস্থা যে সর্বাধিক, সে কথা বলাই বাহুল্য। বিত্তবান মানুষ শীতবস্ত্র ব্যবহার করে পরিত্রাণ পেলেও দরিদ্র লোকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে-অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন যাপন করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। নবী করিম (সা.) অসহায় মানুষকে সাহায্যের কথা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করবেন, যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (মুসলিম) ক্রয়ক্ষমতার বাইরে শীতার্ত ব্যক্তিরা না পারে পেট ভরে খাবার খেতে, না পারে কোনো অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে। রাতের বেলায় দেখা যায় কীভাবে, কেমন করে শীতবস্ত্রবিহীন মানুষ কষ্টে রাত যাপন করছে। তাদের নেই কোনো শীত নিবারণ করার সম্বল। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীতের তীব্রতায় দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রাভাবী শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নিদারুণ কষ্ট পায়। তাই সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি ইচ্ছা করেন, তাঁদের নিজ নিজ জেলার শীতার্ত অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারেন। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ায় মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন (রোজ কিয়ামতের দিন) তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ সুতরাং প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মানুষেরই পারস্পরিক মানবতাবোধ ও উদার মানসিকতা থাকা অপরিহার্য। একজন মানুষ বিপদে পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসহায় হলে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করা সমাজের বিত্তবান প্রতিবেশীদের ইমানি দায়িত্ব ও মানবিক কর্তব্য। সব মানুষের উচিত সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া, অকৃত্রিম ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি বজায় রাখা। তাই দেশের সর্বস্তরের ধনাঢ্য, বিত্তবান, শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়া-মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, গবেষক ও কলাম লেখক। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-১২-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1