সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশে ১০ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই : আবু হানিফ

প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ডিসেম্বর ৮, ২০১৪
একুশে সংবাদ : বিনামূল্যে দেশে ১০ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই। ইতোমধ্যেই ৩ হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দিয়েছি। তাদের বেশির ভাগই বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করছেন। আরো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে বছরে বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করতে পারে বাংলাদেশ। কথাগুলো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পিপল এন টেক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আবু হানিফ। আবু হানিফ এক ব্যতিক্রমী মানুষ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৯৬ সালে তিনি আমেরিকা যান। এরপর কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সসহ অরাকল ডিবিএ, সিস্টেমস অ্যাডমিন সার্টিফিকেশন অর্জন করেন। এফডিআইসি, আইআরএস, ডিওডি, আইবিএম এবং অরাকল কোম্পানিতে চাকরি করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত আবু হানিফ এখন দেশের জন্য কাজ করতে চান। তাই দেশের টানে সুদূর আমেরিকা থেকে তিনি এসেছেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষকে আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলতে তিনি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করেছেন। বিনামূল্যে তিনি বাংলাদেশে অন্তত ১০ হাজার আইটি গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চান। আইটি গ্র্যাজুয়েটগণ দেশে বসেই আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়ে যেন কাউকে অড জব করতে না হয়, এজন্যই তার এই উদ্যোগ। আবু হানিফ বলেন, ‘আমি যখন প্রথম আমেরিকায় যাই, তখন দেখি সেখানে আমার বন্ধুবান্ধব এবং বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই অড জব করছেন। সেখানে সারভাইব করতে হলে অড জব করতেই হয়। আমাকেও করতে হয়েছিলো। তখন আমি বুঝতে পারি ভালো কাজ পেতে হলে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই।’ আমাকে কেউ পথ দেখাবে, সেখানে তেমন কাউকেই পাইনি। কোন কাজটি করলে আমার ভালো হবে-এটি বলারও কেউ ছিলো না। তখন নিজ থেকেই কম্পিউটারের ওপর মাস্টার্স করি। এরপরও ভালো চাকরি পাচ্ছিলাম না বলে জানান তিনি। আবু হানিফ বলেন, ‘মাস্টার্স শেষ করলেও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারিনি। কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতে চাইলে তারা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চায়। আর আমার তা ছিল না।’ আমি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কোর্স করতে শুরু করলাম। যেমন-ওরাকল ডিবিএ, জাভা ইত্যাদি কোর্স। এসব কোর্স করার পর আমার একটা ভালো চাকরি হলো। তখন আমি বন্ধুদের সাথে এ কথা শেয়ার করলাম। তারা প্রথমে গুরুত্ব দেননি। তারা আরও বলেছেন, এটা করলে চাকরি হবে না। তার চেয়ে অড জব করছি, সেটাই ভালো। বন্ধুদের মধ্যে একজন কম্পিউটারে ব্যাচেলর ডিগ্রি করেছেন। আমার কথায় তিনি রাজি হয়ে গেলেন। আমার সাথে আমার বাসায় গেলেন। তাকে আমি ছয় সপ্তাহর একটি ট্রেনিং দিলাম। ট্রেনিং নেওয়ার পর তিনি আমার চেয়েও ভালো চাকরি পেলেন। তার বেতন আমার চেয়েও বেশি হয়েছিলো। আবু হানিফ তার সাফল্য সম্পর্কে বলেন, ‘এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার কাছে অনেকেই আসা শুরু করেন। আমি বন্ধের দিনে তাদেরকে এ কোর্সগুলোর ওপর প্রশিক্ষণ দিতে থাকি। প্রায় ৩শ লোককে আমি ট্রেনিং দেই। প্রায় সবাইকেই আমি বিনা মূল্যে ট্রেনিং দিয়েছি। আমার এই ট্রেনিং নিয়ে তারাও ভাল চাকরি পান। পরবর্তীতে আমার কাছে ট্রেনিং নিতে অনেকেই আসতে শুরু করেন। তখন আমি অফিস নেই এবং প্রতিষ্ঠানিক ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে আমি এমন একটি জায়গায় নিয়ে যাই যে, এখন আমার আমেরিকাতেই চারটি অফিস আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমেরিকাতে পিপল এন টেক থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩ হাজার বাংলাদেশিকে ভালো চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে জানান আবু হানিফ। ৩ হাজার লোকের অধিকাংশই বছরে প্রায় ৮০ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করছেন। তিনি বলেন, আমেরিকাতে কেউ ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করে চাকরিতে যোগ দিলে বছরে ৪০ হাজার ডলারের বেশি আয় করতে পারেন না। তাদের বছরে ১ লাখ ডলার আয় করতে লেগে যায় প্রায় ৮ বছর। সেখানে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে চার মাসের ট্রেনিং দিয়ে এমন দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়, আপনি কোন বিষয়ে পড়ে এসেছেন তা মুখ্য নয়। আইটির ওপর ট্রেনিং দিয়ে বছরে ৮০ হাজার ডলার আয়ের চাকরি দিচ্ছি, এটি আমার খুব ভালো লাগে। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি সেমিস্টারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩শ জন করে ট্রেনিং নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পিপল এন টেকের যে অফিসটি আছে, সেখানে সফটওয়্যার টেস্টিং,ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডেস্কটপ অ্যান্ড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনস এবং ওরাকল ডিবিএর ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বেকার যুবক আছেন, যারা পড়াশোনা শেষ করেও ভাল চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরি না পাওয়ার মূল কারণ, যে দক্ষতা প্রয়োজন তা তাদের নেই। আর এ জন্যই আমার বাংলাদেশে আসা। বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে চাকরির জন্য যেতে চান, তারা যেন সেখানে যাওয়ার আগে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে আইটির ওপর কোর্স করে যান। তাহলে সেখানে গিয়ে অড জব করতে হবে না। অড জব তাদের আর ছুঁতেও পাড়বে না। তারা চাইলে দেশেও অনেক ভালো চাকরি করতে পারবেন। তিনি বলেন, পিপল এন টেক যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার বাংলাদেশিকে চাকরি দিয়েছে, তারা গড়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ডলার আয় করছে। সবার আয় যোগ করলে দাঁড়ায় ৩০ কোটি ডলার। এ আয়ের ২০ ভাগ তারা দেশে পাঠালে বাংলাদেশ বছরে রেমিট্যান্স পাচ্ছে ৬ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা। পিপল এন টেকের মতো আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে বাংলাদেশ প্রতি বছর আইটি সেক্টর থেকেই বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করতে পারবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, সে স্বপ্ন সত্যিই বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি গার্মেন্ট, অভিবাসী এবং কৃষি-এ তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি চাচ্ছি তিন নম্বরের পর চতুর্থ স্তম্ভটি হোক আইটি সেক্টর। খাতটি দাঁড় করাতে পারলে এটি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র সরকার এইচওয়ানবি ভিসায় ১ লাখ ৮০ হাজার নতুন ইমিগ্র্যান্ট নেবে। তাই বাংলাদেশে যত বেশি আইটি প্রশিক্ষিত আবেদনকারী থাকবেন, সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। পিপল এন টেক থেকে কোর্স করে যারা বিদেশে যাবেন, প্লেন থেকে নেমেই তারা ভালো চাকরি করতে পাড়বেন। কোম্পানিগুলো তাদেরকে ডেকে নিয়ে চাকরি দেবে। আমাদের মার্কেটিং টিমও তাদেরকে ভালো চাকরি পেতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, পিপল এন টেক আমেরিকার বোর্ড অব এডুকেশন এবং এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি কর্তৃক স্বীকৃত। এই সার্টিফিকেট যে কোনো দেশে, যে কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাবে। কারণ সার্টিফিকেটটি দেওয়া হচ্ছে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তত ১০ হাজার দক্ষ আইটি প্রফেশনাল গড়ে তুলবো এবং দেশে ও দেশের বাইরে তারা যেন ভালো চাকরি পেতে পারেন, সেজন্য সহযোগিতা করবো। ‘ব্রেইন ড্রেইন’ নামের নিন্দিত শব্দটিকে মুছে ফেলতে চাই। শব্দটি হোক ‘ব্রেইন এগেইন’ নামে। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে পড়াশোনা করে বিদেশে গিয়েছেন, তারা যাতে বাংলাদেশকে টেকনোলজি ট্রান্সফার, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতা করে প্রদায়কের ভূমিকা পালন করেন। একটি সুন্দর, সুশিক্ষিত ও সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তারা বাংলাদেশ থেকে পিপল এন টেক পরিচালিত আইটি কোর্সগুলো করে যেতে পারেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রে খুব সহজেই তারা মর্যাদাপূর্ণ চাকরি পাবেন। কম্পিউটার সায়েন্সে যারা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন এবং আইটি পেশায় তিন-চার বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারাও পিপল এন টেক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এইচওয়ানবি ভিসার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার মানুষকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়াই আমার লক্ষ্য। তিনি যে বয়সেরই হোক, তাতে কোনো সমস্যা নেই। এর ধারাবাহিকতায় প্রথমযাত্রায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে অন্তত ৫০ জনকে ওরাকল ডিবিএ, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডেস্কটপ ও মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশনসের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এটি শুধু অস্বচ্ছল মেধাবীদের জন্যই। এছাড়া আরও ১শ জনকে বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য নতুন আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি দেশে একটি আইটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চান, যা এশিয়াকে লিড করবে বলে জানান তিনি। কারণ, একজন শিক্ষার্থী যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, সেখান থেকে শুধু জ্ঞান অর্জন করেন। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই- সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সে যে কোনো দেশের কোম্পানিতে চাকরি করতে যাবেন, সেখানেই ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবেন। তারা বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবে তৈরি হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে তিনি সরকার এবং বিভিন্ন আইটি কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একযোগে কাজ করতে চান। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আরও জানতে ও ওয়েব সাইটে আবেদন পত্র সংগ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়: (www.piit.us), ফোন করেও জানা যাবে-০১৬১১৪৪৬৬৯৯ নম্বরে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৮-১২-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1