সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সিডরের আঘাত

প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, নভেম্বর ২৪, ২০১৪
একুশে সংবাদ : ২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী প্লাবন সিডরে আক্রান্ত হয়েছিল বাংলাদেশের সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূল। গত সাত বছরে সিডরের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিডরের বিরুদ্ধে রিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুন্দরবনের বাবাহকু (বাংলাদেশ বাঘ, হরিণ ও কুমির) ফেডারেশনের আইন ও নিবর্তন নিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। আজ সুন্দরবনের কচিখালিতে বাবাহকুর কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সংস্থার মুখপাত্র মলিশা মঞ্জিলা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মলিশার সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে বার্তা সংস্থা উবিসস (উড়ো, বিভ্রান্তকর, সংশয়, সন্দেহ) জানায়, ১৫ নভেম্বর সিডর মোকাবিলার সপ্তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাবাহকুর উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে বিশেষ আলোচনা প্রস্তাবের ওপর তীব্র ও প্রখর সমালোচনার এক পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আইলায় সুন্দরবনের প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন পক্ষের-বিপক্ষের সবাই। সবার সম্মিলিত দাবির মুখে খোদ সিডরের বিরুদ্ধেই সালিশি ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর সুবিদখালীর বর্ষীয়ান সদস্য, পাখপাখালি গোত্রের নেতা শঙ্খশালিয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গৃহীত হওয়ার পর উচ্চপরিষদ অধ্যক্ষ শিয়ালেন্দু মামাইয়া তার রুলিংয়ে বলেন, সালিশ বিভাগ নিজের উদ্যোগে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে না গেলে বাবাহকুর পক্ষে কোনো কমিটি রিট পিটিশনটি দাখিল করতে পারে। ফেডারেশনের পরিচালনায় থাকায় বাবাহকুর নিজের এ জাতীয় মামলা দায়েরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা এর সঙ্গে ঘরে-বাইরের সম্পর্ক সংস্থাপন সংক্রান্ত স্পর্শকাতর বিষয়াদির যোগসূত্র রয়েছে। সিডর এসেছে বাইরে থেকে, তাকে অভ্যন্তরীণ আইনের আওতায় সালিশে সোপর্দ করা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা- এ ব্যাপারে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করেন বাবাহকুর আইন এবং সালিশ উপদেষ্টা বানরিয়া বাচাবন। অবশ্য বানরিয়া বাচাবনের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বিরোধী পক্ষের বিচার-সালিশ বিশেষজ্ঞ ময়নামন্দা। ময়নামন্দার মতে, যেখান থেকেই আসুক না কেন বাতাস যেখানে যার ঘর ভেঙেছে সেখানেই তার হতে হবে বিচার। তিনি মেকং বনে বাঘ সম্প্রদায়ের সুখ্যাতির সর্বনাশ সাধনে দূরদ্বীপবাসী তক্ষক ও ভক্ষকদের বিরুদ্ধে দেয়া একটি ঐতিহাসিক রায়ের কথা উল্লেখ করেন। উচ্চপরিষদে গৃহীত প্রস্তাবটি আজ সকালে বাবাহকু প্রেসিডিয়ামের প্রেসিডেন্ট সুন্দরমিয়ার সম্মতি লাভ করলে রিট দায়েরের জন্য বাবাহকুর আইন ও নিবর্তন নিরোধ কমিটির অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামীকাল সালিশালয় বন্ধ থাকায় পরশু এটি দাখিল হতে পারে বলে মঞ্জিলা সংবাদ ব্রিফিংয়ে আভাস দেন। এদিকে দুবলারচর থেকে সালিশালয় সূত্রে সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সিডরের বিরুদ্ধে সালিশালয় থেকে স্বউদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রাজ্ঞ পন্ডিতরা। তবে তাদের ধারণা, সব ব্যাপারে স্বউদ্যোগে অভিযোগ দায়েরে সংশ্লিষ্ট হতে গেলে সালিশে মনোযোগ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে এবং সালিশজীবীরাও এর মধ্যে তাদের মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করতে পারেন। পরশু সালিশজীবীদের পলিটব্যুরোতে এতদবিষয়ক এক আলোচনায় এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে সংবাদসংস্থা বৈরী বাতাস ডটকম পরিবেশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসের শুরুর দিনগুলোতে শ্রীলঙ্কার অদূরে ভারত মহাসাগরে 'সিডর' (সিংহলি ভাষায় যার অর্থ চোখ) নামক নিম্নচাপটি প্রথম নয়ন মেলে। জলবায়ু ও আবহাওয়াসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা সেবারকার সুকোমল মলি্লকাবনের নিম্নচাপটিকে কলি ফুটে ঘূর্ণিঝড়ে বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সিডর নাম বরাদ্দ করে বসে। সিডর বংশে ও মেজাজে বড্ড একরোখা। লক্ষ্যভেদি তার পদচারণা। হিংস্র তার চাহনি। কানকথা শোনা তার স্বভাব। অনেক আগে থেকেই সে যেন জানে বিশ্বের সেরা গহিন গরান বন অনেক লোকালয়কে নানা ঝড়-ঝাপটা থেকে বাঁচাতে নিজে মাথা পেতে নেয় সব ধাক্কা। সিডরের রক্তে প্রতিশোধের আগুন। তার এজেন্ডায় এবার আসে সেই গহিন গরান বন। সঙ্গে সে সুবাদে গহিন গরান বনের দেশটির অর্থনীতিকে ধাক্কা দেয়াটাও তার পরিকল্পনার ফ্রেমে ঢুকে পড়ে। সিডর জানতে পারে কৃষিপ্রধান দেশটির অন্যতম ফসল আমন ধান। সেবার পরপর দুটি বড় বন্যায় দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকার আমন ধান উৎপাদনের সব প্রয়াস ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সে দেশের এক টিভি চ্যানেল নাম তার 'আই', যার মানে আমি, কিন্তু লোগোতে দেখায় 'চোখ' (সিডরের প্রতিশব্দ হলেও এ 'চোখ' জ্ঞানের, দর্শনের, জানা ও জানানোর প্রতীক), সেই চ্যানেলে বড় বড় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞ এক কৃষিবিশারদ বন্যার পানিতে নিজে হেঁটে হেঁটে দেখিয়েছেন কীভাবে পুনঃরোপিত ধানগাছগুলোর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে দ্বিতীয় বন্যায়। সিডরকে সেই ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। মুচকি হাসে সিডর। জানতে চায়, 'এ অবস্থা গোটা দেশে কিনা?'। তাকে বলা হয়, 'এমন অবস্থা ৬৫ ভাগ অঞ্চলের যেখানে ছোট, বড়, মাঝারি নদীগুলোর দুই কূল ছাপিয়ে প্রায়ই বন্যা আসে-যায়, কিন্তু দেশের বাদবাকি ৩৫ ভাগে মূলত সমুদ্র-উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে এভাবে বন্যা হয় না।' সুন্দরবন আর সাগরের তীরবর্তী জেলার চর ও সমতল ভূমিতে আমন ধান এখন পর্যন্ত অক্ষত আছে- সিডর প্রতিবেদন দেখে বুঝতে পারে। তার মাথায় ভয়ানক দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। 'এসব এলাকার সেই ধানের বর্তমান অবস্থা কী?' তাকে জানানো হয়, 'আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ধান পেকে উঠবে।' কূটবুদ্ধিসম্পন্ন পক্বকেশ পলিসিবাজদের মতো সিডর এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের স্বপ্ন দেখে। সে সিদ্ধান্ত নেয়, তার উৎপত্তি স্থল থেকে দেশটির দূরত্ব যা তাতে ঘণ্টায় মোটামুটি ৬০ থেকে ৬৫ মাইল বেগে এগোলে ১৫ নভেম্বর তারিখের দিকে দেশটির গহিন গরান বনের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানালে বনটির বারোটা বাজানো এবং উপকূলবর্তী জেলাগুলোর কাঁচা-পাকা ধানের উচ্চমার্গের সর্বনাশ সাধনের সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে। সিডর উপলব্ধি করে, বনটির ওপর সরাসরি আক্রমণ করলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আর তাছাড়া বন ভেদ করে ধানক্ষেত অবধি যাওয়া সহজ হবে না। তার ঘিলুতে ধরে, এ কারণে বনের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে গেলে বনও উজাড় হবে আবার বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেতকে পাওয়া যাবে সামনে। ১৫ তারিখ মোক্ষম সময় এজন্য যে, ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে পাকা ধান ঘরে তোলার সময় ও সুযোগ যাতে না আসে। ১৫ তারিখে কাঁচা-পাকা ধানগাছকে ধরাশায়ী করার জন্য উপযুক্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে। আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিডর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিতভাবে গরান বন এবং সে দেশের প্রধান শস্যের অবশিষ্ট সম্বলকে শেষ করে ওই বছরটিতে গোটা অর্থনীতিকে খাদ্য সঙ্কটে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। এটি মানবতা ও প্রকৃতিবিরোধী অমার্জনীয় ও অনপনেয় অপরাধ এবং অন্যায়। সিডরের পরিকল্পনা শানিত ও সপ্রতিভ, তবে বেশ প্যাঁচানো এর গ্রন্থি। সিডরের চোখ ট্যারা, বোঝা যায় না সে কোন দিকে তাকাচ্ছে। তার চাহনি দেখে আবহাওয়া দফতর তার গতিবিধি অাঁচ করতে গিয়ে রীতিমতো ফাঁপরে পড়ে যায়। বেশ সুকৌশলে সে এগোতে থাকে, কখনও একটু দ্রুত এগোয়, আবার কখনও ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে ক্রিকেটে স্পিনারের মতো ঢেউ খেলানো বার্তা পেঁৗছায় আবহাওয়া দফতরের ডিজিটাল পর্দায়। ভালো করে যেমন ঠাওর করতে পারে না পুষ্টিহীনতায় ভোগা ব্যাটসম্যান, আবহাওয়া দফতরের ভারপ্রাপ্তরা তেমন যেন বিশেষভাবে অজ্ঞতার ভান করে থাকে, সব সময় 'হতে পারে' জাতীয় হেঁয়ালি 'বার্তা'র ব্যাট করে। খোদ মার্কিন মুল্লুক থেকে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে বসে পিরোজপুরের পুখুরিয়া গ্রামের বড় ভাই পিলু তার ভাই মিলুকে ফোন করেন রাত সাড়ে ৯টায়। বলেন, 'ব্যাটা সিডর এখন কিন্তু হরিণঘাটা-বলেশ্বরের মোহনা দিয়ে ওপরের দিকে এগোচ্ছে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে, তাদের বহু দিনের স্মৃতিঘেরা কাঠের দোতলা বাড়িটি এখনও ঠিক আছে তো?' মিলু ঝড়ের ঝাপটায় ভালো শুনতে পারেন না, তবে আশ্চর্য হন হাজার হাজার মাইল দূর থেকে, বলতে গেলে সাত সমুদ্র আর তেরো নদীর ওপার থেকে তার বড় ভাই সিডরের গতিবিধি জানাতে পারছেন আর তাদের আবহাওয়া দফতর দেশব্যাপী ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণা দিয়েই খালাস। সিডর এসব সীমাবদ্ধতার কথা জানে। তাই সে তার মতো অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাম পাশের সুন্দরবন দাবড়িয়ে-মাড়িয়ে ডান পাশের দ্বীপ, সমতল- সব তোলপাড় করে পিরোজপুরের সন্ধ্যা ও কচা নদী অবধি এসে পৌঁছায় রাত ১১টার দিকে, তার হিংস্র চোখ দিয়ে তখনও আগুনের গোলা বের হচ্ছে, যেখানে পড়ছে সেখানে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, বড় বড় গাছ ধরাশায়ী করে, ঘরবাড়ি ভেঙেচুরে সে তার ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। হুলারহাটের কাছে এসে সে তার নীলনকশায় চোখ রাখল, হ্যাঁ, তার পরিকল্পনামতো কাজ হচ্ছে। তবে সে একটু ভাবল, এখন যে ডিরেকশনে আছে সে এভাবে এগোলে দেশের খোদ রাজধানী তার সরাসরি টার্গেটে পড়ে, যেখানে দেশের নিয়ন্ত্রকরা থাকেন সেখানে এভাবে আক্রমণ করাটা কেন জানি তার মনে হলো ঠিক হবে না, সেখানে মাত্র ১১ মাস বয়সী এক নির্দলীয় কর্তৃপক্ষ, তাদের বেসামাল করে ফেললে পরে উদ্ধারকাজ চালানোর বা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ থাকবে না। এমন কি তার এ অভিযানের কাহিনী নিয়ে যারা নকশা, গল্প, সচিত্র প্রতিবেদন ও ইতিহাস নির্মাণ করবেন তারাও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়- তাহলে সেটা শোভনীয় ও সমীচীন হবে না। সিডর ভাবল তার গতিপথ একটু পরিবর্তন করে রাজধানীকে পাশ কাটিয়ে গেলে কেমন হয়। রাত পৌনে ১২টার সময় কাউখালী স্টিমার ঘাটের কাছে থাকা তার সেকেন্ড লেফটেন্যান্টকে সে ডিরেকশন ১ ডিগ্রি পূর্বমুখী হেলাতে নির্দেশ দিল। এরই মধ্যে মূল ভূখন্ডে এসে তার আক্রমণের তীব্রতা একটু কমে এসেছে। নতুন ডিরেকশন অনুযায়ী উজিরপুর-মুলাদী-গোসাইরহাট হয়ে চাঁদপুরের দিকে সে ছুটে চলে। সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ পার হয়ে আসাম অবধি গিয়ে তার অভিযান শেষ হয়। সুন্দরবনের লাখ লাখ গাছপালা, লোকালয়ের শত-সহস্র ঘরবাড়ি, গাছগাছালি সব শেষ করে লাখো কোটি মানুষকে পানিবন্দি করে, অসংখ্য প্রাণী ও পশুসম্পদের সর্বনাশ সাধন করে সিডর প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণিসম্পদের, ফল-ফসলের, জীবন ও জীবিকার যে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে-আর্জিতে তার প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে, সঙ্গে যেসব কারণে সিডরের সৃষ্টি সেসব কারণ অনুসন্ধানের পর তা নিরোধকল্পে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-১১-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1