সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কৃষি বীমা

প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, নভেম্বর ২২, ২০১৪
একুশে সংবাদ : বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। আমাদের দেশে কৃষি খাতে কোনো বীমা পদ্ধতি চালু নেই বললেই চলে। বলতে গেলে এ হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। কৃষি উন্নয়নে কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা চালু করা উচিত। এজন্য আইনি বাধ্যবাধকতা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, দাবদাহ, রোগ-ব্যাধি, পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রভৃতি কারণে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কৃষি-বীমা যুগান্তকারী অবদান রাখতে পারে।   অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, কুয়াশা, শীতসহ ঝড়-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের কৃষক সম্প্রদায়। সে লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো দেশের কৃষককে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমার আওতায় নেয়া হচ্ছে। সাধারণ বীমা করপোরেশন, আবহাওয়া অধিদফতর ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এরই মধ্যে 'ওয়েদার ইনডেঙ্ বেইসড ক্রপ ইন্স্যুরেন্স' শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন পেলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ সহায়তার এ প্রকল্পটির চলতি বছর থেকেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।   দেশের প্রতিটি জেলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন গড় আবহাওয়া সূচক তৈরির কাজে হাত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। অধিদফতর পরিচালিত 'কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পূর্ব সতর্কীকরণ পদ্ধতি উন্নয়ন' শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় এ আবহাওয়া সূচক তৈরি করা হচ্ছে। এ আবহাওয়া সূচক শুধু কৃষকের ক্ষতিপূরণ পেতেই সহায়তা করবে না বরং কৃষককে তার জমিতে শস্য পরিকল্পনা সাজাতেও সহায়তা করবে। সাধারণ বীমা করপোরেশনের তথ্য মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত শস্য বীমার ত্রুটিগুলো কাটিয়ে একটি টেকসই শস্য বীমা পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে। সূচক অনুযায়ী আবহাওয়ার কোনো একটি অনুষঙ্গ অস্বাভাবিক হয়ে পড়লে এর জন্য ফসলের ক্ষতিপূরণ পাবেন কৃষক। শুধু আবহাওয়া অধিদফতর ক্ষতি হয়েছে এমন রিকমেন্ড করলেই ফসলের ক্ষতিপূরণ পাবেন কৃষক। তবে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমার প্রিমিয়াম আকার কত থাকবে- তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে প্রিমিয়ামের আকার কৃষকের ক্ষেতের মোট ফসল মূল্যের অর্ধেক হতে পারে। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কৃষককে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক বীমা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ১৯৭৭ সালে দেশে সর্বপ্রথম শস্য বীমা কার্যক্রম শুরু করেছিল সরকার। প্রিমিয়ামের তুলনায় ৫০০ গুণ ক্ষতির বোঝা কাঁধে নিয়ে ১৯৯৫ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় শস্য বীমা কার্যক্রম। এরপর ২০০৩ সালের দিকে পাইলট আকারে শুধু হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকায় আবার শুরু হয় এ কার্যক্রম। আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা কার্যক্রম বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে। বাংলাদেশেও সর্বপ্রথম শস্য বীমা চালু হতে যাচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী এগোলে এর সুফল কৃষক পাবেনই।   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির দিক বিবেচনা করে সরকার কৃষি বীমা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বীমার আওতায় আনা গেলে বাংলাদেশে কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতকে বীমার আওতায় আনার বিষয়টি চিন্তা করতে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কৃষি খাতকে বীমার আওতায় আনা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং কৃষকরা ঋণের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ দেশে নিত্য ঘটনা। এতে দেশের গোটা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিকে অধিকতর উৎপাদনশীল খাতে পরিণত করা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি উভয় বীমা খাতকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি খাতে বীমা কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কৃষি খাত কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যবিমোচনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এদেশে ফসলহানি ও অর্থনীতির ক্ষতি নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। এ ধরনের দুর্যোগ কখনও কখনও তাদের ঋণের দুষ্টচক্রে আটকে পড়তে বাধ্য করছে।   কৃষকরাই বাংলাদেশের প্রাণস্বরূপ। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে দেশ সমৃদ্ধ হবে। প্রতি বছর বন্যা, খরা, কালবৈশাখী ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে হাজার হাজার টন ফসলের ক্ষতিসাধন হয়। এর ফলে কৃষকের দৈন্যতা বৃদ্ধি পায়। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য কৃষি বীমা চালু করা একান্ত জরুরি। কৃষি বীমার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে এবং কৃষিকাজে নতুন উদ্যম ও অনুপ্রেরণা লাভ করবে। ফুলে-ফলে, শস্যে ভরে উঠবে দেশ। কৃষক ফিরে পাবে তার গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছের হারানো ঐতিহ্য। মুরাদপুর সদর, দিনাজপুর।     একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-১১-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1