সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পরিবারের সাথেই থাকেন আরিফা আর অর্পিতা

প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, নভেম্বর ২২, ২০১৪
একুশে সংবাদ : ‘পেটে ক্ষুধা থাকলে মানুষ চুরি করতেও বাধ্য হয়, আর কাজ থাকলে ভদ্রভাবে বাঁচার চেষ্টা করে’ এমনটিই বললেন আরিফা। সঙ্গে থাকা অর্পিতা বললেন, ‘আমাদের কাজের যোগ্যতা আছে। তাই যোগ্যতা অনুযায়ী আমরাও কাজ করে খেতে চাই।’ কথা হচ্ছিল আরিফা আর অর্পিতার সঙ্গে। আরিফা (১৯) পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। পরে পারিপার্শ্বিক কারণে তার আর পড়াশোনা হয়নি। বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। মা আর এক বিধবা বোনের সঙ্গে থাকেন মিরপুরের কাজীপাড়ায়। আয় সামান্য হলেও আরিফার আয়ের প্রতি চেয়ে থাকে মা আর বোন। এদিকে অর্পিতাও (১৭) তার পরিবারের সঙ্গে থাকেন মিরপুরের কাজীপাড়ায়। পড়াশোনা করেছেন সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত। তবে তাকেও বইতে হয় সংসারের খরচের বড় অংশ। আরিফা আর অর্পিতা আমাদের সমাজের অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর দুই সদস্য মাত্র। দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাত পেতে টাকা তোলাই ওদের মূল রোজগার। তবে তাদের এই হাত পাতার ভঙ্গি সহজ নয়, একটু অন্যরকম, একটু জোরালো। আপনারা কেন সবার কাছে হাত পেতে ‘জোর জবরদস্তি’ করে টাকা নেন? কাজ করেন না কেন? তারা দুজনেই একই কণ্ঠে বলে ওঠেন- কাজ পেলে কেউ এভাবে টাকা চায়? তারা জানান, আমরা যখন লেখাপড়া করতে স্কুলে যেতাম, আমাদের আচরণ দেখে সবাই হিজড়া বলতো। ইচ্ছা করতো মেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে। অথচ বাড়ি থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল আমরা ছেলে। এভাবে চলতে থাকে কিছুদিন। পরে যখন বড় হলাম, বুঝতে শিখলাম আমরা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সবাই আমাদের আলাদা করে রাখে, কারো সঙ্গে মিশতে পারি না। তখন আর আমাদের পড়াশোনা হয়নি। জানতে চাইলাম, টাকা তুলে কী করেন? উত্তরে একজন বললেন, আমরা দু’জনে টাকা তুলে আমাদের গুরুকে দেই। গুরু সমান তিন ভাগ করেন। একভাগ গুরু নেন, দুইভাগ আমাদের দেন। আরিফা বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর অর্থকষ্ট, সেই সঙ্গে আশেপাশের কটুকথায় আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। অর্পিতার টাকার সমস্যা খুব বেশি না থাকলেও পারিপার্শ্বিক কারণেই পড়াটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি।’ আপনাদের কি কোনো ধরনের কাজের যোগ্যতা আছে? জিজ্ঞেস করতেই দু’জন বলে উঠলেন, আমরা খুব ভালো সেলাইয়ের কাজ জানি। সমাজসেবা অধিদপ্তর, মিরপুর-১০ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমরা গার্মেন্টেসে গিয়েছি চাকরির জন্য। কিন্তু আমাদের চাকরি দেয়নি বরং আজেবাজে ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো অফিসে পিয়নের জন্যও আমাদের নেয় না। আমাদের যদি একটা চাকরির সুযোগ কেউ দিতো তবে এসব ছেড়ে দিতে পারতাম। কোনোমতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা ছাড়া আমাদের আর কিছুই চাওয়ার নেই। পরিবার নিয়েই থাকেন আরিফা আর অর্পিতাতাদের মার্জিত ভাষায় গুছিয়ে কথা বলার ভঙ্গি দেখে যে কেউ অবাক হবেন। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের সাজগোজ, কথাবার্তা এতো সুন্দর কীভাবে হলো? উত্তরে অর্পিতা জানালেন, পারিবারিক শিক্ষা। পরিবার আমাদের যথেষ্ট ভদ্রভাবে গড়ে তুলেছে। কিন্তু পেটের দায়ে আজ রাস্তায় নেমেছি। আপনাদের যে সংঘ আছে সেখান থেকে নিয়ে যেতে চায় না? আরিফার উত্তরে জানলাম, পরিবার অনেক কষ্ট করে তাদের ধরে রেখেছে। কিন্তু শেষ বেলায় এসে নামতে হয়েছে পথে। এর কাছে পাঁচ টাকা, তার কাছ থেকে দশ টাকা তুলে দিন চালাতে হচ্ছে। কারো কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণও সহ্য করতে হয় টাকা চাইতে গিয়ে। তখন আমরা বাধ্য হই খারাপ ব্যবহার করতে। বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি আছে। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন। কিন্তু আরিফা আর অর্পিতার মতো অনেকেই শুধু হিজড়া বলেই যোগ্যতা থাকলেও কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা আদাইয়ের কৌশল। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-১১-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1