সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হলুদ চাষে স্বাবলম্বী ১০ হাজার কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, নভেম্বর ২১, ২০১৪
একুশে সংবাদ : এক সময় মাঠ জুড়ে যেসব জমিতে ধান দেখা যেত সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ। আগে শুধু বসত বাড়ির আশপাশে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতে হলুদের চাষ হতো। এখন মাঠ জুড়ে পরিকল্পিতভাবে হলুদের আবাদ হচ্ছে। মাগুরার বিভিন্ন ফসলের মাঠের এ দৃশ্য এখন সবার কাছে বেশ পরিচিত। উৎপাদন খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় মাগুরায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে হলুদ চাষ। হলুদের ছোঁয়ায় মাগুরা সদরসহ তিনটি উপজেলার দশ সহস্রাধিক মানুষের জীবন নতুন করে সেজেছে। ‘হলুদ বিপ্লব’ ভাগ্য ফিরিয়েছে এসব অভাবী মানুষের। মাগুরা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, মাগুরায় এবার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫২০ হেক্টর, মহম্মদপুরে ১৪০ হেক্টর, শ্রীপুরে ১৪০ হেক্টর ও শালিখা উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হলুদ আবাদ হয় সদর উপজেলায়। কৃষি বিভাগ হেক্টরে প্রায় দুই মেট্রিকটন হলুদ উৎপাদনের আসা করছেন। সে হিসেবে মাগুরায় এবার এক হাজার ৭১০ মেট্রিকটন হলুদ উৎপাদন হবে। হলুদ চাষিরা জানান, চৈত্র মাসের শেষ দিকে ও বৈশাখ মাসের শুরুতে হলুদ চাষের উপযুক্ত সময়। আট থেকে নয় মাস পর হলুদ পাওয়া যায়। অনেকেই আছেন যাদের পতিত জমি আছে কিন্তু চাষ করেন না। এমন জমি একর প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে অনেকে হলুদের চাষ করছেন। আবার উৎপাদিত হলুদের তিন ভাগের এক ভাগ জমির মালিককে দিয়েও অনেকে হলুদ চাষ করেছেন। হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে কৃষক বিপ্লব বিশ্বাস হলুদ চাষের জন্য প্রথমবার বীজ কিনলেই চলে। পরে নিজের ক্ষেতের বীজ দিয়েই আবাদ করা যায়। হলুদে রোগবালাই নেই বললেই চলে, তাই কীটনাশকের খরচও নেই। গড়ে এক শতক জমিতে হলুদ চাষে খরচ পড়ে ৫০০টাকার মতো। ঐ জমিতে সাড়ে তিন থেকে চার মণ হলুদ পাওয়া যায়। প্রতি মণ হলুদ বিক্রি হয় বারো থেকে পনেরশ’ টাকায়। এ ভাবে কৃষকদের শতক প্রতি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। কৃষকেরা জানান, আগে বিক্রির জন্য হলুদ নিয়ে ক্রেতাদের পিছন পিছন ঘুরে বেড়াতে হতো। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন পাইকাররা বাড়ি এসে হলুদ কিনে নিয়ে যান। সরেজমিন দেখা গেছে, মাগুরা জেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্বে মহম্মদপুর-মাগুরা সড়কের পাশে ছায়া ঘেরা কয়েকটি গ্রাম। এর একটির নাম পুখরিয়া। এই গ্রাম ইতিমধ্যে হলুদের গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এই গ্রামের মাঠগুলোয় এখন শুধু হলুদ আর হলুদ। এসব মাঠে কয়েক বছর আগেও সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খেত। এখন এখানে ধানের বদলে গাঢ় সবুজ রঙের হলুদ গাছের সমারোহ। গত কয়েক বছর ধরে হলুদের বাজার চাঙ্গা থাকায় এ এলাকার কৃষকরা হলুদ চাষে ঝুঁকছেন। অনেকে অন্যান্য ফসলের খেতের আইলে হলুদ আবাদ করে বাড়তি উপার্জন করছেন। হলুদের বহুমুখী ব্যবহার ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হলুদ প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করায় হলুদের কদর এখন আগের চেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। হলুদ চাষের সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে মাগুরার এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। মাগুরার আলোক দিয়ার পুখরিয়া গ্রামের হলুদ চাষি আফতাব শিকদার রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি অনেক বছর ধরে হলুদ চাষ করে আসছেন। আগে চাষ করতেন নিজ পরিবারের সারাবছরের চাহিদা মেটাতে। আর এখন তিনি হলুদ আবাদ করছেন ব্যবসায়িক উদ্দেশে। এ বছর তিনি পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে তিনি হলুদ চাষ করেছেন। এ জমিটুকুতে হলুদ চাষে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। মৌসুম শেষে তিনি এক লাখ টাকার উপরে আয় করবেন বলে আশা করছেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে হলুদ চাষে এগিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি। একই গ্রামের হলুদ চাষি আলম বিশ্বাস জানান, হলুদ বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। এ বছর তিনি চল্লিশ হাজার টাকার জমি কিনেছেন বলে জানান। মহম্মদপুর উপজেলার নওহাটা গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন, ‘আগে আমাদের অনেক অভাব ছিল। বাড়ির আশপাশে অনেক পতিত জমি পড়ে থাকত। এসব জমিতে হলুদের আবাদ শুরু হওয়ার তার সংসারে অভাব দূর হয়েছে। এখন আমি ছেলে-মেয়েদের স্কুলেও পাঠিয়েছি।’ মহম্মদপুরের বালিদিয়া ব্লকের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘হলুদ চাষ এ অঞ্চলের কৃষকদের কর্মমূখী করে তুলেছে। তারা ভাগ্য বদলে ফেলেছেন নিজের চেষ্টায়। তার ব্লকের আওতায় দুই সহস্রাধিক হলুদ চাষি রয়েছেন।’ মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এ এলাকায় প্রায় সব গ্রামে এখন ব্যাপক হারে হলুদের আবাদ হচ্ছে। প্রায় দশ হাজারেরও বেশি কৃষক প্রতি বছর হলুদ চাষে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয়।’ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১১-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1