সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কবিতার নয়নপুর : সাযযাদ কাদির

প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, অক্টোবর ২৮, ২০১৪
একুশে সংবাদ : নোয়াখালী নামের শহরটি বিলীন হয়েছে বঙ্গোপসাগরের গর্ভে, তবে তার স্মৃতি রয়ে গেছে জেলার নামে। পোড়াবাড়ি নামের গ্রামটি কবে নিশ্চিহ্ন হয়েছে যমুনার গ্রাসে, কিন্তু তার নামটি রয়ে গেছে চমচম নামের কড়া পাকের এক মিষ্টান্নে। ঐতিহ্যবাহী পরগনা বিক্রমপুরের পুরো পরিচয়ই বদলে গেছে প্রায়, প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নতুন নাম মুন্সীগঞ্জ। এভাবে নতুন নামের আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছিল এক আদি নাম, কিন্তু একটি কাব্যিক আয়োজন পুনরুদ্ধার করেছে সেই প্রায়-বিস্মৃত নামটি। ঢাকার কমলাপুর থেকে ৬৩ কি.মি. উত্তরে গাজীপুরের বারুইপাড়া মৌজার নয়নপুরে যখন নির্মিত হয় নতুন রেলস্টেশন তখন ভাওয়াল পরগনার রাজকীয় ঐতিহ্যকে মনে রেখে তার নামকরণ হয় রাজেন্দ্রপুর। রেল যোগাযোগের সূত্র ধরে ক্রমশ প্রাধান্য পেতে থাকে নতুন নামটি। নিকটবর্তী স্থানে সেনানিবাস স্থাপিত হলে তার নামও রাখা হয় রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস। তারপর রাজেন্দ্রপুর (আরপি) গেট, রিসোর্ট ও অন্যান্য নির্মিত ও নির্মীয়মান স্থাপনার নামকরণ সূত্রে প্রতিষ্ঠা পায় নতুন নাম, আর হারিয়ে যায় ‘নয়নপুর’ নামটি। রাজেন্দ্রপুর নামটার সঙ্গেই বা আমার পরিচয় কবে থেকে? সেই কবে ষাটের দশকে প্রিন্স সাইকেলের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ছড়ায় পেয়েছিলাম এই নাম - “ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং বেজে চলে বেল / ছুটে চলে ছুটে চলে প্রিন্স সাইকেল / যেতে চাও বহু দূর? টঙ্গী, রাজেন্দ্রপুর? সন্ধ্যার আগে ঠিক ফিরে আসা চাই / প্রিন্স সাইকেলে চলো কোনও ভয় নাই!” ছড়াটি লিখেছিলেন কবি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এবার ‘বাংলা কবিতা দিবস’ পালন নিয়ে বেশ ঝক্কিতে পড়েছিল বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। গত ১০ বছর ধরে দিবসটি তারা পালন করে আসছেন নানা ভাবে। তাদের উদ্যোগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এবং বহির্বাংলায় পালিত হয় এ দিবস। ঘরোয়া আয়োজন থেকে শুরু হওয়া এ উদযাপন গত বছর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সৃষ্টি করেছিল ব্যাপক সমারোহ। এ বছর পরিকল্পনা ছিল রংপুর, নীলফামারী ও লালমনির হাটকে ঘিরে। কিন্তু এক আকস্মিক ঘটনায় তা স্থগিত হওয়ায় আহ্বান আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। কিন্তু সেখানেও দেখা দেয় এক আকস্মিক পরিস্থিতি। নয়নপুরের কচি-কাঁচা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা-অধ্যক্ষ, কচি-কাঁচার আসরের খ্যাতিমান সংগঠক ইকবাল সিদ্দিকীর জোরালো আহ্বান ছিল আগে থেকেই। তার ওই জোর, দৃঢ় সদিচ্ছা, সাংগঠনিক দক্ষতা, আন্তরিকতার কারণেই শেষ পর্যন্ত প্রাণময় উজ্জ্বলতা নিয়ে বিপুল সাফল্য ও সার্থকতার সঙ্গে ‘বাংলা কবিতা দিবস’ উদযাপিত হয় নয়নপুরে। আর ওই সঙ্গে প্রকাশ, প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নয়নপুর হয়ে ওঠে এক আন্তর্জাতিক নাম। তবে এক দিনে হয়ে ওঠে নি এত সব যোগাযোগ। গত ১৯শে এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমার একক গ্রন্থমেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইকবাল সিদ্দিকী উল্লেখ করেছিলেন কচি-কাঁচা একাডেমিতে বইমেলা আয়োজনের কথা। সেখান থেকেই ধারণাটা আসে মাথায়। শুরু হয় কথাবার্তা। ওদিকে শারদীয়া পূজার কথা বলে কলকাতার কবিরা সময় চাইলেন মাস খানেকের। বারবার পিছিয়ে যেতে থাকে অনুষ্ঠানের তারিখ। ইকবাল সিদ্দিকী দিলেন জোর তাগিদ। সুতরাং ২৯শে অগাস্ট সকালে বাবলিকে নিয়ে মহাখালীতে গিয়ে উঠে পড়ি সম্রাট ট্রান্সলাইনের বাসে। সে বাস দেখতে বদখত, কিন্তু চলে বেশ। জয়দেবপুর চৌরাস্তার পর ময়মনসিংহগামী এবড়োথেবড়ো মহাসড়কও পাড়ি দেয় অবলীলায়। নয়নপুরে কচি-কাঁচা একাডেমির ঠিক সামনে নামিয়ে দেয় আমাদের। নেমেই দেখি ইকবাল সিদ্দিকী দাঁড়িয়ে, অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য। চা-নাশতাও প্রস্তুত। চায়ে চুমুক দিতে-দিতে কথাবার্তা শুরু হয় কর্মপরিকল্পনা নিয়ে। একটু পরে যোগ দেন ইকবাল সিদ্দিকী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল হক। সেদিন মতবিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত হয়, অনুষ্ঠান শুরু হবে ১০টায়, শেষ হবে ৫টায়। বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চক্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী অনুষ্ঠানে সভাপতি ও অতিথি থাকবেন না, উদ্যোক্তার স্বাগত ও আয়োজকের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর এক বা একাধিক সঞ্চালক এগিয়ে নিয়ে যাবেন স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠান। ১০-৩০ মিনিটে উদ্বোধন হবে বইমেলার। প্রাঙ্গণের এক প্রান্তে বড় ছাতাটির নিচে থাকবে দিনব্যাপী চা-টা। ১৭ই অক্টোবরের অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনার রূপায়ন হয়েছে প্রায় অক্ষরে-অক্ষরে। সঞ্চালনার দায়িত্ব একাই পালন করেছেন সিরাজুল হক। বইমেলা উদ্বোধন করেন গাজীপুরের ‘দৈনিক গণমুখ’-এর সম্পাদক অধ্যাপক আমজাদ হোসেন ও দুই শিক্ষার্থী। এই দুজনকে বেছে নেয়া হয়েছিল আমার প্রস্তাব অনুযায়ী। বলেছিলাম, বই পড়ায় সবচেয়ে অমনোযোগী দুজনকে দিয়ে উদ্বোধন হোক। আমার উদ্দেশ্য ছিল পরিস্কার, উৎসাহ দিয়ে ওদেরও আমার মতো বইয়ের পোকা বানানো। সবার আগে, ১৬ই অক্টোবর বিকালে নয়নপুরে পৌঁছান সাতক্ষীরা থেকে আগত তিন কবি শুভ্র আহমেদ, গাজী শাহজাহান সিরাজ ও নিশিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর কবি শ্মশান ঠাকুরের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে যান কবি চঞ্চল মাহমুদ, সোহরাব ইফরান ও দীপ আর বইপত্র নিয়ে দিব্যপ্রকাশ, বাড কমপ্রিট, জ্ঞানবিতরণী, শব্দশিল্প, অ্যাডর্ন, ঝিঙেফুল ও সাহিত্যদেশ প্রকাশনা সংস্থার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভ্যর্থনা জানান ইকবাল সিদ্দিকী ও তার সহযোগীরা। এ সময় যোগাযোগে সমন্বয় করেন ‘গোড়াই ফোর্স’-এর উপদেষ্টা আবদুল আলীম। সকলের থাকার ব্যবস্থা হয় নিকটবর্তী পিকনিক কটেজ ‘উৎসব’-এ। ১৭ই অক্টোবর সকালে ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, মির্জাপুর ও নিকটবর্তী জনপদের কবি-সাহিত্যিকেরা এসে যোগ দেন। ১০টার পর উদ্বোধন হয় বাংলা কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানমালা, সাড়ে ১০টায় উদ্বোধন হয় বইমেলার। প্রকাশকরা ছাড়াও লেখকরাও বই সাজিয়ে রেখেছিলেন টেবিলে। উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য আমাকেই দিতে হয়। এরপর আয়োজক হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইকবাল সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, আলোচনা চলেছে একের পর এক। উপস্থিত প্রায় সকল কবি-ই কিছু না কিছু বক্তব্য রেখেছেন কবিতা পাঠের আগে। সমবেত শ্রোতা-দর্শকদের বিপুল করতালি ও অভিনন্দনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে বাংলা কবিতা দিবসের স্বপ্নসুন্দর সময়ের। ‘কবিতার জয় হোক’ সম্ভাষণে শুরু হয় বিদায়ের পালা। তখনও কবিদের অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত অনেকে। ছোট একটি মেয়ে ফুল হাতে এগিয়ে আসে, জিজ্ঞেস করে, আর দেখা হবে না কবিদের সঙ্গে? পাশে থেকে এগিয়ে যায় একজন। তার হাত ধরে বলে, না, এটাই শেষ দেখা নয়। এরপর থেকে নয়নপুরে বারবার দেখা যাবে কবিদের। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৮-১০-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1