সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বছরজুড়ে উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, অক্টোবর ২৫, ২০১৪
একুশে সংবাদ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার শুরু। এরপর সংঘর্ষ, গোলাগুলি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও অবরোধ-ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছে বারবার। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে কিংবা দায়ী ছাত্রদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও অস্থিরতা কমানো যাচ্ছে না। এতে নতুন করে শিক্ষাজটে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষ: এ বছরের ১২ জানুয়ারি শাহ আমানত ছাত্রাবাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ও শিবির। এতে ছাত্রশিবিরের ছাত্রাবাস শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুন হায়দার নিহত হন। আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন। রাতেই ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এ দুই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে উভয় পক্ষ শতাধিক গুলিবিনিময় করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসও বন্ধ ঘোষণা করে। সব মিলিয়ে এ বছর ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে অন্তত পাঁচবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অস্থিরতা ছাত্রলীগেও: কেবল গত ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর—এই সাত দিনে তিন দফা গুলিবিনিময় করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। দুটি পক্ষই মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। পক্ষ দুটির মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ছাড়া আ জ ম নাছির উদ্দিন–সমর্থিত ছাত্রলীগের কয়েকটি বগিভিত্তিক সংগঠনও একাধিকবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ায়। সব মিলিয়ে চলতি বছর ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে অন্তত ২০ বার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ছাত্রশিবিরের নৈরাজ্য: বন্ধ থাকা দুটি ছাত্রাবাস খুলে দিয়ে বৈধ শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার দাবিতে ৩১ আগস্ট থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট শুরু করে ছাত্রশিবির। ধর্মঘট শুরুর দিন থেকে ৯ সেপ্টেম্বর শাটল ট্রেনে ককটেল হামলা চালায় তারা। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। অন্যদিকে, ১০ সেপ্টেম্বর ছাত্রশিবিরের ককটেল হামলায় ১২ জন শিক্ষকসহ অন্তত ১৪ জন আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে ব্যবস্থা: বছরজুড়ে সংঘর্ষ, হামলা ও মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগে গত মাসে ২৭ জনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৭ জন ছাত্রলীগ ও পাঁচজন ছাত্রশিবিরের কর্মী। কিন্তু এর পরও অস্থিরতায় জড়িয়ে পড়েছেন ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। অনির্ধারিত ছুটি: বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার ছুটি থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ঈদুল ফিতরের ছুটিও চার দিন বাড়ানো হয়। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা অবরোধে সাত দিন অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নির্ধারিত ও অনির্ধারিত ছুটি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি ২১৮ দিন। এ কারণে টানা দুই বছরে ক্লাস-পরীক্ষায় মারাত্মক ব্যঘাত ঘটায় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। বলির পাঁঠা শিক্ষার্থীরা: ৩১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের চারটি বিভাগেই কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। অন্যদিকে, কয়েকবার স্থগিতের পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ক্লাস হয়নি আইন অনুষদেও। এ ছাড়া মৃত্তিকাবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, রাজনীতিবিজ্ঞান, আরবি, উদ্ভিদবিজ্ঞানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রায় সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটেই ক্লাস কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আরও দুই মাসের শিক্ষাজটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা: ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ২৭ অক্টোবর। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন এক লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। সংগঠনগুলোর চলমান কর্মসূচির কারণে এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা নিয়েছে। হতাশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা: বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং স্টাডিজ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের এমবিএর শিক্ষার্থী লিজা সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রায় দুই মাস ধরে আমাদের কোনো ক্লাস হচ্ছে না।’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষাজট অনেকাংশ কমিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে শিক্ষাজটে পড়বে।’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে অনুরোধ (!): বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যেন ছাত্রসংগঠনগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হয়। পরীক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এক লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ তারা যেন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসে।’ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-১০-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1