সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সাম্প্রতিক বিশ্বের আতঙ্ক ‘ইবোলা’

প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, অক্টোবর ২১, ২০১৪
একুশে সংবাদ : ইবোলা আতঙ্ক শুধু আফ্রিকায় নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও গোটা আফ্রিকায় এটা এখন মরণাতঙ্কের অপর এক নাম। সেখানে প্রতি মাসে ইবোলা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। আক্রান্তের তালিকার শীর্ষে থাকা সিয়েরালিওনের সর্বশেষ জেলা কোইনাদুগুতেও ইবোলা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ সংবাদ প্রচারের পর বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইবোলা সঙ্কট মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে, যার সবগুলোই আফ্রিকা মহাদেশের। এখনও এ সব দেশে ইবোলা আক্রান্ত রোগী না মিললেও যে কোনো সময় ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা আরও জানিয়েছে- চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে ৪ হাজার। এর রোগীদের সংক্রমণে স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের মধ্যে ২৩৬ জন মারা গেছে। শুধু সিয়েরালিওনে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২৪৯ জন ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২ হাজার ৪৫৮ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এ পর্যন্ত লাইবেরিয়া, সিয়েরালিওন ও গিনিতে ৩ হাজার ৮৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এরিক ডানকান নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় ইবোলা শুধু আফ্রিকায় নয়, সচেতনতার ফাঁক গলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও ঢুকে পড়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একজন এবং বৃহস্পতিবার মেসেডোনিয়ায় ইবোলায় এক ব্রিট্রিশ নাগরিক মারা গেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশের সকল স্তরের মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন। শুধু তিনি নন বিশ্বের বড় বড় বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন- ইবোলা ভাইরাস বায়ু প্রবাহিতও হতে পারে। আর তাই যদি হয় তাহলে তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এর আগে বিশ্লেষকরা অবশ্য বলেছিলেন ইবোলা বাতাসে নয় বরং রক্ত, ঘাম, বমি, মুখ, প্রসাব, লালা, বীর্য তথা আক্রান্ত ব্যক্তির যে কোনো ধরনের সংস্পর্শে ছড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাপক আক্রান্ত দেশ ছাড়াও নাইজেরিয়া, সেনেগাল, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র হুমকিতে আছে। কারণ, এ দেশগুলোতে বিচ্ছিন্নভাবে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, দুই মাসের মধ্যে ইবোলা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ভয়াবহ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। গত এক মাসে প্রত্যেক সপ্তাহে প্রায় এক হাজার লোক আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। কোনো দেশই এর থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়, যৌক্তিক কারণে আমরাও ঝুঁকির আশঙ্কা মুক্ত নই। ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশেও বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ ইবোলা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রবেশ পথে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে ২১টি টিম কাজ করছে।’ দেশের সবকটি বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে জোর অভিযোগ উঠছে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে- কি এই ইবোলা? ইবোলা হলো- ভাইরাস ঘটিত মানুষের রোগ। সাধারণত লক্ষণগুলো ধরা পড়ে ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর। প্রাথমিকভাবে মূল লক্ষণগুলো হচ্ছে- জ্বর, গলা ব্যথা, পেশির ব্যথা এবং মাথা ধরা। দ্বিতীয় ধাপে গা গোলানো, বমি, ডায়রিয়াসহ মানুষের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। নির্দিষ্ট এই লক্ষণ ছাড়াও অনির্দিষ্ট অনেক লক্ষণে এটা প্রকাশ পেতে পারে। এর কোনো প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। বিশ্বাস করা হয় বাদুড় নিজে আক্রান্ত না হলেও এই রোগ বহন করে ও ছড়ায়। মানব শরীরে একবার সংক্রমণ ঘটলে মানুষের মধ্যে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়। মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্ব প্রথম ১৯৭৬ সালে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। যেহেতু এর প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার হয়নি এবং এটা প্রাণঘাতী, সেহেতু আক্রান্ত অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়ের এই সময়ে আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। সাথে সাথে এটা যাতে অনাক্রান্ত দেশ বা অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে সে দিক বিবেচনা করে সর্বদিক দিয়ে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে জনগণ ও সরকারের। আমাদের দেশের বহু মানুষ যেহেতু আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে রয়েছেন এবং নিয়মিত দেশে ফিরছেন সেহেতু আমাদের দেশের সচেতনতার ব্যুহও হওয়া উচিত মজবুত। কোনো ভাবেই অসচেতন হওয়া যাবে না, আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে প্যানিক সৃষ্টি না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১০-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1