সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

অবকাঠামো তৈরি করা খুবই জরুরি : সৈয়দ আলমগীর

প্রকাশিত: ০৮:২৩ এএম, অক্টোবর ১৯, ২০১৪
একুশে সংবাদ : সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আনতে খুবই আন্তরিক। কিন্তু, বিদেশি বিনিয়োগ সেই তুলনায় বাড়ছে না। অবকাঠামো তৈরি করতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। অবকাঠামো তৈরি করা খুবই জরুরি। তাই সরকারকে আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র খুব শিগগিরই আমুল পাল্টে যাবে। এসিআই-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আলমগীর এ অভিমত দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে রিটেইলিং বা বিপণন ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছেন। ঈর্ষণীয় স্থানে নিয়ে গেছেন বিপণনকে। একটি শ্লোগানই কোনো পণ্যকে মার্কেট লিডারে পরিণত করতে পারে, বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই তা প্রমাণ করেছেন। প্রায় দুই দশক আগে তিনি সৃষ্টি করেন এক কালজীয় স্লোগান, ‘একশ ভাগ হালাল’। এই স্লোগান দিয়ে তিনি দেশে হৈ চৈ ফেলে দেন। আলোচিত এই স্লোগানই অ্যারোমেটিক সাবান অন্যসব নামি ব্রান্ডের সাবানগুলোকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। স্লোগানটির কারণেই তখন অ্যারোমেটিক সাবান মার্কেট লিডারে পরিণত হয়। তার এই সাফল্যের কারণেই তাকে বাংলাদেশের ফিলিপ কটলার বলা হয়। অবশ্য ফিলিপ কটলারও তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ফিলিপ কটলার তার সর্বশেষ গ্রন্থের একটি চ্যাপ্টারে সৈয়দ আলমগীরের সাফল্য এবং তার কার্যক্রম নিয়ে লিখেছেন। সম্প্রতি সৈয়দ আলমগীর এসিআইর তেজগাঁও কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং সম্ভাবনা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘দেশে আপাতত কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। তাই অর্থনীতি যেভাবে এগোনোর কথা, সেভাবে এগোচ্ছে না। সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ বাড়ছে না। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য যে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তা নেই। তাই বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না।’ তবে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে- তা খুবই আশাব্যঞ্জক বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশে অনেক সংকট আছে। তার মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি খুব একটা খারাপ নেই। দেশে অনেক উন্নয়নকাজ হচ্ছে। উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীতেও এটি অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির প্রধান শক্তি হচ্ছে- গার্মেন্টস শিল্প। এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অর্থনীতির চাকা এই শিল্পটি-চালু রেখেছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ করছে গার্মেন্টে। অর্থনীতির চাকা তারাই চালু রেখেছে। তারাই বড় অবদান রাখছে অর্থনীতিতে।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা চালু করার কথা ভাবছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জিএসপি সুবিধায় আমাদের খুব একটা লাভ হয় না। কারণ, জিএসপি সুবিধার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন হিসেবে আদায় করে নেয় ক্রেতারা। তাই জিএসপি সুবিধা বন্ধ করায় বাংলাদেশের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তারপরও এই সুবিধা চালু হলে ভালো।’ ডলারের রিজার্ভ নিয়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করেন সৈয়দ আলমগীর। তবে বিনিময় হার নিয়েও তিনি তেমন অসন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম কমায় যারা শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করেন, তাদের জন্য ভালো। কিন্তু যারা বিদেশে পণ্য রপ্তানি করছেন, তারা একটু অসুবিধায় আছেন। অন্যদিকে বিদেশ থেকে যারা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন-তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার পরও আমাদের অর্থনীতি অনেক ভালো অবস্থানেই রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি দেশের ‍উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ভালো অবকাঠামো। ভালো অবকাঠামো করতে পারলে একটি দেশ এমনিতেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আগামীতে সরকার দেশের ভেতর দিয়ে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির ব্যবস্থা করতে পারে। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। তখন দেশ এমনিতেই এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীকে কেন্দ্র করেই দেশের বেশিরভাগ শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। তাই সবাই রাজধানীতেই থাকতে চান। ফলে রাজধানীর লোকসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে ঢাকা দিনদিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে, নগরীর ভেতর এবং আশপাশ থেকে শিল্পকারখানা বাইরে সরিয়ে ফেলতে হবে। এজন্য নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম শিল্পজোন তৈরি করতে হবে। তার আগে সেখানে গড়ে তুলতে হবে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাস্তাঘাট তৈরি করে শিল্পকারখানা সেখানে ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলতে হবে।’ সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধাও সেখানে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকার বাইরে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ভালো স্বাস্থ্যসেবা, সন্তানের লেখাপড়া এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পাওয়ার কারণেই সবাই ঢাকায় থাকতে চান। ঢাকার বাইরে এগুলো মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে, কেউ ঢাকায় থাকতে চাইবেন না। তাই সরকারকে এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন কাজের সন্ধানে মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় আসছে। কারণ, গ্রামে কাজ নেই। গ্রামে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ফলে মানুষ আর কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসবে না। একই সঙ্গে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।’ সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এসিআই পণ্য ব্যবহার করছেন। যমুনা গ্রুপে আমি যখন ছিলাম তখন হালাল সাবান বাজারে নিয়ে এসেছিলাম। সেই সাবান দেশের কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করেছেন।’ সৈয়দ আলমগীর এখন আটা-ময়দা, লবণ, কয়েল এবং খাদ্য সামগ্রী নিয়ে কাজ করছেন। এগুলোও দেশের ঘরে ঘরে ব্যবহার হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এসিআই অ্যারোসল মার্কেটের ৮৬ শতাংশ এবং স্যাভলন ৮০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে। গুণগত মানের কারণেই এসিআই লবণ পরপর তিনবার সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। ‘এসিআই পণ্যের গুণগত মান এবং প্যাকিং প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের।’ পণ্যের বাজারজাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে যেসব পণ্য ব্যবহার করতে পারব, আমি সে পণ্যই ক্রেতাদের দিতে চাই।’ পণ্যের মূল্য নির্ধারণেও ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি তারা মাথায় রাখেন বলে জানান তিনি। ক্রেতারা সাধ্যমতো যেন পণ্য কিনতে পারেন, সে দিকটি মাথায় রাখেন তারা। সৈয়দ আলমগীর জানান, কিছুদিন আগে বিপণন নিয়ে ভারতের মুম্বাই শহরে এশিয়ান রিটেইলিং কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্বের ৪০টি দেশের আড়াইশ’ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। কংগ্রেসে তাকে বাংলাদেশের বেস্ট রিটেইলিং লিডার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। মার্কেটিংয়ের গুরু ফিলিপ কটলার তার সর্বশেষ গ্রন্থ প্রিন্সিপ্যাল অব মার্কেটিং-এ সৈয়দ আলমগীরের কার্যক্রম এবং তার সৃষ্ট একশ’ ভাগ হালাল স্লোগানটা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বাংলাদেশে বিপণনে সৈয়দ আলমগীরের অসামান্য সাফল্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন তার গ্রন্থে। তিনি ‍উল্লেখ করেছেন, ‘শুধু একটি মাত্র স্লোগান কীভাবে একটি পণ্যকে বিক্রির শীর্ষে নিয়ে যায়। বিশ্বের লাখ লাখ বিপণনের ছাত্রছাত্রী সৈয়দ আলমগীরের সাফল্য সম্পর্কে পড়বে।’ সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘এসিআই কিছু মূল্যবোধ মেনে চলে। কারণ তারা মনে করে, যেসব মানুষের কোনো মুল্যবোধ নেই, তাদের কোনো মূল্য নেই। এসিআইয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তার টেবিলে একটি কিউবেটর আছে। তাতে মূল্যবোধগুলো লেখা আছে। মূলবোধগুলো হচ্ছে-স্বচ্ছতা, আদর্শ, সঠিক ওজন, সঠিকমূল্য এবং গুণগত মান। এই মূল্যবোধের মাধ্যমে এসিআইয়ের প্রত্যেকটি কর্মী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ নিয়ে খুবই আশাবাদী সৈয়দ আলমগীর। তার মতে বাংলাদেশের মানুষ খুব বুদ্ধিমান। চরম বিপদেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে বাংলাদেশের মানুষ। তার দাবি-বিশ্বের কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। কর্মবীর এই মানুষটি আগামীতে দেশের মানুষের কল্যাণে আরো অনেক বড় কাজ করতে চান। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিতে চান। মানুষের সেবা করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করতে চান। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-১০-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1