সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চীনের সমাজতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুথে

প্রকাশিত: ০৫:৩০ এএম, অক্টোবর ১৫, ২০১৪
একুশে সংবাদ : হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যখন সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে, তখন একটি প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে যে, চীনে কি আদৌ পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? কিংবা চীন কি তার সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারবে? সংস্কারের নামে চীন কি তার রাষ্ট্র কাঠামো টিকিয়ে রাখতে পারবে? সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় এ বিষয়গুলো বহুল আলোচিত। দুই সপ্তাহ হলো যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যা কিনা 'অকুপাই সেন্ট্রাল' হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে, দ্বিতীয় সপ্তাহ এরই মধ্যে পার করেছে। এ আন্দোলন যে খোদ চীনের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই মার্কিনি মিডিয়ায় তাই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে- কোন পথে এখন চীন? চীনের ব্যাপারে পশ্চিমা সমাজ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পৃথিবীর বড় 'সমাজতান্ত্রিক' দেশ চীনের দিকে দৃষ্টি এখন অনেকের। যারা সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের কিছুটা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সংস্কার প্রক্রিয়া (গ্লাসনোস্ত ও পেরেস্ত্রাইকা) চালু হওয়ার অনেক আগেই চীন তার সংস্কার প্রক্রিয়া চালু করেছিল। চীনে অর্থনৈতিক সংস্কার এসেছে। রাজনৈতিক সংস্কার আসেনি। কিন্তু গরবাচেভ খুব দ্রুত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সফল হননি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছিল। চীন তার অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে শুধু এগিয়েই যায়নি, বরং চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। প্রয়াত চীনা নেতা দেং জিয়াও পিং ছিলেন চীনা অর্থনৈতিক সংস্কারের জনক। তার প্রণীত এক দেশ দুই অর্থনীতি নীতির আলোকে হংকং চীনের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অর্থাৎ হংকং তার পুঁজিবাদী অর্থনীতি বজায় রেখেও চীনের অংশ হতে পেরেছে। আজ এত বছর পর হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন প্রমাণ করল হংকংবাসী আরও গণতন্ত্র চায়। যদিও তথাকথিত এ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে, তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে, অন্যান্য দেশের মতো (মিসর) হংকং এ 'অকুপাই মুভমেন্ট' করছে। যদিও 'অকুপাই সেন্ট্রাল'-এর সঙ্গে অন্যান্য 'অকুপাই মুভমেন্টের' কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা 'অকুপাই সেন্ট্রাল' হংকংয়ে সরকার পরিবর্তনের কোনো আন্দোলন নয়। বরং বলা যেতে পারে, এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এক ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। আরও বেশি গণতন্ত্র। ২০১৭ সালে হংকংয়ে প্রধান প্রশাসনিক পদের জন্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯৭ সালে হংকং চীনের অন্তর্ভুক্ত হলেও হংকং তার অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্য এখনও বজায় রেখেছে। অর্থাৎ এখানে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। তবে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব এখনও চীনের হাতে। অর্থাৎ চীন এখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ চীনের প্রতি দায়বদ্ধ। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানেই। হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা চাচ্ছে এখানে পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন হোক। অর্থাৎ 'এক মাথা এক ভোট' ভিত্তিতে দলগতভাবে এখানে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হংকংয়ের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে চীন যে সংস্কারের কথা বলেছে (প্রধান প্রশাসনিক ব্যক্তির নির্বাচন), সেখানে দলগতভাবে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। চীনা কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা তৈরি করে দেবে এবং জনগণ ওই তালিকা থেকে একজনকে বেছে নেবে। চীনা কর্তৃপক্ষের এ প্রস্তাব গণতন্ত্রকামীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা মধ্য হংকংয়ের কিছু সংখ্যক এলাকা দখল করে নিয়ে অকুপাই মুভমেন্টের জন্ম দিয়েছে। হংকংয়ের অকুপাই মুভমেন্টের ইতিহাস খুঁজে দেখা গেছে, এ আন্দোলন তরুণদের দ্বারা পরিচালিত হলেও এর তাত্তি্বক হচ্ছেন অধ্যাপক বেনই তাই নামে এক ব্যক্তি। তিনি হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কম্পারেটিভ অ্যান্ড পাবলিক ল'-এর আইনের অধ্যাপক। তিনি দুই বছর আগে তত্ত্বগতভাবে এ ধরনের একটি আন্দোলনের কথা বলেন। অহিংস পদ্ধতিতে, অনেকটা গান্ধীবাদী নীতির আলোকে তিনি হংকংয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। তার এই গান্ধীবাদী নীতি অনুসরণ করেই তরুণরা, যাদের অধিকাংশই ছাত্র- এ অকুপাই মুভমেন্টের জন্ম দিয়েছে। হংকংয়ের ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস এ আন্দোলনে নিজেদের জড়িত করেছে। আর মজার ব্যাপার, এর নেতৃত্বে রয়েছে ১৭ বছরের এক যুবক, তার নাম জসুয়া ওং। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এ আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। চীনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্রাটেজি, তারই অংশ হিসেবে জন্ম হয়েছে হংকং 'অকুপাই সেন্ট্রাল' আন্দোলনের। চীনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন এ পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র এনডিআই বা 'ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি' নামক সংস্থার মাধ্যমে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীদের প্রশিক্ষণ ও অর্থায়ন করেছে। অধ্যাপক বেনই তাইকে তারাই তৈরি করেছে এবং অধ্যাপক তাইকে সামনে রেখেই গঠন করা হয়েছে সেন্টার ফর কম্পারেটিভ অ্যান্ড পাবলিক ল' নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, একটি গবেষণা সংস্থা। এনডিআইয়ের অর্থায়নে হংকংয়ের মার্টিন লির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। মার্টিন লি নিজে ২০১৫ সালে ও অধ্যাপক তাই ওয়াশিংটন সফর করেছেন একাধিকবার। শুধু তাই নয়, হংকংয়ে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে যে রেফারেন্ডাম বা গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল, তারও অর্থায়ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। হংকংয়ের ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ (পাঁচ ভাগের একভাগ) ওই গণভোটে অংশ নিয়েছিল। মিসরেও যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের গণভোটের আয়োজন করেছিল। লক্ষ করলে দেখা যাবে, ইউএসএইডের হংকংয়ে সাহায্যের পরিমাণও বেড়েছিল। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ডলার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, হংকংয়ে একটি তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। উদ্দেশ্য, মূল চীনে এ আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে দেয়া ও চীনে চূড়ান্ত বিচারে চীনা সরকারের পতন ঘটানো। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্র হংকংয়ে গণতন্ত্র চায় বটে(?); কিন্তু সেখানকার জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। হংকংয়ে ঘণ্টাপ্রতি যে বেতন দেয়া হয় (৩ দশমিক ৬০ ডলার), তা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের গড় বেতনের অর্ধেক। শুধু তাই নয়, হংকংয়ে জীবনযাত্রার খরচ এত বেশি যে, অনেকের খরচ মেটানোর জন্য দুটো চাকরি পর্যন্ত করতে হয়। গণতন্ত্র সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে পারবে না। গণতন্ত্র বোধকরি হংকংয়ের সমস্যার কোনো সমাধান বয়ে আনতে পারবে না। সুতরাং হংকংয়ের এ আন্দোলন কী আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে চীনের ওপর? গণতান্ত্রিক সমাজ বলতে আমরা যা বুঝি, সেই সংস্কৃতি হংকংয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। চীনা নেতৃত্ব এটা মানবে না। কেননা, এতে করে চীনের অন্যান্য অঞ্চলে এ আন্দোলনের প্রভাব পড়তে পারে। তবে ২০১৭ সালে হংকংয়ের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নির্বাচনের ব্যাপারে আরও কিছুটা ছাড় দিতে পারে চীন। প্রার্থীদের যে তালিকা চীন অনুমোদন করবে, সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। হংকংয়ের বিকল্প হিসেবে সাংহাই, শেন ঝেন কিংবা গুয়াংঝো এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। হংকংয়ের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখন আর সাধারণ চীনাদের আকৃষ্ট করে না। বরং শেন ঝেন কিংবা গুয়াং ঝোর মতো এলাকায় 'নতুন অর্থনৈতিক জোন' গঠিত হয়েছে, যেখানে জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শুধু তাই নয়, চীনা নেতৃত্ব চীনের অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে চীনের অর্থনীতিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যেই চীন হবে বিশ্বের প্রথম অর্থনীতি। ফলে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে চীনা নেতৃত্ব সজাগ রয়েছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং অত্যন্ত প্রাগমেটিক। তিনি চীনা অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করে দেবেন। জাতীয় স্বার্থকে তিনি গুরুত্ব দেবেন। একটি 'মার্কিনি ষড়যন্ত্র' সম্পর্কে তিনি ও তার পলিট ব্যুরোর সদস্যরা সচেতন। চীনা অর্থনৈতিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে টিপিপি (ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) চুক্তি করতে চাচ্ছে, তাতে চীনকে রাখা হয়নি। এটা চীনবিরোধী একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে, চীনা নেতৃত্ব এটা বোঝে। তাই চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে জন্ম হতে যাচ্ছে একটি 'নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা', যা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আঘাত করবে। জন্ম দেবে বিকল্প একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার। এ লক্ষ্যেই ২০১৬ সালে ব্রিকস ব্যাংক আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তাই হংকংয়ের তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন যে পরোক্ষভাবে চীনা নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার শামিল, এটা চীনা নেতারা উপলব্ধি করেছেন। চীনে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র বিনির্মাণ সম্ভব নয়। চীন গণতন্ত্রের জন্য উপযুক্ত নয়। চীনে তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চীনা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সেখানেই লুক্কায়িত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর এখন চাচ্ছে চীনও একাধিক চীনা রাষ্ট্রে বিভক্ত হোক। তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনা সেনাবাহিনী এখনও পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। চীনা সেনাবাহিনী এখনও পার্টির নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। ফলে চীনে হংকংয়ের মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলন জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে অদূর ভবিষ্যতে চীনে একটি 'সিঙ্গাপুর মডেল' এর জন্ম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। চীন এখন আর ধ্রুপদী মার্কস দ্বারা পরিচালিত হয় না। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত খাতের বিকাশ ঘটিয়ে 'সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি' নামে নতুন এক অর্থনীতি চালু করেছে। এর ফলও তারা পেয়েছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতি। সুতরাং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন হংকংয়ের ব্যাপারে চীনা নীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। চীন একটি বড় দেশ। প্রায় ৫৫ জাতি-উপজাতি নিয়ে গড়ে উঠেছে এ চীনা রাষ্ট্রটি। ২২টি প্রদেশ, ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, ৪টি বিশেষ অঞ্চল ও ১৪৭টি বিশেষ এলাকা নিয়ে যে চীনা রাষ্ট্র, রাজনৈতিক সংস্কার তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এ রাষ্ট্রটি ভেঙে যেতে পারে। এটা বলা যায় একুশ শতক হচ্ছে চীনের। এ শতকে চীন অন্যতম একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৫ সালে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। এর পরিমাণ হবে শতকরা ৩০ শতাংশ। ভারতের অবস্থান দাঁড়াবে তৃতীয়, শতকরা ১৪.৩ ভাগ। জাপান তার অর্থনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। সুতরাং পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চীন যে একটি 'হুমকি' তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং 'চীনের ডানা' কেটে ফেলতে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা যে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। কেননা বিশ্বে চীনা কর্তৃত্ব যদি বেড়ে যায়, তাহলে তা মার্কিনি স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। আফ্রিকায় চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যেখানে জ্বালানি সম্পদ রয়েছে, সেখানে চীন বড় বিনিয়োগ করেছে (যেমন সুদান)। মধ্য এশিয়ার জ্বালানি সম্পদসমৃদ্ধ দেশগুলোর সমন্বয়ে চীন গড়ে তুলেছে 'সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন' (এসসিও)। রাশিয়াও এসসিওর সদস্য। এ এসসিওকে অনেকে সাবেক ওয়ারশ সামরিক জোট (১৯৮৫ সালে অবলুপ্ত) এর বিকল্প ভাবছে। এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বিকল্প একটি 'বিশ্বব্যাংক' এর কথাও বলছে চীন। ফলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব যতটুকু 'সফল' হয়েছিল, চীনের ক্ষেত্রে অতটুকু সফল হবে বলে মনে হয় না। চীনকে ভাঙাও সহজ হবে না। চীনে দরিদ্রতা আছে, এটা সত্য। এ দরিদ্রতা এরই মধ্যে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই করছেন চীনা নেতারা। আইএমএফ সর্বশেষ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১৪ সালে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিমাণ যেখানে ১৭ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার (এক হাজার মিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন) সেখানে চীনের অর্থনীতির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ ২০০৫ সালে চীনের অর্থনীতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অর্ধেক। আইএমএফ বলছে, ২০১৯ সালে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ হারে বাড়বে। এখন চীনা নেতারা যদি এ অর্থনৈতিক শক্তিকে চীনা জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যয় করেন, তাহলে সেখানে অসন্তোষ জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। গণতন্ত্র চীনের জন্য কোনো 'মডেল' নয়। চীন তার নিজস্ব স্বকীয়তায় সমাজ বিনির্মাণ করছে। অর্থনীতিই হচ্ছে নয়া চীনা সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য। রাজনীতি এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে না। তাই পশ্চিমা সমাজের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থাকলেও ১৯৮৯ সালের মতো আরেকটি 'তিয়েন আন মেন স্কয়ার' এর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুতরাং আজ হংকংয়ে যা হয়েছে, তার প্রভাব চীনা সমাজে ফেলবে না। যতদিন পর্যন্ত চীন অর্থনীতিতে তার সফলতা অব্যাহত রাখবে, ততদিন পর্যন্ত চীনারা বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার চাইবে না। তাই চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও ক্ষীণ। চীন ও হংকং এক নয়। হংকংয়ে চীনা রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে আলোচনায় কিছুটা ছাড় দিলেও চীনের মূল রাজনীতিতে এর আদৌ কোনো প্রভাব থাকবে না। * ড. তারেক শামসুর রেহমান একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৫-১০-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1