সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ফতোয়াবাজদের দৌরত্ব------ বগুড়ার শাজাহানপুরে সমাজচ্যুত ৬ পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪
বগুড়া প্রতিনিধিঃ সাংসারিক বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি। একপর্যায়ে উৎসুক প্রতিবেশিদের আগমন এবং স্বামী উত্তপ্ত মাথায় উচ্চারণ করলো তালাক। কথাটি চলে গেল মাতব্বরদের কানে। পরিবারটির বিরুদ্ধে জারিহলো হিল্লা বিয়ে এবং দুররা মারার ফতোয়া। তাতে রাজি না হওয়ার ফল সমাজচ্যুত(একঘরে)। বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিযনের বিন্নাচাপড় গ্রামে এভাবে সমাজচ্যুত হয়ে বসবাস করছে কমপক্ষে ৬টি পরিবার। পরবর্তিতে তাদের সমাজে আর ঠাঁই হয় নাই। সমাজপতিদের ভয়ে এবং লজ্বায় মুখ খুলতে পারেণনা আরো অনেক পরিবার। ফতোয়াবাজ আর মাতব্বরদের দৌরত্বে গুমরে কাঁদছেন এই উপজেলার গ্রাম গুলোর অনেক নিরিহ পরিবার। সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে আবারো সমাজে ফিরে সামাজিক ভাবে বাঁচতে চায় পরিবার গুলো। ফতোয়াবাজদের দৃস্টান্ত মুলক শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসি। ১৭বছর যাবৎ সমাজচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাজুল ড্রাইভার। ৪থেকে ৭বছরের মধ্যে রয়েছেন এরফান, মিন্টু, দেলোয়ার হোসেন, জিয়াউর, মিরাজুলের পরিবার। প্রত্যেকের সংসারে আছেন সন্তান, জামাই, নাতি নাতনি। শ্রম বিক্রী এবং সমাজের কোন লোকের দোকান থেকে কিছু কিনতে পারলেও আচার অনুষ্ঠানে তাদের রাখা হয়না। ফতোয়া দাতাদের মধ্যে রয়েছেন গ্রামের মসজীদের ইমাম আনিছ মওলানা, অন্য গ্রামের ইমাম আহম্মদ মওলানা, ওই ইউনিযনের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বাঘা, সাবেক আরেক সদস্য আকবর, মাতব্বর তাজুল, মোমিন, ইকবাল, ইউছুফ। সরোজমিনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানায়, দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পরে তুচ্ছ ঘটনায় বিভিন্ন সময় স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় প্রতিবেশিরা ভীর করে ঝগড়া শোনর জন্য। রাগের মাথায় স্ত্রীর প্রতি তারা তালাক শব্দটি উচ্চাণ করেছেন। কথাটি রাগের মাথায় বললেও মন থেকে বলেননি বলে তারা জানান। সেই কথা শুনে প্রতিবেশিদের কেউ মাতব্বরদের কাছে বলে। মাতব্বররা তাদের শুদ্ধি হওয়ার জন্য মওলানাদের কাছে গিয়ে উপায় জেনে আসতে বলে। গ্রামের মসজীদের ইমাম আনিছ মওলানা এবং অন্য গ্রামের ইমাম আহম্মদ মওলানার কাছে গেলে হিল্লে বিয়ের কথা বলেন। পর পুরুষের সঙ্গে বিয়ে এবং ৩মাস পরে হিল্লে বিয়ের স্বামী যদি আবার তালাক করে তাহলে আগের স্বামীকে দুররা মারার পরে আবারো বিয়ের মাধ্যমে শুদ্ধি হওয়া যাবে। ফতোয়ায় রাজি না হওয়ায় ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বাঘা, সাবেক আরেক সদস্য আকবর, মাতব্বর তাজুল, মোমিন, ইকবাল, ইউছুফ গ্রাম্য শালিশের মাধ্যমে তাদের সমাজচ্যুত করে। সমাজের মানুষের কাছে শ্রম বিক্রী এবং তাদের দোকান থেকে কেনা কাটা করা গেলেও, সামাজিক আচার অনুষ্টানে তাদের রাখা হয়না। কোরবানির ঈদে তাদের বাড়িতে সমাজের মাংস পর্যন্ত আসেনা। বঞ্চিত করা হয় বিয়ে, মিলাদ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে। তাজুল ড্রাইভারের মেয়ের বিয়েতে আসেনি সমাজের কেউ। তার ৬ষ্ঠ শেনীতে পড়ুয়া নাতনি মনজেলাকে দেয়া হয়নি উপবৃত্তির কার্ড। ফতোয়ার নির্যাতনে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তাদের বছরের পর বছর। সমাজে ফিরিয়ে নিয়ে সামাজিক ভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবার গুলো প্রশাসনের কাছে দাবী রেখেছেন। এলাকাবাসি জানান, ফতোয়া দেয়া অপরাধ তারা শুনেছেন। আর সংসার ভাঙার ফতোয়া যারা দেয় তারা অপরাধী এবং জঘন্য পাপী। এইসব ব্যক্তিদের দৃস্টান্তমূলক শাস্তিও দাবী করেছেন তরা। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল মোত্তালেব ফেরদৌস জানান, বিষয়টি তিনি আগে যানতেন না। প্রয়োজনে যাবেন এবং সমাধানে যা করণীয় তাই করবেন। শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত খান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।     একুশে সংবাদ ডটকম/নজরুল ইসলাম মিন্টু/বগুড়া প্রতিনিধি/২৬.০৯.১৪।

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1