গোপালগঞ্জে গ্রীস্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্ববধানে এই সাফল্য এসেছে। এর মাধ্যমে জেলায় গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই টমেটো উৎপাদন বৃদ্ধি করে জেলার চাষীরা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অধিক লাভবান হতে পারবেন।
গোপালগঞ্জ গবেষণা বিভাগ থেকে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে জেলার টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর ও মুকসুদপুর উপজেলায় গ্রীস্মকালীন টমেটোর তিনটি উপযোগিতা যাচাই প্লট করা হয়। বাংলাদেশে গ্রীস্মকালীন টমেটোর অভিযোজন পরীক্ষা, উৎপাদন ও কমিউনিটি বেসড পাইলট প্রডাকশন প্রোগ্রাম কর্মসূচি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি হাইব্রিড টমেটো-৪,বারি হাইব্রিড টমেটো-৮,বারি হাইব্রিড টমেটো-১০, বারি হাইব্রিড টমেটো-১১ জাতের টমেটোর উপযোগিতা যাচাই করা হয়। এই চারটি জাতই গোপালগঞ্জে উপযোগিতা যাচাইতে বাম্পার ফলন দিয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নিলফা গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ মোল্লা বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে আমাদের বিনামূল্যে বীজ, সার, ছত্রাকনাশক দেয়া হয়েছে। এছাড়া তারা টমেটো চাষের সব ধরণের পরামর্শ, সহযোগিতা ও খরচ দিয়েছে। কৃষি গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ নিয়মিত পরিদর্শণ করেছেন। তারা কখনো-কখনো নিজেরাই মাঠ পরিচর্যা করেছেন। তাদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আমি এই টমেটো ফলাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রথম বীজ তলায় টমটোর বীজ ফেলি। জুলাই মাসে চারা গজানোর ২৫ দিন পর টমেটোর চারা বীজ তলা থেকে তুলে ১০ শতাংশ জমিতে রোপণ করি । রোপনের মাত্র ২ মাসের মাথায় টমেটোর ফলন পেয়েছি। প্রতিদিনই টমেটো পাকছে। এখান থেকে টমেটো সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছি। প্রতি কেজি টমেটো পাইকারী ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। প্রতি শতাংশে সাড়ে ৪ মন টমেটো ফলন পাব বলে আশা করছি।
একই গ্রামের কৃষক শাহজাহান মোল্লা বলেন, গ্রীস্মকালীন টমেটোতে পরিচর্যা অনেক বেশি করতে হয়। হাতে ধরে টমেটো ফলাতে হয়। প্রচলিত সবজির চেয়ে এই টমেটো বাজারে তিনগুন বেশি দামে বিক্রি হয়। এটি উচ্চ মূল্যের ফসল। গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষাবাদে লাভ বেশি। তাই আগামী মৌসুমে আমি টমেটো চাষ করব। আব্দুল্লাহর টমেটো ক্ষেত দেখে আরো অনেকেই এই টমেটো চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহসীন হাওলাদার বলেন, বীজ থেকে শুরু করে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষ প্রকল্পে কৃষককে বিনামূল্যে সব ধরণের সহযোগিতা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমিতে শেষ পর্যন্ত গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষে সফল হয়েছি। এটি মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় আমাদের একটি বড় সাফল্য। প্রতি শতাংশে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষে ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ প্রতি সাড়ে ৪ মন টমোটো উৎপাদিত হবে। এই টমেটো ১০ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হবে। খরচ বাদে প্রতি শতাংশে কৃষকের লাভ হবে ৭ হাজার টাকা। আমাদের দেশে গ্রীস্মকালীন টমেটোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই টমেটোর চাষাবাদ বৃদ্ধি পেলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। পাশাপাশি কৃষক লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গোপালগঞ্জে মাঠ গবেষণায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমরা তাদের এই সাফল্যকে সম্প্রসারণ করব। আগামী বছর এ জেলায় লাভজনক গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারিত হবে। এটি আমাদের কৃষির জন্য একটি সু সংবাদ।
একুশে সংবাদ/ বা.স.স/ রখ
আপনার মতামত লিখুন :