বউয়ের চোখে স্বামী
একুশে সংবাদ: সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছি, এমন সময় দেখি বউ সামনে ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে চোখ মেলতে দেখেই বলে উঠল, ‘কত বড় সাহস মহিলার! আমাকে বলে কিনা আমার স্বামীর ভুঁড়ি বেশি। দেখতে একেবারে কাকু কাকু লাগে। বলি, আমার স্বামীর মতো হ্যান্ডসাম দেখতে কোনো ছেলে এই এলাকায় আছে নাকি?’
বিয়ের পর এই-ই প্রথম আমার বউয়ের মুখে এমন সুনাম শুনলাম। গর্বে বুকটা ফুলে উঠল; কিন্তু বউয়ের হাতে ঝাঁটা আছে, তাই বেশি বুক ফুলিয়ে রাখা উচিত নয়—ভেবে চুপচাপ আবার শুয়ে রইলাম।
আমাকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে দেখে বউ বলে উঠল, ‘এই, তুমি এখনো মড়ার মতো শুয়ে আছ কেন? এক্ষুনি ওঠো বলছি। এই, তোমার বয়স কত? হ্যাঁ, এই বয়সে এই এত্ত বড় ভুঁড়ি বানিয়েছ। তোমার লজ্জা করে না? আর আয়নায় কি নিজের বাঁদরের মতো মুখখানা একবারও দেখেছ? বলি বাজারে কি ফেসওয়াশ নেই? নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারো না?’
বুঝলাম, বউয়ের মাথা আজ গরম আছে। তাই চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। খাবার টেবিলে বসে আছি। দেখি, বউ গরম গরম বিরিয়ানি রান্না করেছে। যেই না বিরিয়ানির বাটি নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছি, তখনই বউ কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে বলল, ‘খবরদার, যদি বিরিয়ানি ধরেছ। নিজের ভুঁড়ি দেখে লজ্জা করে না? এই নাও তোমার জন্য রুটি করে এনেছি। এখন থেকে সকালে, রাতে রুটি খাবে। আর হ্যাঁ, অফিস যাওয়ার আগে জিমে ভর্তি হয়ে যাবে। রাতে তুমি ঘরে এলে যেন শুনি তুমি জিমে ভর্তি হয়ে এসেছ। না হলে কিন্তু খবর করে দেব।’
বিয়ের পর থেকেই বউ আমাকে কথায় কথায় খবর করতে চায়। দাদি বলতেন, বউকে ভয় করা ভালো। সংসারের উন্নতি হয়।
আমিও বউকে ভয় করি। তাই অফিস যাওয়ার আগে ঘরের সামনের জিম সেন্টারে ভর্তি হয়ে তারপর গেলাম। অফিস থেকে ফিরে দেখি আমার বিছানার ওপর নানা ব্যান্ডের ফেসওয়াশ, লোশন, আর নাইট ক্রিম রাখা।
বউকে ডেকে বললাম, ‘এসব কী?’
বউ বলল, সব নাকি আমার জন্য। আজ থেকে যেন নিয়মিত এসব মাখি, না হলে আমার খবর আছে।
রাতে আবার রুটি খেয়ে বসে আছি। এমন সময় বউ বাটিতে করে কী যেন নিয়ে এসে সারা মুখে মাখিয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা হচ্ছে খাঁটি দেশি মসুর ডালের পেস্ট। কয়েক দিন রাতে এভাবে মুখে লাগিয়ে রাখলেই দেখবে, চেহারা এক্কেবারে নায়ক নায়ক হয়ে যাবে।
বউয়ের কথায় হুঁ-হাঁ কিচ্ছু না করে চুপচাপ বসে রইলাম। টানা তিন মাস বউয়ের কথায় জিম আর রূপচর্চা করে শরীর আর চেহারা অনেকটাই তখন পরিবর্তন হয়েছে। একদিন বিকেলে ছাদে বসে আছি। এমন সময় বউ কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে বলল, ‘এত্ত বড় সাহস, মহিলারা বলে কী—আমার স্বামী নাকি খুব হ্যান্ডসাম। একদিন তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
বউ আমার দিকে তাকিয়ে অগ্নিমূর্তি হয়ে বলল, ‘খবরদার, কাল থেকে যদি জিমে গেছ, তাহলে খবর করে দেব।
রাতের বেলা বসে আছি খাবারের টেবিলে। চারপাশে তাকিয়ে দেখি, কোথাও রুটির বাটি নেই। বউ পাশেই বসে ছিল। হঠাত্ বলে উঠল, ‘খাবারের টেবিলে কী খুঁজেছ? সামনে বিরিয়ানি দেখতে পাচ্ছ না? বিরিয়ানি খাও বলছি?
এক প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে বললাম, ‘আর খাব না। বেশি বিরিয়ানি খেলে মোটা হয়ে যাব।’
বউ সঙ্গে সঙ্গে সব বিরিয়ানি প্লেটে দিয়ে বলল, ‘তুই মোটা হলে হবি, তাতে কী আছে! তুই মোটা হলেও আমার স্বামী, চিকন হলেও আমার স্বামী (বউ অতিরিক্ত রেগে গেলে মাঝে মাঝে তুই-তোকারি করেও বলে)।
বউয়ের কথায় সামনে রাখা সব বিরিয়ানি খেয়ে উঠলাম। রাতে বিছানায় পেট উঁচু করে শুয়ে আছি এমন সময় বউ কাছে এসে বলল, ‘শোনো, তুমি এমনিতেই অনেক সুন্দর। তোমাকে আর কিছু মাখতে হবে না। ফেসওয়াশ মেখে মেখে মুখের অবস্থা কী করে ফেলেছ! দেখতে একেবারে চায়নিজ চায়নিজ লাগে। কাল থেকে ওসব মাখবে না, ঠিক আছে!
আমি বললাম, ঠিক আছে।
একুশে সংবাদ//ক.ক.ন//০৭.১০.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :