AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস


Ekushey Sangbad

০৭:৩২ পিএম, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস

গাজীপুর: আমাদের বাংলাদেশ বৈচিত্রময় এক আবহাওয়ার দেশ। আমাদের রয়েছে ছয়টি বৈচিত্রময় ঋতু। আর এই প্রত্যেক ঋতুর রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। ছয়টি ঋতুর অন্যতম একটি ঋতু হচ্ছে হেমন্ত। আর এই হেমন্তের ছোঁয়ায় আগমন ঘটে শীতের। তবে সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক নগরায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ এবং গাছের রস। এক দশক আগেও শীতের মৌসুমে সকালে রসের হাড়ি খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জাম সহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়তো। সকালে গাছিরা খেজুরের রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতো।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের প্রয়াত আব্দুল বারেকের ছেলে বাদশাহর সাথে (২৫) সাথে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে তার বাবাকে রস সংগ্রহ করতে দেখেছে সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন প্রচুর রস আসতো বাড়ীতে। খেজুরের গুড়ের গন্ধে মৌ মৌ করতো পুরো বাড়ি কিন্তু বর্তমানে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। একসময় তারা কয়েকশো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতো কিন্তু এ বছর মাত্র ২০- ২৫ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে। রস সংগ্রাহক গাড়ারন গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আগে অনেক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতাম কিন্তু এখন গাছও নাই তেমন রসও সংগ্রহ করতে পারিনা। কয়েকটা গাছ কেটেছি শুধু নিজের পরিবারের খাওয়ার জন্য। গাছ তো নাই তাই আগের মত রস সংগ্রহ করতে পারিনা। এখন আর দেখা পাওয়া যায়না গাছিদের দল বেধে রস বিক্রির হাকডাক। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় এবং খেজুর গাছ।

শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা।কিন্তু এখন আর মিষ্টি রোদে তেমন একটা পাওয়া যায়না শীতের সুস্বাদু পানীয় খেজুরের রস। শীত মৌসুমের শুরুতেই গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন গাছিরা। শীত মৌসুমের প্রতিদিনই সকালে গাছিদের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে দেখা যায়।এক সময় এই পেশার ওপর অনেক মানুষ নির্ভশীল ছিল।তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এই খেজুরের রসের ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।এক সময় গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে খেজুর গাছ ছিল।

কিন্তু বর্তমানে সভ্যতার ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। সেই সাথে কমে গেছে রস সংগ্রহের গাছির সংখ্যাও।খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের নিয়ম হলো প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশের কাছাকাছি ভালো করে পরিস্কার করে গাছের ভেতরের রস বের করার জন্য গাছের সাদা অংশ বের করতে হবে।

এরপর পরিস্কার করা সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় মাটির পাত্র যেমন ঘটি, কলস ইত্যাদি দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছিদের কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করতে হয়। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় কলসি বাঁধে রসের জন্য। আবার কাকভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকায়।

কেউ কেউ এই রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে (কাচা রস)খাওয়ার জন্য বিক্রয় করে আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস দিয়ে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও রসালু গুড় তৈরী করার কাজ শুরু করেন।

গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সুস্বাদু এই খেজুরের রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে। যা দিয়ে তৈরী হয় মুখরোচক খাবার পায়েস ও হরেক রকমের পিঠা। শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের মৃত বেছু সেখের ছেলে ছাবেদ আলী মুন্সী বলেন, প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে রস সংগ্রহ করে আসছি।
পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে আমরা আর্থিক ভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।সাধারণত একটি খেজুর গাছের রসের উপযুক্ত হতে প্রায় ৫-১০ বছর সময় লেগে যায়।আর একটি গাছ থেকে রস পাওয়া ২০-২৫ বছর পর্যন্ত। তবে প্রতিটি গাছে কি পরিমাণ রস পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে গাছীর দক্ষতা এবং গাছের উপর।খেজুরের রস একটি উপকারী পানীয়।

এতে রয়েছে প্রচুর এনার্জি বা শক্তি রয়েছে। এই রসকে প্রাকৃতিক ‘এনার্জি ড্রিংক’ও বলা যেতে পারে। এই রসে গ্লোকোজের পরিমাণ বেশি থাকে।খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও খাওয়া যায়। গুড়ে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। সাধারণত যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, খেজুরের রস তাঁদের জন্য দারুণ উপকারী। খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।খেজুরের রস চুলায় জাল দিয়ে তৈরি করা হয় পাটালী গুড়। খেজুরের রসের এই নতুন পাটালী গুর দিয়ে তৈরি করা হয় মজাদার শীতকালীন বিভিন্ন রকমের পিঠা ও পায়েশ।

খেজুরের রসে তৈরি জনপ্রিয় পিঠার মধ্যে বাপা পিঠা, খেজুরের রসের দুধচিতই পিঠা সকলের কাছে প্রিয়। এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন বর্তমানে খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপক। শিশু বাচ্চারাও এই রস পান করার বায়না করে কিন্তু বাজারে এখন আগের মত খেজুর রস বিক্রি হয়না। দু-একজন বিক্রি করলেও চড়া দামের কারণে ও স্বল্পতা থাকায় চাহিদা মিটানো যায় না।

জনসাধারণের সাথে কথা বললে তারা আফসোস করে বলেন, আগে শীতের দিন আসলে মিষ্টি রোদে বসে খেজুরের রস খেতাম।কিন্তু এখন সারা গ্রাম খুজেও কোথাও খেজুরের গাছ এবং গাছী কারো সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সকলেরই খেজুর গাছ লাগানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খেজুরের রসের কথা শুধু বই পুস্তকে পড়বে কিন্তু বাস্তবে তা পাবে না।

এস.সানি // ০৬.০২.২০২০

Link copied!