তুরাগে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব
গাজীপুর:তাবলিগ জামাতের তিন দিনব্যাপী ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে। বাদ ফজর পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ও আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় জমায়েত শুরু হয়। আগামী রোববার (১২জানুয়ারী) দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি।
(১০ জানুয়ারি) শুক্রবার লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়ঃ
টঙ্গীর তুরাগ তীরে প্রথম পর্বের ইজতেমায় প্রথম দিনে শুক্রবার লাখো মুসল্লি একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ছাড়াও ঢাকা, উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরসহ আশপাশের লাখ লাখ মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নেন।
ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। নামাজ শুরু হয় ১টা ৪০ মিনিটে। এতে ইমামতি করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি মুসল্লিদের কণ্ঠে ছিলো, ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান।
দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমার পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেক মুসল্লি বাড়ির ছাদ, নৌকা, গাড়ির ছাদে মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে সম্ভব করতে পরেছেন সেখানেই পাটি, চটের বস্তা ও খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। এর আগে সকাল থেকে ইজতেমামুখী মানুষের স্রোত নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মুসুল্লিরা জুমার নামাজে শরিক হন।
কনকনে শীত আর শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে টঙ্গীতে ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। বুধবার বিকেল থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের স্রোত আরও বাড়তে থাকে। মুসুল্লীরা ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ইজতেমা মাঠে সমবেত হয়েছেন।
মাওলানা যোবায়ের পন্থির ইজতেমা মাঠের মুরুব্বি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, রায়বেন্ডের মুরব্বি মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশিদ আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু করেন।
জুমার নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। পবিত্র জুম্মার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লি এক সাথে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকে গাজীপুর, টঙ্গীসহ আশপাশের লোকজন ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজের জামাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসেন।
ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেননি। দুপুরের পর থেকে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দানের পাশের রাস্তা ও ফুটপাতে পলিথিনে সামিয়ানা টানিয়ে তার নিচেই অবস্থান নিয়েছেন। তবে এশার নামাজ পর্যন্ত ইজতেমামুখী মানুষেরে স্রোত অব্যাহত ছিল।
ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়কারী মুফতী জহির ইবনে মুসলিম জানান, রোববার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ইজতেমা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলবে ধারাবাহিক আমল ও হেদায়েতের বয়ান।
বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনে বয়ান করবেন বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিরা। কে কখন বয়ান করবেন, কে জুমার নামাজ পড়াবেন ও কে আখেরি মোনাজাত পরিচালন করবেন, সেসব বিষয়ে ইজতেমার ময়দানে বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের মাশওয়ারা (বিশেষ পরামর্শ সভা) অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাশওয়ারায় আলমি শুরার সদস্য ছাড়া কাকরাইল ও রায়বেন্ডের মুরব্বিদের পাশাপাশি শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও বিভিন্ন দেশের মারকাজের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। মাশওয়ারায় সিদ্ধান্ত হয়েছে শুক্রবার ইজতেমা মাঠে বৃহত্তর জুমার নামাজের ইমামতি ও রোববার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।
কে কখন বয়ান করেনঃ
শুক্রবার জুমার পর বয়ান করেন শেখ ইউনুস আলী তিউনিসি, আসরের নামাজের পর বয়ান করেন রায়বেন্ডের শায়খ মাওলানা ইহসানুল হক, বাদ মাগরিব আলমি শুরার সদস্য ও তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাট। বিদেশি খিত্তায় বয়ান ইংরেজিতে অনুবাদ করবেন ডক্টর সানাউল্লাহ খান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন আলিগড়ের ডক্টর ফারাহিম। বিশেষ বয়ান করেন বেঙ্গালুরের মোহাম্মদ ফারুক।
শনিবার (১১ জানুয়ারি):
বাদ ফজর মুম্বাই মারকাজের মুরব্বি মাওলানা আবদুর রহমান উপস্থিত সাথীদের উদ্দেশে আম বয়ান করবেন। পরে আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা ইবরাহীম দেওলা, আরবের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বয়ান মাওলানা আকবর শরীফ, জোহরের পর মাওলানা ইসমাইল গোধরা, বাদ আসর শায়খ মাওলানা জোহায়ারুল হাসান, বাদ মাগরিব মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। এদিন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাঠে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা আহমদ লাট।
রোববার (১২ জানুয়ারি):
বাদ ফজর হেদায়েতি বয়ান করবেন মাওলানা জিয়াউল হক, আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। সিদ্ধান্ত মতে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।
এস.সানি // ১১.০১.২০২০
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :