একুশে সংবাদ: ডালিম বা বেদানা আমাদের খুব পরিচিত একটি ফল।এটি পুরোপুরি ভাবে পাকলে ভিতরে টুকটুকে লাল রঙের হয়।এটি দেখতে যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি খেতে খুব সুমিষ্ট ও পুষ্টিকর।এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী গুনাগুণ। তবে কিছুটা দামি হওয়ার কারণে অনেকেই ডালিম খেতে চান না। নিয়মিত ডালিম খেলে তা দেহের বহু উপকার পাওয়া যায়।ডালিমের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অসাধারন গুণাবলীর জন্য স্বতন্ত্র। এর মধ্যে অধিক মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। নিয়মিত তাই ডালিম খাওয়া উচিত। ডালিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেয়া যাক: ডালিমের পুষ্টিগুণ: ডালিম মজাদার ও পুষ্টিকর একটি ফল। ফলটির প্রচুর পুষ্টিগুণরয়েছে । এক কাপ ডালিম দানায় রয়েছে আপনার দৈনন্দিন চাহিদর ৩০ শতাংশ ভিটামিন সি, ৩৬ শতাংশ ভিটামিন কে, ১৬ শতাংশ ভিটামিন বি৯ ও ১২ শতাংশ পটাশিয়াম। ছোট বড় সকলের অনেক প্রিয় এই ফল ডালিম। একদিকে এর আকর্ষণীয় রং ও স্বাদসহ অবর্ণনীয় পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ডালিম ক্ষিদে বাড়নো, শরীর স্নিগ্ধ করা, মেদ ও বল বৃদ্ধি করা সহ রুচি বৃদ্ধি, অরুচি দূর, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাত ব্যধি দূরসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুনাগুণ। ডালিমের বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। ১.রক্তশূন্যতা দূর করতে: বেদানাতে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী। রুচি বৃদ্ধি, কোষ্ট কাঠিন্য রোধ ইত্যাদিতেও এর ভুমিকা রয়েছে। ২.সর্দি-কাশি দূর করতে: ডালিমে রয়েছে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত রাখতে সাহায্য করে। তাই সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে ডালিমের রস ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ৩. দেহের ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে: ত্বক সুস্থ রাখতে ডালিম অনেক উপকার করে। বেদানা বা ডালিম পোমেগ্র্যানেট অয়েল ময়শ্চারাইজার হিসেবে ভালো কাজ করে ও ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক আসিড, ট্যানিন ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ উপকারী। ৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: বেদানার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। প্রতিদিন বেদানার রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণও গ্রিন টির থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে থাকা উপাদান অ্যান্থোসিয়ানিন যা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেহ কোষ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা, কাশি, কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতেও এর ভুমিকা রয়েছে। পুরনো পেটের অসুখ ও জ্বর সারাতেও এর জুড়ি নেই। ৫. হাড় ভালো রাখতে: হাড়ের সংযোগস্থলে কার্টিলেজ নামে অস্থি রস থাকে যা হাড়ের ক্ষতি করে। ডালিমে রয়েছে পটাশিয়াম ও পলিফেনল যা কার্টিলেজ নামক রোগ রোধ করার জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া হাড়ের নানাবিধ রোগ যেমন হাড়ের রোগ অস্টিওপোরেসিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই ফলটি থেকে। ৬. হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে: আমাদের জীবনযাত্রায় অন্যতম আতঙ্ক রোগ হল হৃদরোগ। প্রতিদিন বিভিন্ন তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে আমাদের ধমনীর আবরণে ধীরে ধীরে চর্বি জাতীয় পদার্থ জমে আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে সংকুচিত হতে থাকে। মাংস পেশিতে দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে এই ডালিমের রস। নিয়মিত বেদানার রস খেলে তা ধমনীর আবরণে জমে থাকা চর্বির স্তরকে গলিয়ে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। বেদানায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটা করে ডালিম খেতে পারলে হৃদরোগের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ৭.দাঁতের যত্নে: ডালিমে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়। এছাড়া মাড়ির রোগ যা জিনজিভাইটিস নামে পরিচিত তা প্রতিরোধ করতে ডালিমের ভূমিকা অপরিসীম। তাই দাঁত ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন অল্প হলেও ডালিম খাওয়া উচিত। ৮. রক্তে শর্করার পরিমানের ভারসাম্য বজায় রাখে ডায়াবেটিসের জন্য অধিক পটাশিয়াম যুক্ত খাবার ভালো। ডালিমের মধ্যের পটাশিয়াম রয়েছে যা শরীরের রক্তের মধ্যের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, যে ডালিমের ভেতরের ফ্লোরোজেনিক অ্যাসিড যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ৯. স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে: ডালিম বা বেদানার রস ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক উপকারি খাদ্য। গবেষণায় দেখা গেছে স্কিন ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ করতে বেদানার রস সাহায্য করে। একুশে সংবাদ//ড.ভ.ন//১৬.১০.২০১৯