ডাবের পানির অজানা পুষ্টিগুণ
একুশে সংবাদ: সর্বকালের সবচেয়ে কার্যকর পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডাবের পানি। ডাবের পানি যেমন সুস্বাদু, শরীরও সতেজ রাখতে কার্যকরী।পুষ্টিবিদরা বরাবরই বলে আসছেন, ডাবের পানিতে ভিটামিন, খনিজসহ অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাবের পানি নিয়মিত পান করার ফলে অনেক রকমের উপকার পাওয়া যায়।
গরমকালে আমরা সাধারণত তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানি পান করে থাকি। কিন্তু ডাবের পানির গুনাগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এটি অত্যন্ত উপকারী কৃত্রিমতাহীন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন একটি প্রাকৃতিক পানীয়। একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২০০ থেকে ১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে।
ডাবের পানিতে রয়েছে মানব শরীরের জন্য উপকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাংগানিজ, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়ামে পূর্ণ ডাবের পানি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ সহ অনেক পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারতা।প্রচুর খনিজ উপাদান থাকায় বাড়ন্ত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য ডাবের পানি যথেষ্ট উপকারী।
নিম্নে ডাবের পানির বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়:
গর্ভবতী ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও প্রকৃতির এক অতুলনীয় দান এই ডাবের পানি। গর্ভকালীন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা কাটাতে যেমন সকালের অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, মাংসপেশিতে টান ইত্যাদি দূর করতে ডাবের পানির তুলনা নেই। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদেরও নিয়মিত ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি তাদের বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
২. হাড় ও পেশীর গঠনে:
হাড় ও পেশীর সুরক্ষায় ডাবের পানির কোনো বিকল্প নেই। হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখতে ক্যালসিয়াম অতি দরকারি উপাদান। এই প্রয়োজনীয় উপাদানের দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে ডাবের পানি। এছাড়া এতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করে। পেশী গঠন ও সচল রাখতেও কাজে দেয় ডাবের পানি সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
ডাবের পানির মধ্যে কিছু এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ভাইরাল উপাদান থাকায় এই পানি ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাস মারতে অনেক কার্যকরী ভুমিকা রাখে। তাই প্রত্যেক দিন খাবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে আমাদের শরীরে যেসব ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রবেশ করে সেগুলো মারার জন্য এক গ্লাস ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।
৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি ও বদহজম দূর:
হজম সমস্যা সমাধানে ডাবের পানি কাজ করে।ডাবের পানি পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ বদহজম দূর হয় । ডাবের পানি গ্যাসট্রিক , আলসার , কোলাইটিস , ডিসেন্ট্রি এবং পাইলসের সমস্যা দূরীকরণেও সাহায্য করে।
৫. কিডনির সুরক্ষায় :
ডাবের পানির অসাধারণ স্বাস্থ্যোপকারিতাগুলোর একটা হলো কিডনিতে পাথর জমতে বাঁধা দেওয়া। স্ফটিকজাতীয় পদার্থের উপস্থিতির ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এই যাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডাবের পানি কিডনি থেকে এই স্ফটিকজাতীয় পদার্থ মূত্রত্যাগের মাধ্যমে দেহের বাইরে বের করে দিতে যথেষ্ট কার্যকর ভুমিকা রাখে।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
ডাবের পানির প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ডাবের পানি শরীরের ভেতরে অতিরিক্ত সুগার লেভেলকেও নিয়ন্ত্রয়ে আনতে ভুমিকা রাখে।
৭. ত্বক সুন্দর রাখতে:
ডাবের পানি ত্বকের জন্যও খুবই উপকারী । একটি ডাবের প্রায় ৯৪ শতাংশই পানি থাকে। ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা সহ পুরো দেহের শিরা-উপশিরায় সঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে এই পানি সাহায্য করে। ডাবের পানি বেশি পান করলে কিডনির কাজ করতে সুবিধা হয়, দেহে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়ে। ফলে ত্বকসহ প্রতিটি অঙ্গে পৌঁছায় বিশুদ্ধ রক্ত এবং পুরো দেহ সতেজ ও শক্তিশালীহয়ে ওঠে।
৮. ওজন কমাতে:
ওজন কমাতে ডাবের পানির চমৎকার ভুমিকা রয়েছে। এতে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল থাকে না ও এতে চিনির পরিমাণও অল্প থাকায় নিশ্চিন্তে পান করা যায় যতটুকু ইচ্ছা। এছাড়াও ডাবের পানির চর্বি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকায় বাড়ন্ত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই উপকারী এই ডাবের পানি পান করতে পারেন । এছাড়া তারুণ্য ধরে রাখতেও ডাবের পানি যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।
একুশে সংবাদ//ট.ব.ন//১৬.০৯.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :