ভেলাখুম জলপ্রপাত
একুশে সংবাদ:প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত আমিয়াখুম ঝর্না থেকে সামান্য উপরে উঠলেই শুরু হয় ছোট-বড় অনেক পাথর দিয়ে সাজানো পাথরের রাস্তা।খুব সাবধানতার সাথে এই রাস্তাটুকু পার করার পর সামনে পরবে বিশাল আকৃতির পাথরের পাহাড় আর তার মাঝে সবুজ শান্ত ও স্বচ্ছ জলধারা।আর এখান থেকেই শুরু হয় ভেলাখুম জলপ্রপাত।যাকে অনেকে সাতভাইখুম জলপ্রপাত ও বলে থাকে।ভেলাখুম জলপ্রপাত এর রুপ-সৌন্দর্যের বিবরন দিতে সকল উপমা ব্যবহার করলেও হয়তো এর সৌন্দর্য বর্ণনায় কম হবে।
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি স্থানটি সাঙ্গু নদীর উজানে একটি মারমা বসতী। মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। পাহাড়ী নদী সাঙ্গু তার বয়ে চলার পথে অজস্রে স্থানে ছোট ছোট জলপ্রাপাতের সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রেমাক্রিখুম, নাফাখুম, আমিয়াখুম, সাতভাইখুম, মাথাভারাখুম।
দুই পাশে পাথরের সুউচ্চ দেয়াল আর মাঝখান দিয়ে শান্ত - স্বচ্ছ সবুজ পানির ধারা নেমে এসেছে আমিয়াখুম থেকে । আমিয়াখুমের এই পানি - জিরি পথ পাড়ি দেবার সময় যে দু ' পাশের আকাশছােয়া পাথরের পাহাড় দেখতে অসাধারণ লাগে । পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য এক করলেও এই পানি -এই সৌন্দর্যের কাছে কিছুই মনে হবে না । আমিয়াখুম ট্রেকিং এর অন্যতম আকর্ষন এটি । শুধু মাত্র ভেলা দিয়েই এই জায়গাটি ঘুরে দেখা সম্ভব । আমিয়াখুম থেকে হেটে ৫ মিনিট । এখানে আপনাকে বাঁশের ভেলায় উঠতে হবে । তবে সাতভাইখুম আর ভেলাখুমের পার্থক্য হল ভেলাখুমে ভেলায় কিছুদূর যেয়েই আমাদেরকে নেমে পাথরের ফাক ফোকর দিয়ে নতুন আর একটা ঝর্ণায় যেতে হবে যা ন্যাইক্ষারমুখ নামে পরিচিত ।
রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর নাফাখুম জলপ্রপাতে। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহই এই নাফাখুম।
নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে নেমে গেছে প্রায় ২৫-৩০ ফুট, প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু! ভরা বর্ষায় রেমাক্রি খালের জলপ্রবাহ নিতান্ত কম নয়। প্রায় যেন উজানের সাঙ্গু নদীর মতই। পানি প্রবাহের ভলিউমের দিক থেকে নাফাখুম-ই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত।
যাওয়ার উপায় :
ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায় বান্দরবনের উদ্যেশ্যে।যেমন: দেশ ট্রাভেলস,শ্যামলী, সেইন্টমার্টিন পরিবহন ইত্যাদি।ঢাকা থেকে বান্দরবন পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ৬২০-৭০০ টাকা।
এই সব বাসে করে বান্দরবান গিয়ে নামতে হবে।এরপর লােকাল বাসে করে ২০০ টাকা ভাড়ায় কিংবা রিজার্ভ জীপ এ ৫০০০-৬০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থানচি পৌছাতে হবে । থানচি থেকে গাইড এর সাহায্য নিয়ে ইঞ্জিন চালিত বােটে করে পদ্মমুখ। তারপর ৬ - ৭ঘণ্টা ট্রেকিং করে থুইসা পাড়া যেতে হবে । পরদিন থুইসা পাড়া থেকে ২ - ৩ ঘন্টায় বিপজ্জনক ট্রেইল ৭০ - ৮০ ডিগ্রী খাড়া “ দেবতার পাহাড় ” নেমে এই ভয়ংকর সৌন্দর্যের মুখােমুখি হবেন । সেখান থেকে বাস অথবা চাদের গাড়ী করে থানচি ।সেখান থেকে ট্রলারে রেমাক্রি, তারপর সেখান থেকে হেটে ভেলাখুম যাওয়া যায় । ভেলাখুম ট্রেইল বান্দরবানের কষ্টকর ও বিপদজনক ট্রেইল গুলাের অন্যতম । এখানে যাওয়ার অনুমতি বিজিবি দেয় না ।
একুশে সংবাদ//আ.ব.ন // ১৮.০৬.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :