সুস্থ দাত সুন্দর হাসি
একুশে সংবাদ : দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লসিং এগুলো দাঁতের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য জরুরি। তবে আপনি কি জানেন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো দাঁতের স্বাস্থ্যকে আরো ভালো রাখতে সাহায্য করে?
দাঁতের ক্ষয় হওয়ার পেছনে মূলত আমাদের খাদ্যাভ্যাস অনেকাংশে দায়ী থাকে। যে যে খাবারগুলি বিশেষ করে দাঁতের ক্ষয় করে থাকে, মিষ্টিজাতীয় খাবার তার মধ্যে অন্যতম। শুধু খাবার নয়, সেই সঙ্গে খাবার খেয়ে ঠিক মতো মুখ না ধোওয়া, দাঁতের যত্ন না করার মতো বিষয়ও দাঁতের ক্ষয়ের পিছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিশুদের আমরা প্রায়ই বলি, ‘বেশি চকলেট খাবে না। এতে দাঁত ক্ষয় হয়’। দাঁত ভালো রাখতে কিছু খাবার যেমন এড়িয়ে যাওয়া ভালো, তেমনি কিছু খাবার কিন্তু খাওয়াও প্রয়োজন। এমন কয়েকটি খাবারের নাম আজকে আলোচনা করবো।
১. তেল মালিশ
আসলে দাঁতের তেল মালিশ বলতে সহজ কথায় বিশেষ কিছু তেল দিয়ে কুলকুচি করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যদি প্রতিদিন ১ চামচ নারকেল তেল নিয়ে কুলকুচি করার পর যদি গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা যায়, তাহলে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার ভয় অনেকটাই কমে আসে।
২. হলুদ
এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ দাঁতে পোকা লাগতে দেয় না। সেই সঙ্গে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এক্ষেত্রে প্রথমে হাফ চামচ হলুদ গুঁড়োতে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটা ব্রাশে লাগিয়ে দিনে কম করে দুবার দাঁত মাজতে হবে। এমনটা যদি কয়েকমাস করা যায়, তাহলে দাঁত নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
৩. দুধ
দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদানগুলো দাঁত ও হাড়ের জন্য ভালো। প্রতিদিন দুধ খাওয়া দাঁতের এনামেলকে ভালো রাখে। তবে আপনার যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে অথবা ল্যাকটোস ইনটলারেন্স থাকে, তবে এর বদলে সয়া দুধও খেতে পারেন।
৪. পনির
দাঁতের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে পনির খুব ভালো খাবার। পনির স্যালিভা বা লালা তৈরিতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এটি মুখের এসিডকে নিউট্রালাইজ করে। এতে দাঁত ভালো থাকে।
৫. আপেল
আপেল মুখের স্যালিভা বা লালা উৎপন্ন করে। এটি দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল। এগুলো কেবল দাঁত নয়, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো। এ ছাড়া খাবারের পর আপেল খেলে তা দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
৬. পেয়ারা পাতা
দাঁতের সুরক্ষায় এই প্রাকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দাঁতের স্বাস্থ্যকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন এক্ষেত্রে ১-২টা পেয়ারা পাতা নিয়ে কিছুক্ষণ চিবিয়ে ফেলে দিতে হবে।
৭. গ্রিন টি
গ্রিন টি শরীরকে যেমন সুস্থ রাখে, তেমনি দাঁতের সুরক্ষাতেও এই পানীয়টি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজে লেগে থাকে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে দিনে ৩-৪ কাপ গ্রিন টি খেলে দাঁতের বেশ উপকার হয়, সেই সঙ্গে শরীররে প্রতিটি অঙ্গ এতটাই কর্মক্ষম হয়ে ওঠে যে সার্বিকভাবে শরীরের উন্নতি ঘটে।
৮. তুলসি পাতা
মুখের ভেতরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলার মধ্যে দিয়ে তুলসি পাতা একদিকে যেমন মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, তেমনি ক্যাভিটি এবং প্লাকের মতো সমস্যাকেও ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা নিয়ে রোদে শুকিয়ে একটা পাউডার বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পাউডার দিয়ে প্রতিদিন দাঁত মাজলেই দেখবেন উপকার পেতে শুরু করেছেন।
৯. পিপারমেন্ট পাতা
এই পাতাটি নিয়মিত খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে রোগের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। কারণ পিপারমেন্টের পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো পিপারমেন্ট পাতা ফেলে পানিটা ফুটিয়ে নিন। যখন দেখবেন পানিটা ভাল রকম ফুটতে শুরু করেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে, পানিটা ছেঁকে নিয়ে ভাল করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন।
১০. আমলকি
এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে প্রবেশ করার পর শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় না, সেই সঙ্গে দাঁতের বাইরের স্তরকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে ক্যাভিটি হোক কী ব্যাকটেরিয়া, কোনও কিছুই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। তাই তো দাঁতের পাশাপাশি শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে প্রতিদিন ১-২টা আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
একুশে সংবাদ //ই.ক.ন // ১৬.০৬.২০১৯
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :